সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোর্টের রায় মানতে হলে মন্দিরে ঢুকতে পারবেন যে কোনও বয়সের নারী-পুরুষ। সুপ্রিম রায়ের পুনর্বিবেচনা আপাতত বৃহত্তর বেঞ্চের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এই অবস্থায় শনিবার বিকেল থেকে খুলে গেল শবরীমালা মন্দির। ৪১ দিনের জন্য। কিন্তু, তার প্রথম দিনেই দরজা বন্ধ থাকল প্রমীলাকুলের কাছে। ১৮টি ‘পবিত্র পদক্ষেপ’ করার আগেই ফিরতে হল তাঁদের। যে বাম সরকার কয়েকমাস আগেই মহিলাদের প্রায় কমান্ডো অপারেশনের স্টাইলে, কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে মন্দিরে ঢুকিয়েছিল। এখন তাদের অবস্থানই বদলে গেলে পুরোপুরি। মন্দির আন্দোলনের জন্য নয় জানিয়ে দেওয়া হল পরিষ্কার।
[আরও পড়ুন: কুয়াশার জেরে দুর্ঘটনা এড়াতে বিলম্বে চলবে ট্রেন, যাত্রীদের সতর্ক করল রেল]
আইনি নির্দেশ মানতে হলে, মন্দিরে ঢুকতে পারবেন সমস্ত মহিলাই। যার মধ্যে রয়েছে দশ থেকে ৫০, অর্থাৎ রজস্বলা বয়সসীমার মধ্যে থাকা মহিলারাও। তবে দশ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকলেও, মন্দিরে প্রবেশ করতে গেলে মহিলাদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা আদৌ মিলবে কি না তা নিয়ে ফয়সালা হয়নি। তাই মন্দিরে ঢোকার আগেই ফিরিয়ে দেওয়া হল অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী দশজন মহিলা দর্শনপ্রার্থীকে। রাজ্য প্রশাসন কার্যত হাত তুলে নিয়েছে। তাদের স্পষ্ট জবাব, নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্দির চত্বর শুধুই ভক্তদের জন্য উন্মোচিত। তবে আন্দোলনের জন্য নয়। তাই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হল না ওই দশ মহিলা ভক্তকে।
কেরলের শবরীমালার আয়াপ্পা মন্দির দেশের অধিকাংশ মন্দির বা দেবস্থানের মতো বছরের প্রতিটি দিনই খোলা থাকে না ভক্তদের জন্য। বরং আয়াপ্পার নিজস্ব একটি দিনপঞ্জি থাকে যা মেনে মন্দির খোলা হয় ভক্তদের জন্য। জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমস্ত ভক্তের জন্য মন্দিরের দরজা অবারিত করার সুপ্রিম-রায়ের পর বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী দফায় দফায় শবরীমালা মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন। ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ আদালতের ওই নির্দেশের পর যে মহিলারা ওই মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁদের ঘিরে মন্দির চত্বরে প্রবল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পুরুষ দর্শনার্থীরা। তারই মধ্যে সমস্ত বাধা পেরিয়ে দু’জন মহিলা, বিন্দু ও কনকদুর্গা শবরীমালায় প্রবেশ করেন।
[আরও পড়ুন: ‘আসাদউদ্দিন ওয়েইসি দ্বিতীয় জাকির নায়েক হতে চলেছেন’, মন্তব্য বাবুল সুপ্রিয়র]
কিন্তু, মন্দিরে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রবল বাধার সম্মুখীন হন অনেক মহিলাই। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় মানুষের ধর্মীয় আবেগের কথা মাথায় রেখে কেরলের বামপন্থী সরকারও কিছুটা পিছু হঠে। এমনকী, যে কোনও ভক্তের জন্যই মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ বলবৎ থাকলেও আইনের ফাঁক ব্যবহার করে এদিন কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে থাকতে চায় পিনারাই বিজয়ন সরকার। শুক্রবার থেকেই মন্দির চত্বর ঘিরে বিপুল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মোতায়েন হয় দশ হাজারের বেশি পুলিশ। কেরলের দেবশ্বম মন্ত্রী কড়কমপল্লি সুরেন্দ্রন এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, যে সব মহিলা সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে চান তাঁদের আদালতের নির্দেশ নিয়ে আসতে হবে। না হলে সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা করে কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়া হবে না তাঁদের। তিনি আরও বলেন, ‘এটা প্রতিবাদ-আন্দোলন করার জায়গা নয়। ত্রুপ্তি দেশাইয়ের মতো কর্মীদের জন্যেও এটা শক্তি প্রদর্শন করার জায়গা নয়। আমরা তাঁদের দায়িত্বও নেব না। তাঁদের এখানে আসতে হলে আদালতের নির্দেশ নিয়ে আসতে হবে।’
পুণের মহিলা সমাজকর্মী ত্রুপ্তি দেশাই অবশ্য ২০ তারিখের পর মন্দিরে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বিচারপতি আর নরিমান, এ এম খানউইলকর, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং ইন্দু মালহোত্রার সাংবিধানিক বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায় দেয়। জানায়, বয়সসীমা নির্বিশেষে যে কোনও মহিলা কেরলের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ভক্তদের বিক্ষোভের কারণে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা জানায় সুপ্রিম কোর্ট, যা গত বৃহস্পতিবারের রায়েও নিষ্পত্তি হয়নি। বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে বিষয়টি বিবেচনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করে সর্বোচ্চ আদালত। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘সব পক্ষকে নতুন করে সুযোগ দেওয়া উচিত।’ ফলে শনিবারেও শবরীমালার দরজা বন্ধই থাকল প্রমীলাকুলের কাছে।
The post অবস্থান বদল কেরল সরকারের, শবরীমালার গেটে ঢুকতে বাধা ১০ মহিলাকে appeared first on Sangbad Pratidin.