shono
Advertisement

কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য পাক শিল্পীদের পাশে দাঁড়ালেন সলমন?

শিল্পীদের স্বাধীনতা, রাজনীতি থেকে তাঁদের দূরে রাখার বার্তা নিঃসন্দেহে মহান কাজ৷ কিন্তু এমন মহান হয়ে দেশবাসীর চক্ষশূল হওয়ার থেকে চুপ করে থাকাই ভাল নয় কি? The post কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য পাক শিল্পীদের পাশে দাঁড়ালেন সলমন? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:54 PM Oct 02, 2016Updated: 04:25 PM Oct 02, 2016

একের রক এক হিট ছবি পকেটে রয়েছে যাঁর লোকে তো তাঁকে মানবেই৷ আর তাই ইন্ডাস্ট্রির গডফাদার হওয়া আটকায় কার সাধ্যি? পাক শিল্পীদের দেশে কাজ করার পক্ষে সওয়াল করে মোক্ষম চাল দিলেন ভাইজান৷ কিন্তু দেশ-কাল-পাত্রটা বিবেচনা করলে হত না? লিখেছেন শুভময় মণ্ডল

Advertisement

হাল্লা চলেছে শুন্ডির সঙ্গে যুদ্ধ করতে৷ সেই যুদ্ধ ঠেকাবে কে? সে দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিল গুপি-বাঘা৷ গানে-সুরে হাল্লার বিশাল সেনাকে হাঁড়ি হাঁড়ি মণ্ডা-মিঠাই খাইয়ে যুদ্ধ থামিয়েও দিলেন তাঁরা৷ পরে দুই রাজার রাজকন্যাও মিলে গেল৷ ব্যস! সব ভাল যার শেষ ভালর মতো গল্পও ফুরলো, নটে গাছও মুড়োল৷

এখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধং দেহি পরিবেশ৷ এ বলে, তোকে মারব তো ও বলে, আমিও কি ছেড়ে দেব! সেই যুদ্ধের আঁচ লেগেছে দুই দেশের শিল্পীমহলেও৷ ভারতে করে কম্মে খায় পাকিস্তানি শিল্পীরা৷ অভিনেতা, গায়ক, কৌতুকাভিনেতা আরও কত পাকিস্তানের মানুষ এদেশে রুজি-রুটির আশায় পড়ে রয়েছেন৷ সে নয় ভাল৷ কিন্তু বাদ সাধল দুই দেশের কূটনৈতিক বিরোধ৷ উরি হামলার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কড়া পদক্ষেপ না নিলে দেশের আমজনতা, সংবাদমাধ্যম, রাজনৈতিক দলগুলি তাঁর মুণ্ডপাত করে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি দিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কৌশলী হামলা চালিয়ে বেশ কিছু জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত৷ সেও না হয় ভাল৷ কিন্তু পাক শিল্পীরা কী দোষ করলেন? তাঁদের দোষ, এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরও তাঁদের মুখ দিয়ে টুঁ শব্দটি বেরোয়নি৷ বেরোবেই বা কেন, মাতৃভূমি নিয়ে কিছু বললে পাকিস্তানে ফেরার গঙ্গাপ্রাপ্তি হবে আর উরি হামলার সমালোচনা না করলে ভারতীয় জনতা বাপ বাপান্তর করবে৷ সেটা তাঁরা বিচক্ষণ জানেন৷ তাই স্পিকটি নট৷ তাঁদের নীরবতাকে বিঁধে মাঠে হইহই করে নেমে পড়লেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার সুপ্রিমো রাজ ঠাকরে৷ একেবারে ডেডলাইন দিয়ে পাক শিল্পীদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিলেন তিনি৷ ঝামেলা এড়াতে ফওয়াদ খান দেশও ছাড়লেন৷ এতকিছু মোটামুটি ঠিকই ছিল৷ কিন্তু ভারত এবং পাক শিল্পীদের ঠান্ডা লড়াইয়ের মাঝে গুপি-বাঘার মতো শান্তির বার্তা নিয়ে পদার্পণ সলমন খানের৷ তিনি পাক শিল্পীদের পক্ষেই দাঁড়ালেন এবং তাঁদের এদেশে কাজ করতে দেওয়ার পক্ষে কথা বলে ঝামেলায় ঘৃতাহুতি করলেন৷

হঠাৎ করে সলমনের শান্তির দূতের অবতার কেউ ভাল চোখে দেখছেন না৷ দেশবাসীরা তো নয়ই, বরং শিব সেনা-মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনাও সলমনকে পাকিস্তানে গিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে দিয়েছে৷ করণ জোহরের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ এবং রাহুল ঢোলাকিয়ার ‘রইস’-এর শান্তিপূর্ণ মুক্তির জন্য আচমকা কেন আবেদন-নিবেদন করতে গেলেন সলমন, কেউই ঠাহর করতে পারছেন না৷ দু’টি ছবিতে তিনি কাজ করা তো দূরের কথা, কোনও ক্যামিও করেননি৷ পাক শিল্পীদের পক্ষে সওয়াল করে তাঁর আখেরে লাভ কোথায়? কই, আমির-শাহরুখরা কেউ কিছু বলছেন না তো৷ ‘রইস’ তো শাহরুখের নিজের ছবি আর ইন্ডাস্ট্রিতে করণ জোহরের সঙ্গে শাহরুখের সখ্যতা বহুদিনের৷ পাক শিল্পীরা দেশ ছাড়লে সলমনের কেন এত গায়ে জ্বালা বাপু, প্রশ্ন করছে আম আদমি৷ সলমনের অগুনতি ভক্তরাও ভাইজানের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না, দেশ জুড়ে এই প্রবল জাতীয়বাদী আবহের মধ্যে৷

তবে সলমনের স্বার্থসিদ্ধি কোথায়?

