সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ সেরে নেন এ গাঁয়ের ষাটোর্ধ্ব মহিলারা। বেলা বাড়লেই শুরু হয় তাড়াহুড়ো। স্কুলে যেতে হবে যে! দুপুর ২টো থেকে ৪টে স্কুল টাইম। ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুঁতে না ছুঁতেই উজ্জ্বল গোলাপী শাড়ি পরে হাতে বই, স্লেট, চক নিয়ে দল বেধে স্কুলের পথে চলে ‘বুড়ি’র দল। সোম থেকে শনি এমন ছবি দেখতে পাওয়া যায় মহারাষ্ট্রের ফাগনেতে।
পড়াশোনার কোনও বয়স নেই। ছোট থেকেই এমন কথা শুনে এসেছি। কিন্তু বাস্তবে এমন নজির বড় কম। ফাগনে প্রাথমিকস্কুলের শিক্ষক যোগেন্দ্র ভাংগার অবশ্য তা করে দেখিয়েছেন। একবার থানের ফাগনে গ্রামে এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন এই শিক্ষক। সেখানে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ চলছিল। গোল হয়ে বসেছিলেন গ্রামের বয়স্ক মহিলারা। আর মাঝখানে একজন বসে তা পড়ে শোনাচ্ছিলেন। সেদিনই মাস্টারমশাইয়ের কাছে নিজেদের মনের কথাটা পেড়েছিলেন ওই বয়স্ক মহিলারা-“আমরাও যদি পড়াশোনা জানতাম, নিজেরাই এসব বই পড়তে পারতাম।” কথাটা বিঁধেছিল ভাংগারের মনে।
এরপরই ‘আজিবৈচি শালা’র পথচলা শুরু। ভাংগারে যে স্কুলে পড়ান, সেই স্কুল চত্বরেই চলে ‘আজিবৈচি শালা’। ছোট ছোট পড়ুযারা যেন প্রবীণ পড়ুযাদের সম্মান করে, সহযোগিতা করে তাই স্কুলচত্বরেই প্রবীণদের স্কুলটিও খোলেন ভাংগর স্যর। ‘আজিবৈচি শালা’র পড়ুয়ারা কেউ ৬০ বছর বয়সী। কারও বয়স আরও বেশি। বছরখানেক হল এখানে পড়তে আসছেন তাঁরা। বর্ণ পরিচয় হয়ে গিয়েছে সকলের। নিজের নামও সই করতে পারেন সকলে।
এটাই তো চেয়েছিলেন চুলের ভাঁজে পাক ধরা, গালের চামড়া ঝুলে যাওয়া মহিলাগুলো। ঘরকন্যার পাশাপাশি নিজেদের যেন একটা আলাদা জায়গা তৈরি হয়। নিজের পরিচিতি তৈরি হয়। ভাংগার স্যরের হাত ধরে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গত বছর নারী দিবসে ২৭ জনকে নিয়ে এই স্কুল শুরু হয়েছিল। এখন তা বহরে বেড়েছে। ‘আজিবৈচি শালা’র অধিকাংশ পড়ুযারই দৃষ্টিশক্তি এখন ঝাপসা হচ্ছে। বয়স বাড়ছে যে! তবু ঝাপসা চোখেই রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এই ঠাকুমার দল।
এবার কোম্পানির থেকে উপহার নিলেই দিতে হবে কর!
The post এই গ্রামে স্কুলে যান ষাটোর্ধ্ব মহিলারাও appeared first on Sangbad Pratidin.