সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মস্কোয় বোমা বিস্ফোরণে নিহত রাশিয়ার পরমাণু বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কিরিলোভ! তাঁর আবাসনের সামনেই একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে বোমা রাখা ছিল বলে খবর। কিরিলোভ আবাসন থেকে বেরতেই সেটি ফেটে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। অন্য আর এক জায়গায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর সহযোগীরও। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে রুশ প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনার নেপথ্যে কি ইউক্রেন? মস্কোয় কি অভিযান চালাচ্ছে কিয়েভের ঘাতক বাহিনীর?
এএফপি সূত্রে খবর, ২০১৭ সাল থেকে রাশিয়ার পরমাণু বাহিনীর প্রধানের পদে রয়েছেন ইগর কিরিলোভ। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিয়েভে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যে কারণে চলতি বছরের অক্টোবরে কিরিলোভের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ব্রিটেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সোমবারই ইউক্রেনের সরকারি আইনজীবীরা এই রুশ অফিসারকে ইউক্রেনে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করেছে। কিন্তু এইসব অভিযোগ নস্যাৎ করে দেয় মস্কো। এরপরই আজ মঙ্গলবার নিজের আবাসনের সামনেই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান কিরিলোভ।
শুধু তাই নয়, একইভাবে এদিন নিজের বিল্ডিংয়ের সামনে মৃত্যু হয় কিরিলোভের সহযোগীর। জানা গিয়েছে, ক্রেমলিন থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রিয়াজানস্কি প্রসপেক্ট এলাকায় এক আবাসনের সামনে বিস্ফোরণটি ঘটে। এনিয়ে রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, 'রাশিয়ান ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনীর রেডিয়েশন, কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল প্রোটেকশন ফোর্সের প্রধান ইগর কিরিলোভ নিহত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তাঁর সহযোগীরও। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বিল্ডিংগুলোর একাধিক ফ্লোরের কাঁচ ভেঙে গিয়েছে। সামনের দরজা বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।' সিএনএন সূত্রে খবর, অনেকেই দাবি করছেন যে মস্কো ও তার আশপাশের অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেনের গুপ্তঘাতকরা।
উল্লেখ্য, ৩ বছর পূর্ণ হতে চললেও এখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কোনও রফাসূত্র মেলেনি। উলটে যত দিন যাচ্ছে আরও ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে দুদেশের সংঘাত। কোনও পক্ষই একে অপরকে একচুলও জমি ছাড়তে নারাজ। লড়াইয়ে শুরুতে বিপাকে পড়লেও কাউন্টার অফেন্সিভে রণক্ষেত্রের চেনা ছবি বদলে দিয়েছে ইউক্রেনীয় ফৌজ। রুশবাহিনীর প্রতিটা হামলার কড়া জবাব দিচ্ছে তারা। কয়েকদিন আগেই কিয়েভ সাফ জানিয়েছিল অত্যাধুনিক পশ্চিমি অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে দায়ী থাকবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শত্রুপক্ষের এই হুমকিরই পালটা দেন পুতিন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমরা কিয়েভ ও বিভিন্ন সামরিকক্ষেত্রে ওরশনিক ব্যবহার করতে পিছপা হব না।’ কী এই ওরশনিক? এটি আসলে নতুন প্রযুক্তির ব্যালেস্টিক মিসাইল। সম্প্রতি এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করেছে রাশিয়া। পুতিনের কথায়, ওরশনিক মিসাইল মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারে। একবার আছড়ে পড়লে চারপাশের তাপমাত্রা সূর্যের কেন্দ্রের মতো উত্তপ্ত করে দিতে পারে। প্রতি সেকেন্ডে ৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। ইউক্রেনের আগ্রাসনের জন্যই এই মিসাইলের পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলেন জানান রুশ প্রেসিডেন্ট।