রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিজেপির রাজ্য দপ্তরে দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহার ঘর ভেঙে দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ—বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। বঙ্গ বিজেপিকে দখল করে নব্য ও তৎকাল নেতারা যেভাবে পার্টির পুরনোদের কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু করেছেন, তা নিয়ে সরব দলের বড় অংশই। শুধু তাই নয়, আগে থেকে না জানিয়ে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবির যেভাবে এই দুই নেতাকে ঘরছাড়া করেছে তা ভালোভাবে নিচ্ছে না আরএসএস।
জানা গিয়েছে, ঘর ভাঙা নিয়ে নিজেদের ঘরের ছেলে অভিমানী দিলীপের পাশেই রয়েছে আরএসএস। ক্ষোভের রেশ দিল্লি পর্যন্ত চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই এবার এই ঘর ভাঙার প্রতিবাদে দুই শীর্ষনেতার পাশে দাঁড়াল অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভাও। ঘর ভাঙার প্রতিবাদ জানিয়ে দিলীপ—রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য দপ্তরের সামনে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার নামে সোমবার পড়ল একাধিক পোস্টার। ওই দুই নেতার ঘর ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে পোস্টারে। পোস্টারের দায় স্বীকার না করলেও হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী অবশ্য পোস্টারে থাকা বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন।
[আরও পড়ুন: আচমকাই আমেরিকা সফর বাতিল রাজ্যপালের, বিবৃতি দিয়ে কী জানাল রাজভবন?]
অন্যদিকে, দলের পুরনোদের অবদান মুছে দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্য বিজেপির একাংশ যখন সরব, সেই প্রেক্ষিতে এবং এই ঘর ভাঙা বিতর্কের মধ্যেই সোমবার সল্টলেক পার্টি অফিসে দলীয় এক অনুষ্ঠানে রাহুল সিনহার বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না। অতীতকে নিয়ে চলতে হবে। যে সংগঠন অতীত ভুলে যায় সেই সংগঠনের মৃত্যু ঘটে।’’ মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের মধ্যে চলা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে মনের ক্ষোভ—অভিমান থেকেই একথা বলেছেন রাহুল সিনহা। আর এসব থেকেই স্পষ্ট, রাজ্য দপ্তরে ঘর ভাঙা নিয়ে বঙ্গ বিজেপির আদি—নব্য দ্বন্দ্বই ফের প্রকাশ্যে।
এদিকে, দিলীপ—রাহুলদের ঘর ভাঙা নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কুণাল ঘোষ বলেন, “আগে দিলীপবাবু ও রাহুল সিনহার ঘর মেরামত করে দিক রাজ্য বিজেপি। তার পর তৃণমূল নিয়ে ভাববে।” এর পরই তৃণমূল মুখপাত্রের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “বিজেপি তাদের ঘরের খবর রাখুক। দল ভাঙছে। বিজেপির আদি নেতা—কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূলের একশোবার লড়াই আছে। কিন্তু তৃণমূল ও অন্যান্য দল থেকে যাওয়া কিছু অতৃপ্ত আত্মা বিজেপিটাকে দখল করে নিয়েছে। দলের আদি—পুরনোরা এসব সহ্য করতে পারছে না। তাঁরা অত্যাচারিত—নিগৃহীত। তাঁদেরকে তাড়িয়ে দল দখল করা হয়েছে। দলবদলুরা গিয়ে দল দখল করছে।” রাহুল—দিলীপদের ঘর ভেঙে তাঁদের মতো পুরনো নেতাদের অপমান করা প্রসঙ্গে কুণালের আরও বক্তব্য, “পুরনোরা আত্মসম্মান নিয়ে দল করতে পারছেন না। নতুন করে ভাবছেন কী করবেন। সিনিয়র নেতাদের ঘরের এসির লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে। না জানিয়ে ঘর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বুকভরা দুঃখ নিয়ে তাঁরা রয়েছেন।”
[আরও পড়ুন: তদন্ত ফল শূন্য! লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় ইডি-সিবিআইকে ভর্ৎসনা বিচারপতি সিনহার]
বিজেপির রাজ্য দপ্তরের সামনে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার নামে দেওয়া পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহার ঘর ভাঙা নিন্দনীয়, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভাতে যুক্ত হয়ে চন্দ্রচূড় গোস্বামীর হাত শক্ত করুন। নির্যাতিত অবহেলিত বিজেপি কর্মীরা হিন্দু মহাসভায় স্বাগত।’ কোথাও লেখা হয়েছে, ‘চোর চোর চোরটা, নন্দীগ্রামের লোকটা’। এ প্রসঙ্গে হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য, “বিজেপির রাজ্য অফিসের সামনে নাকি আমাদের কর্মী—সমর্থকরা কিছু পোস্টার দিয়েছে। কারা পোস্টার দেবে সেই দায় আমরা নিতে পারব না। কিন্তু এটুকু বলি, পোস্টারগুলো ওখানে দিয়ে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে সেটা হিন্দু মহাসভা মন থেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। সত্যি কেউ হিন্দু হলে এটা করত না। পোস্টারে যাঁর নাম রয়েছে তিনি তো নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।’’