সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ কিংবা ইনার কোর (Inner Core) যেন অপরিসীম বিস্ময়ের ভাণ্ডার। সবসময়েই তা বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের ভাবিয়েছে। সবচেয়ে তপ্ত এই ভাগটি। লোহা আর নিকেলে পরিপূর্ণ অভ্যন্তর ভাগটিও কিন্তু ঘূর্ণায়মান (Spinning)। কিন্তু চিনের পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা এই ঘূর্ণন নিয়েই বিস্ময়কর তথ্য দিল। তাঁদের নয়া গবেষণা অনুযায়ী, পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের গতি ধীরে ধীরে কমছে। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণনের দিক বদলাচ্ছে। উলটোদিকে ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবী!
আমাদের গ্রহের কেন্দ্রভাগের এই আচমকা বদলে ফেলা ঘূর্ণনে পৃথিবীর অন্যান্য কী পরিবর্তন হবে, তা নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু হয়েছে। এর আগে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর বহির্ভাগের চেয়ে ইনার কোর অর্থাৎ অভ্যন্তর ভাগের ঘূর্ণন গতি বেশি। কারণ হিসেবে মহাকর্ষ বল ও পৃথিবীর তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র (Electro Magnetic Field) ও তার প্রভাবের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এবারের গবেষণায় বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ উলটো কথা বলছে। দেখা যাচ্ছে, অভ্যন্তর ভাগের গতি ক্রমশ কমছে। তার গতিপথও বিপরীত দিকে। আর এভাবে উলটোপথে ঘুরলে আমরা হয়ত ২০০৯ সালে পৌঁছে যাব!
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে ঘর ওয়াপসি! অখিল গিরির উপস্থিতিতে তৃণমূলে ফিরলেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ রণজিৎ]
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী ই ইয়াং ও জিয়াডং সং নিজেদের গবেষণা নিয়ে নেচার জিওসায়েন্স (Nature GeoScience) পত্রিকায় লিখেছেন, ”আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এই মুহূর্তে থমকে রয়েছে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা হয়ত উলটোদিকে ঘুরতে পারে।” আসলে এই ইনার কোরের গতির সবটুকু ঠিকমতো জানা যায় না। ১৯৬০-৭০ সাল থেকে বিভিন্ন তথ্য, পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে সেসব বিশ্লেষণ করে দুই বিজ্ঞানী ইয়াং ও সং জানিয়েছেন, আপাতভাবে এই ভাগের ঘূর্ণন গতি একইরকম বলে মনে হলেও, আসলে তা নয়। খুব ছোট হারে এই গতির বদল হয়। অন্তত ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত তেমনটাই হয়েছে। তারও আগে কেমন গতিবিধি ছিল, তা জানা যায় না।
[আরও পড়ুন: বিবিসির তথ্যচিত্রই প্রথম নয়, এর আগেও সরকারের রোষে পড়েছে বহু ডকুমেন্টারি, রইল তালিকা]
আর এখানেই তাঁদের সংশয়, কখনও হয়ত পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ উলটো দিকেও ঘুরত। তথ্য বলছেন, প্রতি ৭ দশক পরপর অভ্যন্তর ভাগের ঘূর্ণনের দিকবদল হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, আজকের সময় হয়ত ফের উলটোদিকে ঘুরছে ইনার কোর। এসব শুনে কেউ কেউ চিন্তিত হতে পারেন, তাহলে এবার কী হবে? তবে কি শেষের সেদিন আসন্ন? তাই কি এমন উলটপুরাণ? না, বিজ্ঞানীরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁদের আশ্বাস, এই মুহূর্তে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের এই গতি আর বাহ্যিক গতি প্রায় সমান। আর তাই উলটো ঘূর্ণন আমরা টেরই পাচ্ছি না। ফলে তা নিয়ে চিন্তা করারও কিছু নেই।