গৌতম ব্রহ্ম: পুকুর কাটা, বাঁধ তৈরির সঙ্গে জুড়ল ঔষধি চাষ। একশো দিনের কাজে এবার ঢুকে পড়ল আয়ুর্বেদ! অশোক, অর্জুন, দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ, নিম, আমলকী, হরিতকী, বেল, চন্দন-সহ প্রায় পঞ্চান্নটি ভেষজ গাছ দেশজুড়ে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। এর জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। রাস্তার পাশে, নদী ও খালের ধারে বা উপকূলবর্তী এলাকার খাস জমিতে চলবে এই ভেষজ বনসৃজন, যা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায়।
সম্প্রতি জাতীয় ভেষজ পর্ষদ, আয়ুশ মন্ত্রক ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে ভেষজ বনসৃজনকে ‘এমজি নারেগা’ ( MGNREGA) অর্থাৎ একশো দিনের কাজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ে। জাতীয় ভেষজ পর্ষদের প্রধান ডা. এল এন শাস্ত্রী ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে জানান, “ভেষজ গাছের সঙ্গে জীবন ও জীবিকা দু’টোই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওষুধের অন্যতম কাঁচামাল এই ভেষজ উদ্ভিদ। এবার সৌন্দর্যায়ন ও বনসৃজনের অঙ্গ হিসাবে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ভেষজ গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” আর এ জন্য চারা, বীজ, সার ও গাছ পরিচর্যার প্রশিক্ষণ দেবে পর্ষদ। ডা. শাস্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, এই সিদ্ধান্ত আয়ুর্বেদের প্রতি সাধারণ মানুষের ভালবাসা ও নির্ভরশীলতাকে বাড়িয়ে তুলবে।
অশোক, দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ, অর্জুন, নিম, আমলকী, হরিতকী, অগ্নিমন্থ, বেল, বট (Banyan), অশ্বত্থ, পলাশ, শিরীষ, সুপারি, চন্দন, রক্তচন্দন, কুটজ, বকুল, কাঞ্চনের মতো প্রায় পঞ্চান্নটি গাছের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনটি জোনে ভাগ করে তাদের শ্রেণিবিন্যাস হয়েছে। জীবিকার উন্নতির লক্ষ্যে ব্যক্তিগত পরিসরে গাছগুলি লাগাতে চাইলেও প্রশাসনের তরফে চারা, বীজ, সার দিয়ে সাহায্য করা হবে। মিলবে আথির্ক সাহায্য।
[আরও পড়ুন: বাতাসে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস! চাঞ্চল্যকর দাবি মার্কিন গবেষকদের]
জাতীয় ভেষজ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, ঔষধি গাছ রোপণ ও পরিচর্যার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত কাঁচামাল বাজারজাত করতেও সহযোগিতা করা হবে। সরকারি জমিতে বেড়ে ওঠা গাছ থেকে উপার্জিত অর্থ সরকারি কোষাগারে যাবে। উদ্যানপালন বিভাগ, বন বিভাগ, কৃষি বিভাগ ও আয়ুশ বিভাগ জোট বেঁধে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে বলে জানিয়েছেন ডা. শাস্ত্রী। তাঁর দাবি, প্রকল্পের আশীর্বাদে আদিবাসীদের আর্থিক হাল ফিরবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে খুশি পশ্চিমবঙ্গের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার তথা তুলসি গ্রামের রূপকার ডা. বাসবকান্তি দিন্ডার প্রতিক্রিয়া, “সময়োপযোগী প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে সাধারণ মানুষকে ভেষজ গাছের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার বা অর্থনীতির সঙ্গে তার যোগ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন করার পরে গাছ লাগালে তবেই তা রক্ষার তাগিদ আসবে।”
প্রসঙ্গত, প্রায় আড়াই বছর আগে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য ও বিকল্প আয়ের কথা মাথায় রেখে কোচবিহারের ভেলাপেটা গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে পরিকল্পনা করে ভেষজ গাছ লাগানো শুরু করেছিলেন বাসববাবু। জন্ম নিয়েছিল তুলসি গ্রাম। যা পরবর্তীকালে জাতীয় স্তরে উচ্চ প্রশংসিত হয়। বাংলায় প্রায় ১৯টি আয়ুশ গ্রাম তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এবার গোটা দেশকেই আয়ুশ গ্রামে পরিণত করার লক্ষ্যে পা ফেলল কেন্দ্র।