তাহলে স্মৃতির সরণি বেয়ে আপনাদের একটু অতীতে নিয়ে যাই৷ গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা এবং কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় জর্জরিত সলমনের তখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা৷ সাংবাদিক দেখলেই খেপে যাচ্ছেন, সহ-শিল্পীদের চড়-ঘুসি চালিয়ে দিচ্ছেন, মাথার ঠিক নেই৷ যাঁকে যা খুশি বলে দিচ্ছেন ভাইজান৷ ব্যাডবয় ইমেজ ছেড়ে বেরতেই পারছেন না সলমন৷ ঠিক তখনই পরপর বেশ কয়েকটি ছবি সুপারহিট, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা দিয়ে প্রযোজকদের মুখে হাসি ফোটানোর পর মতি ফিরলো সলমনের৷ দান-ধ্যান, সমাজসেবা করে একটু পূণ্য অর্জন করে মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা শুরু করলেন তিনি৷ শাপে বরের মতো দুই দীর্ঘমেয়াদী হত্যা মামলা থেকে রেহাইও পেয়ে গেলেন তিনি৷ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হল আর তাঁর আইনজীবী তাঁকে আদালতে নির্দোষ প্রমাণ করে দিলেন৷ যদিও মহারাষ্ট্র পুলিশ বম্বে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করলেও তার শুনানির ভবিষ্যৎ অথৈ জলে কার্যত বলা যায়৷ তাই মুক্তির আস্বাদ পাওয়া সলমন এখন নয়া অবতারে আবির্ভূত৷ ত্রাতার অবতার৷ ইন্ডাস্ট্রিতে গডফাদার হওয়ার প্রবল ইচ্ছা তাঁর৷ সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের অটোগ্রাফ ছবিতে যেমন বুম্বাদাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি অরুণ চ্যাটার্জি, আমি ইন্ডাস্ট্রি’৷ ঠিক সেইরকম ভাবেই বলি ইন্ডাস্ট্রির বেতাজ বাদশাহ হতে চাইছেন সলমন৷ অনেকটা বাবা লোকনাথের মতো রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই ইন্ডাস্ট্রির কেউ বিপদে পড়বেন, ত্রাতা হয়ে রক্ষা করবেন সলমন৷ এমনকী পাক শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তিনি রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ তাতে কে কী বলল তাঁর কিছু আসে যায় না৷ মোদ্দা কথা, শিল্পীদের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে চন্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক হতে চাইছেন সলমন৷ তাহলেই সবাই তাঁকে তোয়াজ করে চলবে৷ তাঁর সামনে মাথা নত করে থাকবে৷ মহানতা দেখিয়ে মহাত্মা হওয়ার খেলায় মেতেছেন৷ আমির-শাহরুখরা যেখানে অসহিষ্ণুতার জুজুতে মুখে রা কাড়ছেন না সেখানেই তো সলমনের সুযোগ৷ গডফাদারের মতো ইন্ডাস্ট্রির ব্যাটন ধরে নীতিনির্ধারণ করা৷ যাতে সমস্ত প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতারা তাঁর অলিখিত দাসত্ব করতে পারেন৷ তিনি ঠিক করে দেবেন ছবিতে কে গাইবে, কে চিত্রনাট্য লিখবে, কে অভিনয় করবে আর কে করবে না৷ সবই তাঁর অঙ্গুলিহেলনে ঠিক হবে৷

শাহরুখ-আমিররা হালে পানি পাবে না, এর থেকে আনন্দের বিষয় আর কি থাকতে পারে! তাই পাক শিল্পী ইস্যুটাকে হাতছাড়া করতে চাননি ভাইজান৷ লোহা গরম হ্যায়, মার দো হাতোড়া! বিতর্ককে আরও খুঁচিয়ে দিয়ে তিনি ফোনই করে বসলেন রাজ ঠাকরকে৷ আবদার, পাক শিল্পীদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে দিতে হবে৷ ব্যস, তাতেই বেজায় চটলেন বালাসাহেবের ভাইপো৷ বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ভবই বা বাদ যান কেন? নিজে না বলে দলের লোককে দিয়ে সলমনকে একহাত নিলেন৷ ভাইজান দমলেন কি না জানি না, কিন্তু কাগজের বড় বড় হেডলাইন হয়ে গেল৷ সে যাই হোক, গডফাদার হতেই হবে৷ তাই পাক শিল্পীদের জন্য সওয়ালের জিগির জারি রাখতে হবে৷ বাকি খানরা গোল্লায় যাক, সিংহাসনে আমাকেই বসতে হবে৷ তাই চালিয়ে যাও৷ এখানে একটা কথাই বলার, শিল্পীদের স্বাধীনতা, রাজনীতি থেকে তাঁদের দূরে রাখার বার্তা নিঃসন্দেহে মহান কাজ৷ কিন্তু এমন মহান হয়ে দেশবাসীর চক্ষশূল হওয়ার থেকে চুপ করে থাকাই ভাল নয় কি?  দেশ-কালের থেকে উর্ধ্বে শিল্প-সংস্কৃতি, কিন্তু দেশের উপর আঘাত নেমে আসলে সবার প্রথম সোচ্চার হয় শিল্পীরাই৷ সলমনও হয়েছেন, কিন্তু আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য৷ তবে ভাইজান, চালে একটু ভুল হয়ে গেল মনে হচ্ছে৷ মানে, দেশ-কাল-পাত্রটা বিবেচনা করলে হত না?

The post কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য পাক শিল্পীদের পাশে দাঁড়ালেন সলমন? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement