সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেদিন কি তিনি ছিলেন স্বীকারোক্তির মেজাজে? না কি এটা বয়স হয়ে যাওয়ার ফল?
সঞ্জয় দত্তকে দেখে যদিও মনে হয় না- তাঁর ৫৭ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। এই বয়সের তাঁর কর্মক্ষমতা হার মানাতে পারে যে কোনও যুবককে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পরে যে কোনও মানুষই যখন পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ফেলে আসা সময়টাকে, তখন তার আর বিশেষ কিছু লুকানোর থাকে না।
সঞ্জয় দত্তর তো আরওই নেই! তাঁর জীবনের অনেক কিছুই খোলা খাতার মতো বিছিয়ে রয়েছে অনেকেরই চোখের সামনে। বেআইনি অস্ত্র রাখার দায়ে হাজতবাস, ড্রাগের নেশা, একাধিক বিয়ে- সবই বহু আলোচনার বিষয়! ফলে রাজধানীর এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে যখন বোন প্রিয়া এবং একদা সহনায়িকা পূজা ভাটের সঙ্গে এলেন নায়ক, কথা বললেন মন খুলে। তাঁর সেই স্বীকারোক্তি শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে।
সেই স্বীকারোক্তির পালা শুরু হল নায়কের মাথার পিছনে একটা টিকি দিয়ে। সবাই জানতে চেয়েছিলেন- এই টিকিটা কেন রাখছেন নায়ক? “এটার অনুপ্রেরণা আমি পেয়েছিলাম জেলে, মিশ্রজির কাছ থেকে। উনি কয়েদিদের চুল-দাড়ি কামাতে আসতেন। একদিন জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি- খুনের অপরাধে ওঁর যাবজ্জীবন হয়েছে। উনি জেলেই থাকেন। এভাবে কাজকর্ম করেন। তার পর থেকে যতবার মিশ্রজি দাড়ি কামানোর সময় আমার গলার কাছে ক্ষুরটা নিয়ে আসতেন, আমি ভয়ে কেঁপে উঠতাম”, জানিয়েছেন নায়ক!
অকপট কথোপকথনের সেই শুরু! এর ঠিক পরেই ওঠে বেআইনি অস্ত্র রাখার প্রসঙ্গ। দেখা গেল, এদিন জীবনের কুখ্যাত কোনও পর্ব নিয়েই রাখঢাকের প্রয়োজন বোধ করছেন না সঞ্জয় দত্ত। “আমার আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি বরাবর একটা দুর্বলতা ছিল। তখন দাঙ্গা চলছে। সেই সময়ে একদিন আমার এক ছবির প্রযোজক বললেন- বন্দুক রাখবে একটা নিজের কাছে? শুনেই আমার কান খাড়া হয়ে উঠল! বন্দুক! তাও আবার একে৫৬! তার লোভ কী ছাড়া যায়! তাই আমি রাজি হয়ে গেলাম! ভেবেছিলাম, ওটা নিয়ে খান্ডালা যাব। ফাঁকা জায়গা দেখে দু-একবার চালাব, তার পর ফেলে দিয়ে চলে আসব”, শেষের দিকে একটু হলেও কি কেঁপে গিয়েছিল নায়কের গলার স্বর? কেন না, এ পরের পর্বটা তাঁর জীবনে সুখের হয়নি যে!
অবশ্য এদিন তিনি এমন কোনও স্বীকারোক্তিই করেননি যা সুখের দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। সেই প্রসঙ্গেই উঠেছিল নেশার কথাও। উঠতেই সবার আগে স্বীকার করে নিলেন নায়ক- “আমি নেশা না করে থাকতেই পারতাম না! একবার বিদেশে যাচ্ছি, সঙ্গে দুই বোন। আমি বুটের ভিতরে লুকিয়ে পাক্কা ১ কেজি কোকেন নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন বিমানবন্দরে এত তল্লাশির কড়াকড়ি ছিল না। ফলে আমি বেঁচে যাই! কিন্তু আজ সেই কথা ভাবলে ভয়ে আমার বুক কেঁপে ওঠে। আমি ধরা পড়লে জেল খাটতাম, সে ঠিক ছিল! কিন্তু আমার দুই বোনও তো রেহাই পেত না”, জানিয়েছেন সঞ্জয়।
আরও জানিয়েছেন সঞ্জয়, “কোকেন মানুষকে হাই করে দেয়! সেই নেশা কাটানোর জন্য আশ্রয় নিতে হয় মদের। মনে আছে, একদিন আমি কোকেনের নেশা করে গভীর রাতে বাড়ি ফিরেছি। তার পর সেই নেশা নামানোর জন্য অনেকটা মদ খাই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙার পরে আমার খুব খিদে পেয়েছিল। তখন বাড়ির কাজের লোকের কাছে কিছু খেতে চাইলে সে জানিয়েছিল, আমি না কি ঠিক দুই দিন পরে ঘুম থেকে উঠি! সেদিন নিজেকে আয়নায় দেখে মনে হয়েছিল, জীবন ফুরিয়ে আসছে। ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। এবং বাবাকে গিয়ে সব কথা বলে নেশা ছাড়ানোর জন্য সাহায্য চাই!”
তবে এরকম নেশা সাধারণত মানুষ করে থাকে কোনও দুর্বলতা ঢাকার জন্য! নার্গিস এবং সুনীল দত্তর ছেলের এমন কী দুর্বলতা থাকতে পারে? সে কথাও জানিয়েছেন নায়ক, এড়িয়ে যাননি। “মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে আমার একটা জড়তা ছিল। আমি কিছুতেই মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম নবা। একদিন এক বন্ধু ড্রাগ ধরিয়ে দিল। বলল, এটা খেলে না কি আর জড়তা থাকবে না। সেই শুরু”, কবুল করেছেন সঞ্জয়।
সবার শেষে জানিয়েছেন এক অদ্ভুত কথা! এও স্বীকারোক্তি, কিন্তু খুবই করুণ! “আমি ইদানীং রণবীর কাপুরকে এড়িয়ে চলি! ও মাঝে মাঝেই ফোন করে আবদার করে- আমার সঙ্গে একটা দিন কাটাবে। তাতে ওর ছবিতে আমি সাজতে না কি সুবিধা হবে! কিন্তু এতটা সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই এড়িয়ে যেতে হয়”, বেশ গম্ভীর মুখেই কথাগুলো জানালেন তিনি!
তবে এই প্রসঙ্গে একটু হলেও ফুট কেটেছেন পূজা ভাট। “রণবীরের উচিত নিজেকে ছেড়ে দেওয়া! আকাশে উড়ুক, মাটিতে আছড়ে পড়ুক, ধাক্কা খাক- তবেই ও সঞ্জুর জীবনটা বুঝতে পারবে! এছাড়া অন্য রাস্তা নেই! সঞ্জয় দত্ত হয়ে ওঠা মোটেই ছেলেখেলা নয়”, দাবি নায়িকার!
আপনার কী মনে হয়- নায়িকা ঠিক বলছেন?
The post বেআইনি অস্ত্র-মাদক নিয়ে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সঞ্জয় দত্তর appeared first on Sangbad Pratidin.