অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: লাল ফিতের ফাঁসে ২১ বছর ধরে আটকে পেনশনের টাকা। হাসপাতালে বোনের মৃত্যুর পর মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে এসে শুধুমাত্র টাকার অভাবে তা তিনদিন ধরে আগলে রেখে দিলেন দাদা ও বোন। রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে-র সঙ্গে তুলনা চলতেই পারে উলুবেড়িয়া থানার ময়রাপাড়ার বাসিন্দা নীলমণি ধাড়ার। তিনদিন ধরে বোনের মৃতদেহ আগলে রেখে দেওয়ার কারণেই এ তুলনা। কিন্তু সেই মৃতদেহ আগলে রেখে দেওয়ার পিছনের ঘটনাটি যে কতটা করুণ তারই প্রমাণ মিলল বুধবার সকালে।
[উৎসবমুখর শহরে প্রতারণার ফাঁদ, বন্ধুত্বের প্রলোভনে টাকা হাতাচ্ছে সুন্দরীরা]
এদিন ময়রাপাড়ার বাসিন্দারা সকাল থেকেই পচা গন্ধ পেতে শুরু করেন। খোঁজখবর নিতেই বেরিয়ে আসে নীলমণিবাবুর বোনের মৃতদেহ আগলে বসে থাকার ঘটনাটি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অপর এক বোনও। দ্রুত লোকমুখে ছড়ায় রবিনসন স্ট্রিটের আতঙ্ক। খবর পৌঁছায় উলুবেড়িয়া থানা ও স্থানীয় ক্লাবে। পুলিশ ও ক্লাবের সদস্যরা এগিয়ে এসে মৃতদেহ উদ্ধার করেন। ততক্ষণে অবশ্য তিনদিন আগে মৃত্যু হওয়া করবী ধাড়ার(৬১) শরীরে পচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এরপর পুলিশ মৃতদেহটি সোজা শ্মশানে পাঠায় সৎকারের জন্য। নীলমণিবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। তখনই পুলিশ জানতে পারে ওই পরিবারের চরম আর্থিক দুরবস্থার কথা। নীলমণিবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ২২ ডিসেম্বর অসুস্থ অবস্থায় বোন করবীকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করেন। সেখানেই ২৪ ডিসেম্বর সেপ্টিসেমিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ সৎকারের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে নীলমণিবাবুর বোনের দেহ রিলিজও করে দেয়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় একটি গাড়ি ভাড়া করে অনেক কষ্টে বোনের মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে আসেন নীলমণিবাবু।
[‘সান্তা’ হয়ে হাওড়া স্টেশনের ভবঘুরে শিশুদের মুখে হাসি ফোটাল রেল পুলিশ]
কিন্তু পকেটে যে ক’টা টাকা পড়েছিল তাতে বোনের সৎকার করলে আর বাকি দু’দিন অভুক্ত থাকতে হত। তাই ঘরের মেঝেতেই বোনের মৃতদেহ শুয়ে রেখে দিতে বাধ্য হন। পুলিশকে নীলমণিবাবু জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে এনআরএস হাসপাতালের অধ্যাপক পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় দীর্ঘ ২১ বছর ধরে আটকে রয়েছে তাঁর পেনশন। ফলে আর্থিকভাবে চরম পরিস্থিতির শিকার হয়েছে গোটা পরিবার। নীলমণিবাবুরা চার ভাই-বোন। এক বোনের বিয়ে দিতে পারলেও বাকি দুই অবিবাহিত বোনকে সঙ্গে নিয়েই থাকতেন দাদা নীলমণি। সম্প্রতি জীবনধারণের জন্য তাঁদের ভিক্ষা করতেও দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে গোটা ঘটনাটি জানার পর প্রত্যেকেই নীলমণিবাবুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই আর্থিক সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন।
[স্টিং অপারেশনের টাকার উৎস কী? নারদ প্যাঁচে ম্যাথু স্যামুয়েল]
The post রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া উলুবেড়িয়ায়, মৃত বোনের দেহ আগলে ঘরবন্দি দাদা appeared first on Sangbad Pratidin.