অর্ণব আইচ: প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে চার বছর পরও চাকরি পাননি প্রার্থীরা। তাই হোয়াটস অ্যাপে (WhatsApp) হুমকির ‘চিঠি’! চাকরি দেওয়ার নামে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ‘উধাও’ করে দেওয়ায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোবাইলে হাতে লেখা চিঠির ছবি তুলে পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছিল ‘আননোন ১’। যদিও শান্তনুকে গ্রেপ্তারির পর তদন্ত চালিয়ে সেই মেসেজ রহস্য উদঘাটন করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। ইডির গোয়েন্দাদের মতে, ওই মেসেজ-সহ একাধিক ‘হুমকি’র বিষয় জেলা পুলিশকে জানানোর পর রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর রিপোর্ট দেয় যে, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনহানির শঙ্কা রয়েছে। তারই ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশ শান্তনুর নিরাপত্তার জন্য দুই পুলিশ কনস্টেবলকে নিয়োগ করে।
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া আইফোন (I-Phone) থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। ইডির দাবি, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইফোনে একটি চিঠির ছবি হোয়াটস অ্যাপে আসে। চিঠিটি এসেছিল অচেনা নম্বর থেকে। তাই শান্তনু ওই নম্বরটি ‘আননোন ১’ বলে সেভ করেন নিজের মোবাইলে। সোমবার ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সঞ্জীব দাঁর উপস্থিতিতেই শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অয়ন শীলের বিরুদ্ধে ইডি চার্জশিট পেশ করে।
[আরও পড়ুন: এবার ডাক্তারিতে ডিপ্লোমা কোর্স, নবান্নে রিভিউ মিটিংয়ে প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর]
চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, হোয়াটস অ্যাপে সেই ব্যক্তি ‘ভাই শান্তনু ভাল থাকবেন’ বলে চিঠি শুরু করে বলা হয়েছে, ‘আপার প্রাইমারি ও প্রাথমিক টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগাম ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা তুলে আপনাকে দেওয়া হয়েছে। ওই পরীক্ষার্থীরা আমাদের আত্মীয়। ওই টাকা কেউ নিজেদের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ-বা সুদে ঋণ নিয়ে দিয়েছেন টাকা। এরপর চার বছর কেটে গিয়েছে। এখন এই অবস্থায় আপনাকে আর চাকরি দিতে হবে না। আপনি বরং টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এই কারণে আত্মীয়রা আমার সঙ্গে ঝগড়া ও গোলমাল করছেন। এতে পারিবারিক অশান্তি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সম্পর্কের। বারবার ফোন করা হলেও আপনি ফোন তোলেননি। আপনি ফোন তুলছেন না, এটা ভাল নয়। কিছুদিন আগে পুরশুড়ার রাকেশ পরামর্শ দিল টাকা ফেরত পেতে ‘দাদা’র সঙ্গে কথা বলার। আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কী করছেন। আমি সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। সেই সমস্যার সমাধান করুন। আত্মীয়রা যা-তা বলছেন। টাকা আপনার কথামতোই আপনার বলাগড়ের শ্রীপুরের বাড়ি ও পুরশুড়ার রাকেশের বাড়িতে দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো আমি টাকা দিয়েছি। এর সমাধান করুন। ভাল থাকবেন।’’
[আরও পড়ুন: মর্মান্তিক! ভাইপোর বিয়ের আসরে নাচতে নাচতে মৃত্যু ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের ম্যানেজারের]
এই ব্যাপারে জেরার সময় শান্তনু দাবি করেন, যে অচেনা নম্বর থেকে চিঠির ছবি এসেছিল, তার প্রেরক কে, তিনি তা বুঝতে পারেননি। যদিও ইডির ধারণা হয়, হাতের লেখা ও চিঠির বিষয় দেখে শান্তনু বুঝতে পারেন যে, সেটি হুগলির (Hooghly)পঞ্চায়েত স্তরের নেতা গুণধর খাঁড়ার পাঠানো। কারণ যে মোবাইল নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চিঠি পাঠানো হয়, সেই নম্বরের সূত্র ধরে ইডির গোয়েন্দারা তদন্ত করে নম্বরটি যে গুণধর খাঁড়ার, সেই ব্যাপারে ইডির গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন। গত ২৫ এপ্রিল গুণধরকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দপ্তরে তলব করে জেরা করা হয়।