নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ভক্তের সঙ্গে পিকনিকে ‘মাতলেন’ ভগবান! এমনকী ভক্তের কোলে চেপেই সবুজ অরণ্যে গেলেন! বছরের প্রথম দিনে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা গেলেন বনভোজনে। মন্দিরের গর্ভগৃহের সঙ্গী শ্রীকৃষ্ণ, গোপালজি ও বনমালী মন্দিরেই থাকলেন। বনভোজনে যাওয়া ভক্তরা জানালেন, আমাদের সঙ্গে ঠাকুরের বনভোজনে যাওয়ার প্রথা পুরনো। বীরভূমের হেতমপুরের রাজার তৈরি এই প্রথায় সোমবার আনন্দে মাতলেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
একাকালে হেতমপুরের রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্ত্তী ভক্তের সঙ্গে আরাধ্য দেবতার বনভোজনের এই রীতি প্রচলন করেন। রাজবাড়ির ইতিহাস বলছে, দেড়শো বছর আগে দুবরাজপুর ব্লকের এই হেতমপুরে গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামরঞ্জন। লোকলস্কর-সহ ওই মন্দিরের দেবতাদের নিয়ে বনভোজনে যেতেন তিনি। আজ সেই রাজা নেই, রাজত্বও গিয়েছে। কিন্তু মন্দির রয়েছে। রাজা না থাকায় কালের নিয়মে বনভোজন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মাঝে সেবকরা গৌরাঙ্গ মন্দিরের সেবাকাজের দায়িত্ব পান। এর পরেই হৃতগৌরব ফেরানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।
[আরও পড়ুন: নিহত পুলওয়ামা হামলার চক্রী মাসুদ আজহার! ভাইরাল গাড়িতে বিস্ফোরণের ভিডিও]
রাজবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী ইংরাজি নববর্ষের প্রথম দিন মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে ভক্তদের সঙ্গে ভগবানও বনভোজনে যান। গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ ভক্তি বারিধী ত্রিদণ্ডী মহারাজ বলেন, ২০০৭ সালে হেতমপুরের রাজা মাধবীরঞ্জন চক্রবর্ত্তী আমাদের হাতে বিগ্রহ সেবার দায়িত্ব দেন। আমরা ধীরে ধীরে রাজার আইনকানুন, তাঁর প্রচলিত অনুষ্ঠান ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। তাই সোমবার সকালেই মন্দিরে স্নান সেরে ভক্তের কোলে চেপে জঙ্গলে এলেন ভগবান।
[আরও পড়ুন: বছরের প্রথম দিনেই ৭.৫ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প জাপানে, আছড়ে পড়ল সুনামি]
প্রভু সেবায় বাড়ি থেকে শুদ্ধবস্ত্রে রান্না করে ভক্তরা খাবার এনেছিলেন জঙ্গলে। এলাহি পবিত্র মেনুতে ছিল পুষ্পান্ন, সাদা অন্ন, খিঁচুড়ি, পরামান্ন, অম্বল, সুক্ত। সঙ্গে ছিল নানাবিধ দুধের মিষ্টি। সব মিলিয়ে পদের সংখ্যা পৌঁছায় ৬০-এ। এভাবেই ভক্তদের সঙ্গে বনভোজন করলেন ভগবান। বনভোজনে প্রভুকে শোনান হল হরিনাম সহ নানা কীর্ত্তন। খোল-ঢোলে বাদ্যে কীর্ত্তনে উদ্বেল হলেন গ্রামবাসীরাও। দিনের শেষে নিজের আলয়ে ভগবান ফেরার পরেই বাড়ি ফিরলেন ভক্তরা। বছরের শুরুতে এক অন্য বনভোজন সাক্ষী হল হেতমপুর ।