সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবনে চলার পথে যখনই জোর হোঁচট খেয়েছেন, তখনই ছেলের হাতটা শক্ত করে ধরেছেন মা। সমস্ত প্রতিকূলতাকে হারিয়ে যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, সেই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন তিনিই। বাঁ-হাতে তাই মায়ের ছবি খোদাই করে রেখেছেন তিনি। বলে দিচ্ছেন, সাফল্যের সব কৃতিত্ব মায়েরই। তিনি লাল-হলুদের সাইড ব্যাক হীরা মণ্ডল। চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে যিনি ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন।
বছর তিনেক আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের হয়ে আই লিগে খেলা। কিন্তু সেবার তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। তবে এবার নতুন স্বপ্ন চোখে নিয়ে এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) হয়ে আইএসএলে মাঠে নেমেছেন বঙ্গতনয় হীরা মণ্ডল। জোড়া হারের হতাশা কাটিয়ে শনিবার চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ড্র করে এসসি ইস্টবেঙ্গল। আর সেই ম্যাচে নজরকাড়া পারফর্ম করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান হীরা (Hira Mondal)। খেলা শেষে বলে দেন, এই সাফল্য নিজের মাকেই উৎসর্গ করতে চান তিনি। আবেগের সুরে হীরা বললেন, “মায়ের ভালবাসা, আশীর্বাদ না থাকলে এতদূর পৌঁছতে পারতাম না। এই যে হাতে মায়ের ট্যাটু। সব কৃতিত্বটাই মায়ের।”
[আরও পড়ুন: ওয়াংখেড়েতে ইতিহাস, তৃতীয় বোলার হিসাবে এক ইনিংসে ১০ উইকেট অ্যাজাজ প্যাটেলের]
আট বছর আগে বাবা অশোক মণ্ডলকে হারিয়েছিলেন হীরা। তখন থেকে ছেলেকে বড় করার সব দায়িত্ব এসে পড়ে মা বাসন্তী মণ্ডলের কাঁধে। সংসারের অভাব-অনটন সত্ত্বেও ফুটবল অন্তপ্রাণ দুই ছেলের ইচ্ছাপূরণ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে হীরা পুণেতে যান সেনায় ট্রায়ালের জন্য। কিন্তু উচ্চতার জন্য শেষমেশ বাদ পড়েন। তখনই হাতে মায়ের ছবি ট্যাটু করিয়েছিলেন। বিশ্বাস করেন, প্রতি পদে মা পাশে না থাকলে এতদূর পৌঁছনো সম্ভবই হত না।
হীরার উঠে আসার রাস্তাটা মোটেও পাপরি বিছানো ছিল না। বারবার ব্রাত্য হয়েও ফিনিক্স পাখির মতোই ফিরে এসেছেন। পিয়ারলেসের জার্সিতে খেলে নজর কেড়েছিলেন। তাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে সই করিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তখন অবশ্য লাল-হলুদের রিমোট কন্ট্রোল ছিল স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রো মেনেন্ডেজের হাতে। ইস্টবেঙ্গলে সই করেও সেবার অবশ্য স্প্যানিশ কোচের কাছে অনুশীলন করা হয়নি বৈদ্যবাটির ফুটবলারের। কর্তারা বলেছিলেন, দার্জিলিং গোল্ড কাপে নিজেকে প্রমাণ করলে তবেই মূল দলে সুযোগ দেওয়া হবে। সেখানে নিজেকে প্রমাণ করলেও লাল-হলুদ জার্সি পরে খেলা আর হয়নি।
ইস্টবেঙ্গল থেকে উপেক্ষিত হওয়ার পর মোহনবাগানেও খেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল হীরার। কিন্তু নিট ফল হয় সেই শূন্য। হীরার নতুন ঠিকানা হয় মহামেডান স্পোর্টিং। সাদা-কালো শিবিরের হয়ে আই লিগে খেলে নজর কাড়েন। তারপরই এসসি ইস্টবেঙ্গলে নিজের নতুন জার্সি শুরু করেন হীরা। মায়ের আশীর্বাদ না থাকলে কী এভাবেও ফিরে আসা যায়!