অর্ণব আইচ: শিল্পপতি সঞ্জয় সুরেকার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সাড়ে চার কোটি টাকার গয়না উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। খোঁজ মিলল সুরেখা পরিবারের আটটি বিলাসবহুল গাড়ির। গয়না ও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার পরই সোমবার গভীর রাতে দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনের বাড়ি থেকে নামী ইস্পাত সংস্থার কর্ণধার সঞ্জয় সুরেকাকে গ্রেপ্তার করল ইডি। রাতেই তাঁকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইডির দাবি, ইস্পাত সংস্থাকে সামনে রেখে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। ১৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয় সুরেকার সংস্থা। কিন্তু সুরেকা ও সংস্থার অন্য কর্তারা ওই কয়েক হাজার কোটি টাকা হস্তগত করেন। ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতা সংস্থাগুলি টাকা ফেরত পায়নি। ওই বিপুল টাকা পাচার করা হয় প্রচুর ভুয়ো সংস্থা বা শেল কোম্পানির মাধ্যমে। গ্রেপ্তারির পর মঙ্গলবার সঞ্জয় সুরেকাকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে তোলা হয়। ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী তাঁকে ১৪ দিনের ইডি হেফাজতে রাখার জন্য আবেদন জানান। অভিযুক্তর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়েও তা প্রত্যাহার করেন। তবে আইনজীবী আদালতে আবেদন জানিয়ে বলেন, সঞ্জয় সুরেখা অসুস্থ। তিনি যেন নির্দিষ্ট ওষুধ পান। তাঁকে যেন বাড়ির খাবার খেতে দেওয়া হয়। ইডির দাবি, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ব্যাঙ্ক প্রতারণা করা হয়। কয়েক হাজার টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগে সোমবার সকাল থেকেই কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার অন্তত বারোটি জায়গায় ইডি তল্লাশি চালায়। এর মধ্যে গড়িয়াহাটের ম্যান্ডেভিলা গার্ডেনে সুরেকা পরিবারের বাড়িতে তল্লাশির উপর গুরুত্ব দেন ইডি আধিকারিকরা। এ ছাড়াও দমদম, বেলুড়, নিউ আলিপুর, হুগলির বৈদ্যবাটি, বড়জোড়া, বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। সুরেকা-সহ ওই ইস্পাত সংস্থার চারজন কর্তার বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালায়।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, সুরেকাদের বাড়ির আলমারি-সহ বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেওয়া সাড়ে চার কোটি টাকার সোনার গয়না উদ্ধার করেন আধিকারিকরা। একই সঙ্গে সঞ্জয় সুরেকা ও তাঁর পরিবারের লোকেদেরও জেরা করা হয়। জেরার মুখে পড়েন সুরেকাদের গাড়ির চালক, পরিচারক-সহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী, যাঁদের শেল কোম্পানি বা ভুয়া সংস্থার ডিরেক্টর করা হয়েছিল। ইডির জেরার মুখে তাঁরা স্বীকার করেন যে, তাঁরা যে সংস্থার ডিরেক্টর, সেই ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না। তাঁরা শুধু সঞ্জয় সুরেকার নির্দেশ অনুযায়ী সই করে দিতেন। সেই সূত্র ধরেই তল্লাশি চালিয়ে আটটি বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের গাড়ি উদ্ধার করা হয়, যেগুলির দাম কয়েক কোটি টাকা বলে দাবি ইডির।
এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্য়ে সংস্থা অবলুপ্ত করে ব্যাঙ্ক প্রতারণা করা হয়। সঞ্জয় সুরেকা ছাড়াও সংস্থার অন্য ডিরেক্টর ছিলেন তাঁর পরিবারের দুই সদস্য। তল্লাশিতে সোনা ও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একশোটির উপর শেল কোম্পানি বা ভুয়া সংস্থার সন্ধান মিলেছে। সেগুলির ডিরেক্টর সুরেকাদেরই কর্মচারী। ওই শেল কোম্পানিগুলির মাধ্যমেই কয়েক হাজার কোটি টাকা সরানো হয়েছে। ইডি তদন্ত করে ৪০০টির উপর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে। ইডির দাবি, তল্লাশি করে ওই অ্যাকাউন্টগুলির বহু নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর ইডি অভিযুক্ত শিল্পপতিকে জেরা করছে। তাঁকে জেরার ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।