সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শৈশবে অনেকের মনেই নানারকম প্রশ্নের উদ্রেক হয়। তার মধ্যে একটা, পৃথিবীর মতো আর কোনও গ্রহ আছে কি? অনেকে আবার জানতে চায়, পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ কোনটি? কারণ, হাজার আলোকবর্ষ দূরের গ্রহকে তো আর প্রতিবেশী বলা যায় না। চিলির (Chile) মহাকাশবিজ্ঞানীরা এবার জানিয়েছেন, এত বছর পর পৃথিবীর এক প্রতিবেশীকে পাওয়া গিয়েছে। এবং সাদার্ন অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল রিসার্চ টেলিস্কোপের মাধ্যমে ট্রোজান গ্রহাণুকে দেখা গিয়েছে যা পৃথিবীর পাশাপাশি কক্ষপথে থাকবে আগামী চার হাজার বছর।
এর আগে বার্সালোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও এই ধরণে গ্রহাণুর (Asteroids) উপর নজর রাখতে শুরু করেছিল। এমনকী সৌরমণ্ডলের যে মুলুকে এর আগে আর ‘পা’ পড়েনি সভ্যতার, নাসার মহাকাশযান সেখানেও পৌঁছেছে গত অক্টোবর মাসে। কলকাতার জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ড. দেবীপ্রসাদ দুয়ারি জানাচ্ছেন, সৌরমণ্ডলের বৃহস্পতি ও মঙ্গলের কক্ষপথে এই ট্রোজান গ্রহাণুদের (Trojan Asteroids)) দেখা যায়।
[আরও পড়ুন: ১০ কোটি বছর ধরে একইরকম ভাবে ফুটে রয়েছে! ফুলের জীবাশ্ম দেখে বিস্মিত গবেষকরা]
এবার তা পৃথিবীর কক্ষপথে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, যা আগে শোনা যায়নি। এটা হয়তো সম্ভব হয়েছে, কোনও কোনও সময় সূর্যের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর কক্ষপথে এসে পড়ে। এবং এই গ্রহাণুদের অবস্থান এমন একটি অবস্থানে হয় যে, পৃথিবী এবং সূর্যের অভিকর্ষজ আকর্ষণ সমান হওয়ার ফলে পৃথিবীর নিরিখে এরা স্থির থাকে। সেই কারণেই এই ট্রোজান গ্রহাণু এত হাজার বছর এক জায়গায় অবস্থান করতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীকূল।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা পৃথিবীর এই প্রতিবেশীর আয়তন সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। এই গ্রহাণুর আয়তন ১.২ কিলোমিটার গুণিতক ৪০০ মিটার। এত বড় আয়তন হওয়ার কারণেই পৃথিবীর কক্ষপথে এত বছর স্থির থাকতে পারবে গ্রহাণুটি। নাহলে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হতে পারে। এই প্রসঙ্গে জানা প্রয়োজন, আপাতত মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থারা সৌরমণ্ডল তৈরি হওয়ার সময় সোনা, প্ল্যাটিনাম, লোহা, নিকেল, কোবাল্টের মতো কী কী মূল্যবান মৌল দিয়ে সেগুলি গড়ে উঠেছিল, আর সেই সব মূল্যবান অথচ অতি প্রয়োজনীয় মৌলগুলি ট্রোজান গ্রহাণুগুলিতে কী পরিমাণে রয়েছে, তা জরিপ করতে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন।
[আরও পড়ুন: আকাশজুড়ে বাজের খেলা! ৭৭০ কিমি দীর্ঘ বজ্রের ঝলসানির বিশ্বরেকর্ড আমেরিকায়]
এখনও অবধি মাত্র দুটি গ্রহাণুতেই মহাকাশযান পাঠানো গিয়েছে। একটির নাম রিওগু, অন্যটির নাম বেনো। এবার পৃথিবীর প্রতিবেশী নিয়ে বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। গ্রহাণুতে মহাকাশযান পাঠানো হলে সৌরমণ্ডল তৈরির আদি ইতিহাস জানতে সহায়ক হবে, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ যখন দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার মুখে তখন ওই সব গ্রহাণু থেকে নানা ধরনের মূল্যবান মৌল নিয়ে আসা সম্ভব কি না, তা কী পরিমাণে পৃথিবীতে আনা সম্ভব হতে পারে, তা জানা যাবে।