সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরাখণ্ডে শিবের এমন একটি মন্দির রয়েছে, যেখানে শিবলিঙ্গের কেউ পুজো করে না। মানুষ এই মন্দিরে পুজো করতে ভয় পায়। সকলেই 'অভিশপ্ত দেবালয়' আখ্যা দিয়ে দেবতাকে পর করে রেখেছেন।

পিথোরাগড় থেকে ধারাচুলা যাওয়ার পথে প্রায় সত্তর কিমি দূরে জনবসতি এলাকা করবা। সেখান থেকে ছয় কিমি দূরে বালতির নামে এক বসতি রয়েছে। এখানেই 'এক হাতিয়া দেবাল' নামে এই অভিশপ্ত শিবের অবস্থান। এখানে দূর দূর থেকে ভক্তরা আসেন ভগবান ভোলেনাথের দর্শনে। মন্দিরের আশ্চর্য নির্মাণ দেখে সকলেই ফিরে যান। কিন্তু এখানে কেউই শিবের পুজো করেন না। কেন এই মন্দিরের শিবলিঙ্গের পুজো হয় না? এব্যাপারে দুটি কাহিনি আছে। তবে অসুবিধা হল- কাহিনি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় এ ব্যাপারে সঠিক উত্তর কেউই দিতে পারে না।
দুটি কাহিনিই এইরকম- এই গ্রামে এক দক্ষ শিল্পী বাস করতেন। স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের নিপুণ কারিগর হিসেবে তাঁর নাম দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি পাহাড় থেকে পাথর কেটে এনে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে তা থেকে প্রাসাদ, দেবালয় ও মূর্তি বানাতেন। হাত দুটো তাঁর প্রাণ ছিল। একবার এক দুর্ঘটনায় শিল্পীর প্রিয় দুটো হাতের একটা নষ্ট হয়ে গেলে সেই হাত কেটে ফেলে দিতে হয়। শিল্পী খুবই মুষড়ে পড়েন। একসময় তিনি ভাবলেন এখনও তো একটা হাত আছে। শিল্পীর পায়ের দিকে খেয়াল পড়ল। পা দুটোকি শুধু হাঁটার জন্য থাকবে? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার থেকে এক হাতেই তিনি ছেনি-হাতুড়ি ধরবেন। প্রয়োজনে পা দুটো তাঁর ওই হাতের হেল্পার হবে।
নতুন ভাবে কাজ করতে গিয়ে কত বাধা, কত কষ্ট! কিন্তু শিল্পীর জেদের কাছে সব বাধা, প্রতিকূলতা, কষ্ট পরাস্ত হতে লাগল। শিল্পীর সবচেয়ে বড় বাধ সাধল তাঁর প্রতিবেশীরা। তারা কিছুতেই শিল্পীকে একাজ করতে দেবে না। একদিন শিল্পীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। তিনি গ্রামের দক্ষিণ দিকে দিয়ে অন্যত্র চলে গেলেন।
যেদিক দিয়ে শিল্পী শেষবারের মতো গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেখানে পাথরের একটা ছোট্ট খাদান ছিল। পরের দিন সকালে সেই খাদানের চিহ্ন পেল না গ্রামবাসীরা। তার জায়গায় একটা দেবালয় দেখতে পেল। দেখে বিস্ময়ে সকলেই হতবাক। কিন্তু সেই শিল্পীকে দেখা গেল না। সবাই বুঝল তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মানুষ তাঁর দুঃখ বোজেনি। বুঝেছেন দেবতা। তাঁর দুঃখের অংশীদার হয়ে দেবতা নিজেই দেবালয় বানিয়েছেন।
স্থানীয় পণ্ডিতরা দেবালয়ে প্রবেশ করে ভগবান শংকরের লিঙ্গমূর্তি দেখলেন। লিঙ্গমূর্তিটি বিপরীত দশায় রয়েছে। শাস্ত্রে বলা আছে, বিপরীত দিশার শিবলিঙ্গ খুঁত প্রকারের। এই শিবলিঙ্গের পুজোয় মহা অনিষ্ট হয়। সেই কারণে এবং পণ্ডিতদের বিধানে এই দেবালয়ের শিবলিঙ্গের পুজো হয় না।
এবিষয়ে অন্য একটি কাহিনি হল- কোনও একসময় এখানে শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক এক রাজা রাজত্ব করতেন। বলা হয়, একবার সেই রাজা এক কারিগরকে দিয়ে সুন্দর এক স্থাপত্য করিয়ে, সেই কারিগরের একটি হাত কেটে নিয়েছিলেন। যাতে সেই কারিগর অন্যত্র আর কোনও স্থাপত্য না করতে পারে। রাজা সেই কারিগরের মনের অদম্য জেদ ও ইচ্ছাশক্তির ওপর এতটুকু আঁচড় বসাতে পারেননি। আর কারিগর প্রতিবাদ হিসাবেব এটাকেই ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে বেছে নিলেন। সেই দক্ষ কারিগর সেই রাতেই এক হাতে ছেনি-হাতুড়ি ধরে একরাতের মধ্যেই এই দেবালয় নির্মাণ করেছিলেন। তারপর তাঁকে আর দেখা যায়নি। যখন জনতা জানতে পারে তখন তাদের খুব দুঃখ হয়। তারা স্থির করে রাজাকে উচিত শিক্ষা দেবে। তাই তারা সেই দেবালয়ে কখনও পুজো দিতে আসে না। আজও সেই রীতি চলে আসছে। সেই কারণেই এই মন্দিরের নাম 'এক হাতিয়া দেবাল'। বাংলায় অর্থ এক হাত দিয়ে বানানো দেবালয়।
(ঋণ: ভারতের আশ্চর্য শিবলিঙ্গ। শ্রীবশিষ্ঠ। সাধনা)