shono
Advertisement

মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহাবাড়িতে জগজ্জননী হিসাবেই পূজিত হন মা দুর্গা

বড় গণেশের পেটের ভিতর 'ছোট গণেশ'। The post মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহাবাড়িতে জগজ্জননী হিসাবেই পূজিত হন মা দুর্গা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:05 PM Sep 01, 2017Updated: 02:37 PM Oct 02, 2019

সেই কবেকার কথা। আজও একইরকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বনেদি বাড়ির পুজো। কত না-জানা ইতিহাস কথা বলে পুজোর দালানে। কলকাতা ও শহরতলিতে ছড়িয়ে রয়েছে এমনই বহু পুজো। শিবের বাহুবেষ্টনীর মধ্যে চোখ নিমীলিত করে বসে থাকা এক দুর্গার কাহিনি।

Advertisement

রিংকি দাস ভট্টাচার্য: ঠাকুর এখন একমেটে। আর একস্তর মাটি পড়বে। ঠাকুর দালানে বসে কুমোর এঁটেল মাটি ঠেসে ঠেসে দুগ্গাকে গড়ছেন। দোমেটে না হলে আদল খোলে না। ক্রমে মৃন্ময়ীর গলা-চিবুক-ঠোঁট-আঙুল স্পষ্ট হবে। মাটিতে রং লাগলে লাবণ্যময়ী রূপে ধরা দেবেন মা। প্রতিবছর এভাবেই উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়ায় লাহা পরিবারের ঠাকুরদালানে মৃন্ময়ীর জন্ম হয়। তবে মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহা পরিবারে দেবী দুর্গা পূজিত হন জগজ্জননী হিসাবে। সোজা কিংবা উল্টোরথে নয়, লাহাবাড়ির দুর্গাপুজোর কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর ২-৩ দিন পর। কাঠামোর মধ্যে একটি ছোট্ট মাটির গণেশকে পুজো করা হয়। পরে যখন বড় গণেশ তৈরি হয়, তখন সেই ছোট্ট গণেশটা বড় গণেশের পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম থেকে একচালার প্রতিমাই পুজো হয় এই পরিবারে।

[পুজোয় স্বপ্নালোকে বিচরণ করতে চান? সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্কে মিলবে হদিশ]

এই বাড়িতে দুর্গাপ্রতিমাকে প্রতীকী হিসেবে পুজো করা হয়। যেহেতু এই পরিবারে দুর্গাপুজো হয় তাই এই বাড়িতে আর কোনও মূর্তি পুজো হয় না। বাড়ির কুলদেবী অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীর পুজো হয় ওই চারদিন। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এই পরিবার মহিষাসুর বধকে হিংস্র মনে করেন। তাই পরিবারে মা দুর্গা দশভুজা হয়ে আসেন না। তিনি আসেন হরগৌরী রূপে। দুর্গা বসেন স্বামী শিবের কোল। শিবের বাহু বেষ্টন করে থাকে তাঁকে। দুর্গার দু চোখ বন্ধ। পরিবারের গৃহদেবীও তিনি। অষ্টধাতুর সেই মূর্তির নাম জয় জয় মা। পুজোর কয়েকদিন তিনিও পূজিত হন ঠাকুর দালানে। পুজোর পরে তাঁকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ঠাকুরঘরে। কথিত আছে, অষ্টধাতুর সেই মূর্তিকে জঙ্গলে ফেলে রেখে গিয়েছিল ডাকাতদল। দীর্ঘদিন জঙ্গলেই পড়ে ছিল সেটি। এরপর ওই পরিবারের এক কর্ত্রী স্বপ্নাদেশ পান মায়ের। দেবীর নির্দেশমতো তাঁকে জঙ্গল থেকে এনে লাহা বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে শ্রীবৃদ্ধি হতে থাকে ওই পরিবারের।

পরিবারের ইতিহাস বলছে, ২২৬ বছরের পুরনো এই পুজো। নবকৃষ্ণ লাহা নাকি দুর্গাচরণ লাহা, কে এই পুজোর প্রবর্তক তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেক বলেন, দুর্গাচরণের অন্তত তিন পুরুষ আগে লাহাবাড়িতে শুরু হয় দুর্গোৎসব। কেউ বলেন রাজীবলোচন লাহা‚ আবার কারও মতে তস্য পুত্র প্রাণকৃষ্ণ লাহা পত্তন করেছিলেন দুর্গাপুজোর। আজও উত্তর কলকাতার দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এই পরিবার। একাধিক শরিকে বিভক্ত এখন লাহা পরিবার। বড়, মেজ, ছোট। পালা করে সব শরিকের পুজোর দায়িত্ব পরে।

[ছুটিতে আর নয় ভিন রাজ্যে, পুজোর শহরে একটুকরো ভারত এবার আলিপুরে]

পুজোর রীতি বৈচিত্রে ভরা। ষষ্ঠীতে বোধনের সময় পরিবারের কুলদেবী সিংহবাহিনীকে রুপোর সিংহাসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। এদের পুজোতে কোনও পশুবলি দেওয়া হয় না। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এই পরিবারে ছাঁচিকুমড়ো ও শশা বলি দেওয়া হয়। এই পরিবারে দুর্গাপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল অষ্টমীর সন্ধিপুজো। সন্ধিপুজো যতক্ষণ চলে ততক্ষণ বাড়ির মহিলারা দু-হাতে ও মাথায় মাটির সরার মধ্যে ধুনো জ্বালিয়ে বসে থাকেন। বৈচিত্র ভোগ নিবেদনেও। এই পরিবারে পুজোর ভোগ শুধু মিষ্টি। নানা রকমের নাড়ু-সহ ২১ রকমের মিষ্টি পরিবেশিত হয়।

এখানেই শেষ নয়, প্রতিমা বিসর্জনের রীতিও অভিনব। বাড়ি থেকে দুর্গা প্রতিমা বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিসর্জন দিয়ে কাঠামো না ফেরা পর্যন্ত বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে৷ পরিবারে কথিত আছে, বিসর্জন শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করছিলেন বাড়ির কর্তা দুর্গাচরণ লাহা। সেই সময় দেখেন, এক বালিকা এসে ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দুর্গাচরণ উপলব্ধি করলেন‚ ওই বালিকা আর কেউ নয়‚ স্বয়ং মা দুর্গা। এরপর তাঁর সময় থেকে শুরু হয় এই পরিবারের দুর্গাপুজোর এক নতুন নিয়ম। বিসর্জনের সময় বন্ধ থাকে বাড়ির সব দরজা এবং জানালা। প্রধান দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় দুর্গা প্রতিমা। তারপর বন্ধ হয়ে যায় সেই দরজা। বাড়ি ফিরে কর্তা সদর দরজার বাইরে থেকে তিনবার চেঁচিয়ে প্রশ্ন করেন, “মা কি আছেন বাড়ির ভিতরে?” গৃহকর্ত্রী আড়াল থেকে উত্তর দেন‚ পারিবারিক দেবী জয় জয় মা ফিরে গেছেন ঠাকুরঘরে। আর মা দুর্গা রওনা হয়েছেন কৈলাসের পথে। এই উত্তর পেয়ে গৃহকর্তা প্রবেশ করেন বাড়িতে।

[আমার দুগ্গা: মায়ের দেওয়া ববি প্রিন্টের জামাই ছিল বিরাট সম্পদ]

The post মহিষাসুরমর্দিনী নন, লাহাবাড়িতে জগজ্জননী হিসাবেই পূজিত হন মা দুর্গা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup #IPL18 toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার