সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘ভবিষ্যতের ভূত’ সিনেমা প্রদর্শন নিয়ে একসময় বিদ্বজ্জনদের পাশাপাশি প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষও (Sayoni Ghosh)। দু’বছর আগেই এই শাসক শিবিরের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গলা তুলেছিলেন সায়নী। আজ সেই সায়নীর তৃণমূলে যোগ নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্নই তুলেছেন।
কেন তৃণমূলে যোগ দিলেন সায়নী? ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে তিনি বলেন, “আজ সমাজের কঠিন সময়। বাংলার বুকে বিজেপিকে যদি কেউ আটকাতে পারে, তা হলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। তিনি একজন যথার্থ লিডার। দু’ বছর আগে আমি যখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলাম, তখন রাজ্যে সহিষ্ণুতা ছিল। যেটা এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাংলার মেয়েদের কাছে এখন কঠিন সময়। যাঁরা সোনার বাংলা তৈরি করে দেবে বলে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তাঁরাই মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।”
[আরও পড়ুন: তৃণমূলে তারকা সমাবেশ, একই মঞ্চে শাসক শিবিরে যোগ সায়নী ঘোষ, রাজ চক্রবর্তী, মনোজ তিওয়ারির]
এরপরেই তৃণমূল ছেড়ে অনেকের গেরুয়া শিবিরে যোগদান প্রসঙ্গে বলেছেন, ” এতদিন যাঁরা দলের মধ্যে থেকে সবরকম সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন আজ তাঁরাই দল ছেড়ে যাচ্ছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা বলে তাঁকে কর্ণার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁকে এক ঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কেউ গেলে কেউ তো আসবেই।”
এরপরেই অভিনেতা যশ ও রুদ্রনীলের বিজেপি যাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ জানিয়েছেন, ” যাঁরা দলের মধ্যে থেকে এখন বলছেন কাজ করতে পারছেন না বা সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে চান, তাঁদের এই কথা বলার আগে দু’ বার ভাবা উচিত ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে এঁরা সকলেই এতদিন কাজ করে এসেছেন। তাই সেখানে মাফিয়ারাজ চলছে বললে ভুল হবে। যাঁরা কাজ জানেন, তাঁরা কাজ পাবেন। সেখানে রাজনীতির রং টেনে আনার কোনও মানে হয় না। ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে লবি রয়েছে, তবে সেই লবি আলাদা। কোন পরিচালক কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে নেবেন তা নিয়ে লবি হয়। বা অভিনেতাদের পছন্দ মতো অভিনেত্রী বেছে নেওয়া হয়। সেই বিষয়টা আলাদা। কিন্তু কাজ করা যাচ্ছে না, সেটা একদম ভুল কথা।”
সায়নী ঘোষের তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও। বামপন্থীরা ‘বিক্রি’ হয় না বলে সায়নীর প্রতি তোপ দেগেছিলেন শ্রীলেখা। সেই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সায়নী বলেছেন, ” শ্রীলেখাদি আমার সিনিয়র। তাঁর সঙ্গে বহুদিনের সম্পর্ক। ওঁর ব্যক্তিগত মতামত সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু কেউ যদি আমাকে বামপন্থী ভেবে থাকেন, ভাবতেই পারেন। আমি কিন্তু কোনও দিন বামেদের সভা, মিটিং-মিছিলে যাইনি। বাম-মনস্কদের আমি শ্রদ্ধা করি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে। কিন্তু বিরোধিতা করতে হবে বলে, বিরোধিতা করতে নেই।”
[আরও পড়ুন: কী এমন টোপ দিল? তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে সায়নীকে বিঁধলেন শ্রীলেখা]
এরপরেই তিনি জানিয়েছেন, “তৃণমূলে যোগদানের মূল লক্ষ্য হল, বিজেপিকে এ রাজ্যে আসা থেকে আটকানো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে আবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। নারী নিরাপত্তার দিক থেকে আমার রাজ্য যেন উত্তরপ্রদেশ বা বিহার না হয়ে যায়, তা সুনিশ্চিত করা। পাশাপাশি বাংলার সার্বিক উন্নয়নে নজর দেওয়া, সংস্কৃতি রক্ষা করা, ভেদাভেদের রাজনীতিতে না গিয়ে সম্প্রীতির বার্তা বহন করা।”
প্রসঙ্গত, বুধবার হুগলির সভা থেকে ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (Sayoni Ghosh)। সেই তালিকায় রয়েছেন, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী মানালি দে, জুন মালিয়া, অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিনেত্রী অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ও।