অভিরূপ দাস: জানেন বেড নেই। তবু চলে আসছে রোগীর পরিবার। করোনা আক্রান্ত সেই মুমূর্ষুরা কুকুর-বিড়ালের মতো শুয়ে রয়েছেন সাগর দত্ত চত্বরে। গত কয়েকদিনের এই ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সাগরদত্ত হাসপাতালের (Sagor Dutta Hospital) চিকিৎসকরা। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কথায়, সমস্ত করোনা রোগীই ভাবছেন এখানে এলে বেঁচে যাব। এদিকে রোগীর ভিড়ে সংক্রমণ বাড়ছে সাগরদত্ত হাসপাতালে।
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে হাসপাতালের ৯৩ জন করোনা আক্রান্ত (Corona Positive)। মঙ্গলবার নতুন করে অনেক চিকিৎসকের শরীরে আবার করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যাঁর মধ্যে রয়েছেন খোদ হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক সুজয় মিস্ত্রী। এদিকে প্রতিনিয়ত কোভিড ভিড় বাড়ছে কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে সার দিয়ে করোনা রোগী। এক গেট দিয়ে দু’জন সুস্থ হয়ে বেরচ্ছেন তো অন্য গেট দিয়ে তিনটে অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালে ঢুকছে।
[আরও পড়ুন: ওভারলোডিং রুখতে কড়া হচ্ছে রাজ্য, দায়িত্ব নিয়েই বার্তা পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদের]
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন সাগর দত্ত হাসপাতালের ২৮০টি কোভিড বেডেই থিকথিক করছে রোগী। প্রতিটি রোগীর পরিবারকে বলা হচ্ছে আর বেড নেই। অন্যত্র যান। কিন্তু কে শোনে কার কথা! হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক সুজয় মিস্ত্রীর কথায়, “করোনার প্রথম ওয়েভে ভাল চিকিৎসা দিয়েছিল সাগর দত্ত হাসপাতাল। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর ২৪ পরগনার সমস্ত মানুষ ভাবছেন সাগর দত্ত হাসপাতালে গেলে দ্রুত সেরে উঠবেন। কিন্তু আমাদের হাসপাতালের একটিও কোভিড বেড খালি নেই।” সম্প্রতি এই হাসপাতালে ১০ বেডের অক্সিজেন পার্লার চালু করেছে রাজ্য সরকার, নতুন করে আরও ৫০ বেডের হাই ডিপেনডেন্সি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুপারের আক্ষেপ, “যত বেড আছে তার দ্বিগুণ রোগী আসছেন প্রতিদিন। কী করে জায়গা দেব বলুন?” উত্তর ২৪ পরগনায় কোভিড হাসপাতাল অগুনতি। অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, শ্রী বলরাম সেবামন্দির স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা চালু হলেও এই সমস্ত জায়গার বাসিন্দারা এসে ভিড় করছেন সাগরদত্তে।
সাগরদত্ত হাসপাতালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসক তথা অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সম্পাদক মানস গুমটা জানিয়েছেন, প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ করোনা নিয়ে হাসপাতালে এলে যা হয়। বেড তো ভরতিই, জরুরি বিভাগের বারান্দাও উপচে পড়ছে কোভিড রোগীতে। ডা. গুমটার কথায়, “অনেক মানুষই জানে না সাগর দত্ত হাসপাতাল স্টেজ ফোর পর্যায়ের কোভিড হাসপাতাল। সামান্য অসুবিধা হলে এখানে আসবেন না। তার জন্য বরানগর কিংবা বলরামের মতো হাসপাতাল রয়েছে।” ডা. মানস গুমটার আরও বক্তব্য, অনেকেই কোভিড রোগী ভরতির জন্য সরকারি হেল্পলাইনে ফোন না করে সরাসরি কোভিড রোগী নিয়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে চলে আসছেন। এসে শুনছেন বেড নেই। তার পরামর্শ এই ধরনের কোভিড রোগীদের ভরতির বন্দোবস্ত সরকারকেই করতে হবে।
[আরও পড়ুন: মুখ্যসচিব পদে বাড়তে পারে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়াদ? কেন্দ্রের অনুমতির অপেক্ষায় রাজ্য]
কুকুর বিড়ালের মতো কোভিড রোগী শুয়ে আছে সাগরদত্ত চত্ত্বরে, এমন ঘটনার জন্য উত্তর ২৪ পরগনার ভয়ংকর অবস্থাকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় (North 24 Parganas) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৯৭১ জন। যা কিনা কলকাতার থেকেও বেশি। কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে, এমআর বাঙ্গুরের মতো একাধিক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কোভিড চিকিৎসা হলেও, উত্তর ২৪ পরগনায় তা নেই। ফলে সিংহভাগ রোগী আসছেন সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজে।