shono
Advertisement

Climate Change: জলবায়ু পরিবর্তনে কতটা বিপন্ন সুন্দরবন, কী বদল উত্তরবঙ্গে? অশনি সংকেত IPCC’র বিজ্ঞানীর

যথাযথ পরিকল্পনাই একমাত্র বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে, সাবধানবাণী বিজ্ঞানীর।
Posted: 04:18 PM Mar 10, 2022Updated: 04:18 PM Mar 10, 2022

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিপদের দিন আর বেশি দূরে নেই। Intergovernmental Panel on Climate Change বা IPCC-র ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে অন্তত তেমনই ইঙ্গিত। ভারত জুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে অশনি সংকেত দেওয়া হয়েছে তাতে। সাড়ে তিন হাজার পৃষ্ঠার বেশি এই রিপোর্টের কলকাতা সুন্দরবন (Sunderbans) এবং উত্তরবঙ্গ (North Bengal) নিয়ে যে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে, তা বিশদে ব্যাখ্যা দিলেন জলবায়ু বিজ্ঞানী ডঃ অঞ্জল প্রকাশ। বঙ্গবাসী আগামী দিনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন, সেই বিষয়গুলি সহজভাবে তুলে ধরলেন তিনি।

Advertisement

আমফানের প্রভাব
১৯৯৯ সালের পর আমফান (Amphan) ছিল বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া প্রথম সুপার সাইক্লোন। গত ১০০ বছরে পশ্চিমবঙ্গের উপর আছড়ে পড়া সবচেয়ে শক্তিশালী শহরের নাম আমফান। প্রবল শক্তিশালী হওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গের উপর আমফান যতটা ক্ষয়ক্ষতি পারত, তার চেয়ে হয়েছিল কিছুটা কম। তার কারণ সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) এই ঝড়ের গতি অনেকটা কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু তার মূল্য চোকাতে হয়েছে সুন্দরবনকে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়, প্রায় ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হয়েছিল আমফানের জন্য। একই সঙ্গে কলকাতার সবুজের বংশ ধ্বংস হয়ে যায় আমফানের প্রভাবে।

আনুমানিক ১০,২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল আমফানের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা জুড়ে প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ ভিটেমাটি হারা হয়েছিল। পাশাপাশি প্রশাসনের তরফ থেকে ঝড়ের আগে 8 লক্ষ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমফানের মতো সুপার সাইক্লোন তৈরি হওয়ার পিছনে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে সেই সময় COVID-19 এর জেরে লকডাউন চলতে থাকায় অ্যারোসলের বৃদ্ধি ও সমুদ্রের উপর মেঘ জমতে থাকায় প্রধান কারণ।

বহুমুখী বিপদের আশঙ্কা

বহুমুখী বিপদ বলতে বিজ্ঞানীদের মত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমিধস, এবং আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কলকাতাসহ টোকিও, ওসাকা, করাচি, ম্যানিলা, তিয়ানজিন এবং জাকার্তার মত শহর এই ছ’টি বিপদের মুখোমুখি হতে চলেছে। এইসব মেগাসিটি গুলোতে বর্তমানে সম্মিলিতভাবে 143 মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে। এইসব নাগরিকরা ভবিষ্যতে ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে চলেছেন।

[আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে কার্যত নিশ্চিহ্ন কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশে মুখ পোড়ালেন প্রিয়াঙ্কাও]

তাপমাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা

IPCC-এর রিপোর্টে ইঙ্গিত, কলকাতায় প্রতি বছর গড়ে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বাড়বে।

ব্যাপক খরা পরিস্থিতির সম্ভাবনা

শহরাঞ্চলে মাটির তলার জলের পরিমাণ (Dry land) দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিপোর্টে ২০০০ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার বহু শহরে Dry land ব্যাপক হারে বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে উপমহাদেশের কলকাতাসহ আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মেগাসিটি রয়েছে, সেগুলি হল দিল্লি এবং করাছি। রিপোর্টে বলা হয়েছে ৩ লক্ষের বেশি বসবাস করে এরকম ৩৩০ টি শহরে সব মিলিয়ে ৪১১ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছেন।

বন্যার কবলে পড়তে চলেছে বহু মহানগর

IPCC-এর রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর বৃহত্তম ২০টি মহানগর ব্যাপকভাবে বন্যার (Flood) প্রভাব পড়তে। এই ২০টি শহরের মধ্যে ১৩ টি এশিয়া (Asia)মহাদেশে। এরমধ্যে নটি শহর এরকম রয়েছে যেগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এই ৯ শহরের তালিকায় রয়েছে – কলকাতা, গুয়াংজু, তিয়ানজিন, হো চি মিন সিটি, জাকার্তা, ঝানজিয়াং, ব্যাংকক জিয়ামেন এবং নাগোয়া।

বাড়তে পারে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা

রিপোর্ট বলছে, বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আমফানের মত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের পুনরায় মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলির-সহ কলকাতার একই রকম বিপদ সংকেত রয়েছে মুম্বই মহানগরীর জন্যে।

সুন্দরবনের উপর প্রভাব

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের নিচু অঞ্চল এবং ছোট ছোট দ্বীপতে লবণাক্ত সামুদ্রিক জলের প্রবেশ করবে বলে মনে করা হয়েছে IPCC-এর রিপোর্টে। ফলে সুন্দরবনের বড় অংশের বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর জেরে সুন্দরবন জুড়ে বর্তমান অর্থনীতি বা মানুষ যেসব উপায় নিজেদের জীবন-জীবিকা নির্বাহিত করে থাকেন সেগুলি ধীরে ধীরে অনুৎপাদনশীল হয়ে উঠবে। ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে বলে রিপোর্টে মনে করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের উপর প্রভাব

দার্জিলিং জেলার বিভিন্ন অংশে বায়োলজিক্যাল বহু পরিবর্তন বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন। মনে করা হচ্ছে, এর কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণ। হিমবাহ অধিক মাত্রায় গলার ফলে উত্তরবঙ্গের নদীগুলোতেও প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে এর প্রভাব ভবিষ্যতে মারাত্মক হতে পারে।

কলকাতায় জলবায়ুর প্রভাব

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কলকাতার মত শহরগুলিতে কিভাবে বারবার প্রভাবিত হচ্ছে তার ওপর এবারের IPCC-এর রিপোর্টে বেশি করে জোর দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার (Kolkata) মত শহরগুলিতে উষ্ণতা, বিশেষ করে আর্দ্রতার প্রভাব আগামী দিনে আরও বেশি করে অনুভূত হবে। একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে, যার প্রভাব মহানগরে ব্যাপকভাবে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: নৌকাবিহারে বিপত্তি! মায়াপুর ইসকনে বিদেশিনী-সহ ২ ভক্তের দেহ উদ্ধার]

উত্তরবঙ্গ এবং সুন্দরবনের জলবায়ুর কীরকম প্রভাব পড়েছে

IPCC রিপোর্টে হিমালয় হিমাবাহ গলার প্রভাব উত্তরবঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত হিমবাহ গলার ফলে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে জলের চরিত্র পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উত্তরবঙ্গের ইকোসিস্টেম ব্যাপক ভাবে বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনের ব-দ্বীপ অঞ্চল গুলির পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল। খুব তাড়াতাড়ি সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন।

কী ধরনের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন

রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) অত্যন্ত জটিল সন্ধিক্ষণের দাঁড়িয়ে রয়েছে। আগামী দশ-পনেরো বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, কলকাতা শহর জুড়ে সবুজ-নীল পরিকাঠামো তৈরি করায় জোর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। সবুজ পরিকাঠামো বলতে বোঝায় শহরজুড়ে সবুজায়ন। আর নীল পরিকাঠামো বলতে বোঝায় শহরজুড়ে জলাশয়, লেক, নদী সুরক্ষিত করা। যাতে শহরের জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষিত থাকতে পারে, তার দিকে জোর দেওয়া হল নীল-সবুজ পরিকাঠামো পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সহ অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য নতুন পরিকাঠামোগুলিকে জলবায়ুর আইনের মাপকাঠিগুলো সঠিকভাবে মানা হয়েছে কিনা দেখেই ছাড় দেওয়া উচিত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement