সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাড়ির জানালার ভাঙা কাচের জায়গায় এখন বিশাল বিশাল ব্যানার ঝোলানো। কেউ যাতে বুঝতে না পারে, জানতে না পারে আসল সত্যিটা।
সার সার জীর্ণ-দীর্ণ বাড়িগুলোর দেওয়ালে আঁকা হচ্ছে কার্টুন। কমিক চরিত্র সব। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আশপাশের বাড়ির দিকে তাকালে চট করে যাতে কঠিন বাস্তবটা ধরা না যায়। বাড়ির বাসিন্দাদের প্রতি রাষ্ট্র সরকারের কড়া নির্দেশ- একদম ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। দাঁড়ালেই পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে! তার বদলে ব্যালকনিতে থাকবে কাটআউট। মনুষ্যচরিত্রের কাটআউট। প্রাণহীন যে সব মনুষ্যমূর্তি ঝুঁকে থাকবে ব্যালকনি থেকে। হাত নাড়ানোর ভঙ্গিমা সহ। গোটা বিশ্বের ফুটবল পর্যটকদের যাতে মনে হয়, আরে এ তো দারুণ ব্যাপার! সমস্ত বাড়ি থেকে লোক বেরিয়ে এসেছে শুধুমাত্র অভ্যর্থনার জন্য!
[ফুটবলে মনোযোগ বাড়াতে যৌনতায় না ওজিলদের, কড়া জার্মানির হেডস্যার লো]
বিশ্বকাপ ফুটবল বলতে আমজনতা কী বোঝে? না, এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্ট। যা চার বছর পর-পর উপস্থিত হয় তার স্বতন্ত্র রূপ-মায়া নিয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের রাজকীয় আভিজাত্যের তলায় যে এত পূতিগন্ধ আছে, কে জানত! উপরের পরিচ্ছেদটা তো পুরোটাই রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপের ছবি। যে বিশ্বকাপ পৃথিবীর বাকি দেশ-বিদেশের জন্য নানান রং নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু উপস্থিত হচ্ছে, রুশ জনতাকে যন্ত্রণা দিয়ে।
বিশ্বকাপ চলাকালীন নিজেরই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটে একটা সুখটান দেওয়া যাবে না। পুলিশ ধরবে। বিভিন্ন টিমের কনভয় রাস্তা দিয়ে গেলে তা ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে না। পুলিশ ধরবে। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পটেমকিন ভিলেজ বলে একটা কথা আছে। যার সরল অর্থ হল, এমন একটা কাঠামো যা আদতে সত্যি নয়। কিন্তু সেটাকেই বাস্তব বলে চালানো। সদ্য চতুর্থবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের গদিতে বসা ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ঠিক সেটারই উত্তেজিত অভিযোগ তুলছে রুশ জনতা। বলা হচ্ছে, পুতিন বিশ্বকে এমন এক রাশিয়া দেখাতে চাইছেন, যে রাশিয়ার আসলে কোনও অস্তিত্বই নেই!
[মাঠের বাইরে মহম্মদ সালাহর এই গুণের কথা জানলে আপনিও মুগ্ধ হবেন]
কালিনিনগ্রাদ-যেখানে আগামী মাসে ইংল্যান্ড খেলবে, সেখানকার বাড়ি-ঘরের ভাঙা কাচ লুকনো হচ্ছে ব্যানার বা ফুল এঁকে। রস্টভ-অন-ডনে আবার ব্যালকনি থেকে ঝুঁকে থাকবে ওই কৃত্রিম মনুষ্যমূর্তি। আর যে সব জায়গায় টিম ট্রেনিং করবে, সেখানে তো আরও উৎপাত। আইসল্যান্ড-সুইডেনের বেসক্যাম্প গেলেনজিক যেমন। সেখানকার বাসিন্দাদের দিয়ে জোর-জবরদস্তি লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে যে, প্লেয়ারদের ভিডিও তোলা যাবে না। প্লেয়ারদের কনভয় দেখা পর্যন্ত যাবে না। রুশ-জনতা ফুঁসতে ফুঁসতে বলছে, প্রেসিডেন্টকে দেখতে কেউ চাইছে না। লোকে ফুটবল টিম দেখতে চাইছে। সেটা কেন দেখতে দেওয়া হবে না? বলা হচ্ছে, পলেস্তারা খসা জেল রং করা হচ্ছে। কাঠের বাড়ি রং করা হচ্ছে। দেশের দারিদ্র ঢাকতে পুরনো বাড়ির দেওয়ালে কার্টুন আঁকা হচ্ছে। এ সব করে কী লাভ? মানুষের মৌলিক অধিকারই তো মৃত। বিশ্বের মনোরঞ্জনের জন্য পকেট থেকে দিতে হচ্ছে রক্তঘামের উপার্জন আর বদলে কপালে জুটছে অপমান আর ব্যক্তিস্বাধীনতার কারাবাস!
The post বিশ্বকাপের মুখে দারিদ্র ঢাকতে জীর্ণ দেওয়ালে কার্টুন আঁকছে রাশিয়া appeared first on Sangbad Pratidin.