গৌতম ভট্টাচার্য, ম্যাঞ্চেস্টার: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানে তো শুধুই মাঠের গণ্ডির ভিতরে দুই দলের লড়াই নয়। এ লড়াই দুই দেশের সম্মানের, দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগের। রাত পোহালে রবিবারই আরও একবার সেই লড়াইয়ের সাক্ষী থাকবে গোটা বিশ্ব। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তেজনার পারদ চড়েছে। ম্যাঞ্চেস্টারে বৃষ্টির ভ্রুকুটি থাকলেও এই ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনার শেষ নেই। আর এই শহরের ঐতিহ্যবাহী ওল্ড ট্র্যাফোর্ড স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে মনের কোণে জড়ো হয়েছে বহু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের স্মৃতি। তবে আমার একার নয়, আমার মতোই নস্ট্যালজিক পাকিস্তানের বিখ্যাত সাংবাদিক মজিদ ভাট্টিও। সাত-সাতটি বিশ্বকাপ কভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তাই চলতি বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে তাঁর সঙ্গে ফিরে গেলাম সেই পুরনো দিনগুলোয়।
[আরও পড়ুন: কুটিনহোর জোড়া গোলে দুর্দান্ত জয় দিয়ে কোপা অভিযান শুরু ব্রাজিলের]
দুই দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে যখনই সাক্ষাৎ হয়, তখন মনেই হয় না, আমাদেরই সীমান্তের দুই প্রান্ত এতটা উত্তপ্ত। মনেই হয় না, ভিনদেশের অচেনা কারও সঙ্গে কথা হচ্ছে। অথচ বর্তমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিবেশ একেবারে অন্য ছবি তুলে ধরে। যে ছবির দিকে তাকালে প্রশ্ন জাগে সন্ত্রাসের মধ্যে কীভাবে ক্রিকেট সম্ভব? কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে, আজ থেকে বছর পনেরো আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। মজিদ ভাট্টি নিজের ভারত সফরের অভিজ্ঞতা অন্তত সেটাই প্রমাণ করে। তিনি বলছিলেন ২০০৫-এর কথা। আমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কভার করতে এসেছিলেন। সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমেদাবাদের হোটেল থেকে চেক আউট করার সময় বিল মেটাতে গিয়ে অদ্ভুত- অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। মজিদের কথায়, “মনে আছে এক লক্ষ টাকারও বেশি বিল হয়েছিল। কিন্তু হোটেল কর্মীরা বললেন, আমাকে কোনও টাকা দিতে হবে না। আমি গুজরাট ক্রিকেট সংস্থার অতিথি। নরেন্দ্র মোদি বলে দিয়েছেন, কোনও পাক সাংবাদিকদের থেকে যেন অর্থ না নেওয়া হয়।”
এই প্রসঙ্গেই আমার মনে পড়ে গেল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লাহোর সফরের কথা। ২০০৪-এর কথা বলছি। তখন ভারতীয় দলের অধিনায়ক দাদা। এক রাতে আমাদের সঙ্গেই লাহোরের বিখ্যাত ফুড স্ট্রিটে খেতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ব্যস, সকলেই চিনে ফেলেন তাঁকে। আর তখনই দাদার অটোগ্রাফ নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। বুঝেছিলাম, পাকিস্তানেও ভারত অধিনায়কের ভক্ত সংখ্যা কম নয়। এখনও বদলায়নি সেই ছবিটা। সৌরভের জায়গায় মুখ বদলে হয়ে গিয়েছে বিরাট কোহলির। কিন্তু ভালবাসা একইরকম রয়ে গিয়েছে। তাই তো আজও সেদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা চান, সব শত্রুতা সরিয়ে রেখে ক্রিকেটের বাইশ গজে লড়ুক ভারত-পাকিস্তান। অটুট থাক স্পোর্টসম্যান স্পিরিট। তবে আপাতত ক্রিকেট জ্বরে উত্তপ্ত ম্যাঞ্চেস্টারে বরুণ দেব জল যেন না ঢেলে দেন, সেই কামনাই করছেন দুই মুলুকের বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: বৃষ্টি হলেও ম্যাচ আয়োজন সম্ভব, উপায় বাতলালেন সৌরভ]
The post ভারত-পাক ম্যাচের নস্ট্যালজিয়া, মোদির আতিথেয়তায় মুগ্ধ পাক সাংবাদিক appeared first on Sangbad Pratidin.