সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: "১৯৮২ সালে গান্ধীর জীবনী নিয়ে ছবি তৈরি না হলে মহাত্মা গান্ধীকে কেউ চিনতই না!", সম্প্রতি বিস্ফোরক দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, দেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম হলেও আন্তর্জাতিক মহলে গান্ধী পরিচিত ছিলেন না ওই সিনেমা তৈরি হওয়ার আগে। যে মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো শোরগোল। সেই প্রেক্ষিতেই ঋত্বিক চক্রবর্তীর (Ritwick Chakraborty) 'রসিক' পালটা, "প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করায় বিবেক ওবেরয়কে কেউ চিনতে পারে না।"
সম্প্রতি টলিউড অভিনেতা তাঁর সোশাল ওয়ালে এক পোস্ট করেন। সেখানে মোদির (PM Narendra Modi) সাম্প্রতিক গান্ধী উবাচের উল্লেখ না থাকলেও কারও বুঝতে বাকি থাকেনি যে ওই পোস্ট কোন বিষয়ে! ঠিক কী লিখেছেন ওই পোস্টে ঋত্বিক? অভিনেতা লেখেন, "প্রলাপ এক দুই ও তিন- প্রথমত, 'মাছের ঝোল' বলে একটা সিনেমা হয়েছিল, তার আগে অ্যাটেনবরো কিন্তু মাছের ঝোল নিয়ে কিছুই জানতেন না। দ্বিতীয়ত, বিবেক ওবেরয় বলে এক অভিনেতাকে চিনতাম। তারপর প্রধানমন্ত্রীর নাম ভূমিকায় অভিনয় করাতে ওকে আর আজকাল কেউ বিশেষ চেনে না। তৃতীয়ত, ২০০২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারীর পর উনি সারা পৃথিবীতে কুখ্যাত হয়ে যান। এবং অনেকে ওকে চিনে ফেলে।"
ঋত্বিকের ওই পোস্টে স্বাভাবিকভাবেই সোশাল মিডিয়ায় হইচই। মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জেরেই যে অভিনেতার এমন পোস্ট, তা আর বুঝতে বাকি নেই কারও। পরিচালক সুদেষ্ণা গুহও ঋত্বিককে সায় দিয়ে ভালোবাসা জানিয়েছেন ওই পোস্টে। নেটপাড়ার একাংশও অভিনেতাকে সমর্তন করে বিভিন্ন 'টিপন্নি' কেটেছে! তবে কেউ কেউ আবার ঋত্বিককে 'অশিক্ষিত নেতার চামচা' বলে খোঁটা দিতেও ছাড়লেন না! উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আবহে নরেন্দ্র মোদির বায়োপিক নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল। যদিও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে শেষমেশ ভোটের পর রিলিজ করে। আর সেই ছবিতেই মোদির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল বিবেক ওবেরয়কে। এবার সেই বায়োপিকের প্রসঙ্গ টেনেই বিদ্রুপ ঋত্বিকের।
[আরও পড়ুন: বুবলির সঙ্গে গোপনে বিয়ের পরও রাজকে ভুলতে পারছেন না পরীমণি, প্রাক্তন স্বামীর জন্য কী করলেন?]
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha 2024) একেবারে অন্তিম পর্যায়ে এসে একটি সংবাদসংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। মোদির (Narendra Modi) কথায়, “মহাত্মা গান্ধী এই পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ। গত ৭৫ বছর আমাদের দায়িত্ব ছিল তাঁর কথা গোটা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরা। কারণ গান্ধীর বিষয়ে কেউ জানত না। কিন্তু ক্ষমা করবেন, প্রথমবার গান্ধীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয় যখন ‘গান্ধী’ ছবিটা তৈরি হয়েছিল। আমরা দেশবাসী নিজেরা গান্ধীর কথা প্রচার করিনি।” এখানেই না থেমে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের অর্ধেক মানুষ মার্টিন লুথার কিং বা নেলসন ম্যান্ডেলার নাম জানেন। মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) তাঁদের চেয়ে কোনও অংশে কম নন। তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বের কাছে তিনি অপরিচিত রয়ে গিয়েছেন। মোদির মন্তব্য, গোটা বিশ্ব ঘুরে আসার পরেই তিনি উপলব্ধি করেছেন যে গান্ধীর কথা দুনিয়ার কাছে অজানাই রয়ে গিয়েছে।
মোদির এই বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিবাদ করেছে কংগ্রেস (Congress)। দলীয় নেতা জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “গান্ধীর আদর্শকে ধ্বংসের চেষ্টা করছেন মোদি। উনি এমন এক দুনিয়ায় বাস করেন যেখানে ১৯৮২ সালের আগে কেউ গান্ধীকে চিনত না। কেউ যদি গান্ধীর আদর্শ নষ্ট করে থাকেন, সেটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই। কারণ আরএসএস কর্মীরা কোনওদিন গান্ধীর জাতীয়তাবাদ বুঝতে পারে না।”