নব্যেন্দু হাজরা: মেট্রো স্টেশনে অপরিচিত যুবক লুকিয়ে মহিলাদের ভিডিও করছিলেন। জনৈক মহিলা যাত্রীর এমনই অভিযোগে সোমবার সন্ধে নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালীঘাট মেট্রো স্টেশন। পরে অভিযোগের সত্যতা না মেলায় ওই মহিলা ক্ষমা চেয়ে নিলেও, বিপত্তি বাড়িয়েছেন দুই আরপিএফ কর্মী। অভিযোগ, অবাঙালি আরপিএফ কর্মী অযথা যুবককে হেনস্তা করে, বড়সড় অপরাধে ফাঁসিয়ে কড়া শাস্তির হুমকি দেয়। যুবকও দাবি করতে থাকেন, তাঁকে বিনা কারণে হেনস্তা করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আরপিএফ কর্মীদের। শেষপর্যন্ত বিষয়টি বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। যা এই মুহূর্তে বেশ সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। অভিযুক্ত আরপিএফ কর্মীর বিরুদ্ধে কালীঘাট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ বাজি রুখতে মোতায়েন সাদা পোশাকে ভলান্টিয়ার]
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার সন্ধেবেলা, কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। সন্ধে ৬টা ৫০ নাগাদ কালীঘাট স্টেশনে মেট্রো ঢুকতেই ১৮-১৯ বছরের এক মহিলা যাত্রী এক যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে ওই যুবক নাকি গোপনে নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তাঁদের ছবি, ভিডিও তুলেছেন। এনিয়ে তিনি এবং তাঁর সঙ্গে থাকা যুবক, যুবতীরা প্রতিবাদ করতে থাকেন। তাঁর অভিযোগ শুনে এগিয়ে আসেন স্টেশনে কর্মরত দুই আরপিএফ কর্মী। এরপর তাঁরাই ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা শুরু করেন।
সিজার মিশ্র নামে ওই যুবকের মোবাইল ফোনটি পরীক্ষার জন্য চাওয়া হয়। তিনি জানান, মোবাইল পরীক্ষার জন্য অবশ্যই দেবেন, তবে তা স্টেশনে নয়, স্টেশন মাস্টারের ঘরে গিয়ে। এতে নারাজ আরপিএফ কর্মীরা। তাঁরা হিন্দিতে বলতে থাকেন, ওখানেই তাঁদের হাতে মোবাইল তুলে দিতে হবে। পরবর্তী ঘটনা সিজার নিজেই জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি ওঁদের জানাই যে আমি হিন্দি ঠিকমতো বুঝতে পারি না। তাঁরা যেন বাংলায় কথা বলেন। একথা শুনেই তাঁরা দু’জন একেবারে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন এবং সরাসরি বাঙালিকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে থাকেন। আমাকে ধরে ধাক্কা মারতে মারতে স্টেশন মাস্টারের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি, এটা ওদের জাতিবিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।’ সিজারের আরও অভিযোগ, স্টেশন মাস্টারের ঘরেও ওই দুই আরপিএফ কর্মী নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকেন যে এই ‘বাঙালি’কে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় যে লুকিয়ে মহিলাদের ছবি তোলার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এমনভাবেই মামলা সাজানো হবে যে ১৬ বছরের আগে জেল থেকে বেরনো অসম্ভব হবে তাঁর পক্ষে।
আত্মরক্ষার্থে সিজার নিজের এই অবস্থা ভিডিও করে সরাসরি তা ‘বাংলা পক্ষ’ নামে গ্রুপটিতে পোস্ট করেন, সংগঠনের সমর্থক তিনি নিজে। এভাবে গড়িয়ে যায় প্রায় ঘণ্টা খানেক। সন্ধে আটটা নাগাদ আরপিএফের এক পদস্থ আধিকারিক, কালীঘাট থানার ওসি মেট্রো স্টেশনে গিয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তাঁদের উপস্থিতিতে সিজার নিজের মোবাইল ফোনটি পরীক্ষার জন্য দিয়ে দেন। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন অভিযোগরকারী মহিলা ও তাঁর সঙ্গীরাও। মোবাইলটিতে কোনও ভিডিও বা ছবি পাওয়া যায় না। তাতে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে লিখিতভাবে সিজারের কাছে ক্ষমা চান অভিযোগকারী।
[আরও পড়ুন: কালীপুজোতেও চাই সরকারি অনুদান, পুলিশ কর্তাদের সামনেই দাবি উদ্যোক্তাদের]
ইতিমধ্যে সিজারের দুই বন্ধু, যাঁরা ‘বাংলা পক্ষ’-এর সদস্য, তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা দাবি করেন, অকারণে যে আরপিএফ কর্মী সিজারকে মারধর করে, অশ্রাব্য গালিগালাজ করেছেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা জানতে পারেন যে অভিযুক্ত কর্মীকে ইতিমধ্যেই চুপিসাড়ে অন্য মেট্রো স্টেশনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর নাম রাজেশ কুমার মিনা, রাজস্থানের বাসিন্দা। আরপিএফ অফিসার এবং কালীঘাট থানার ওসি তাঁদের রাজেশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দেন। সেইমতো কালীঘাট থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর। এনিয়ে সিজারের বক্তব্য, ‘ওরা আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাতে ওদের ঔদ্ধত্য এবং তীব্র বাঙালি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। যারা আমাদের ভাষা বোঝে না, এমন নিরাপত্তারক্ষী আমাদের চাই না। আমরা এবার দাবি তুলব যে বাংলায় বাঙালি আরপিএফ চাই।’
The post ‘বাঙালি ভিখারির বাচ্চা’, কালীঘাট মেট্রোয় যুবককে মার আরপিএফের appeared first on Sangbad Pratidin.