ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অ্যালঝাইমার (Alzheimer’s disease) আর পারকিনসনের (Parkinson’s disease) মতো স্নায়ুরোগ নিরাময়ের জন্য বিগত কয়েক দশক গবেষণা করে পেটেন্ট নিয়েছিলেন জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোলোমন এইচ স্নাইডার। সেজন্য ‘নকআউট অ্যান্ড ট্রান্সজেনিক মাইস’ নামে এক বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরও অভিযোজন করিয়েছিলেন তিনি। গোটা বিশ্ব সে কারণে চেনে তাঁকে। বয়স ৮০ পেরিয়ে যাওয়ায় এখন আর বসে বসে সে সব নাড়াচাড়া করা তঁার ধাতে সয় না। চেয়েছিলেন গবেষণার কাজেই সে সব দান করে দেবেন। এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়!
অধ্যাপকের ইচ্ছামতোই মার্কিন মুলুকের বাল্টিমোরের সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অমন ৪৩ জোড়া ইঁদুর নিয়ে এল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উদ্দেশ্য, অ্যালঝাইমার আর পারকিনসনের মতো রোগ নিরাময়ের গবেষণা। কল্যাণীতে রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন পর্ষদের নিজস্ব গবেষণাগারে সে সবের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে।
[আরও পড়ুন: টিকিট বিতর্কের মাঝেই আজ ডার্বি, মোহনবাগানের লক্ষ্য ৩ পয়েন্ট, ইস্টবেঙ্গলের বাজি ক্লেটন]
কী এমন বিশেষত্ব এই ইঁদুরগুলোর (Rat)? এই ইঁদুরগুলোর শরীর থেকে এমন একটি জিন বের করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক যে ধরনের জিনের কারণে মানুষের শরীরে পারকিনসন বা অ্যালঝাইমারের মতো স্নায়ুরোগ বাসা বাঁধে। এই ইঁদুরগুলোর শরীরে সেই জিন নেই।
সেক্ষেত্রে স্নায়ুরোগ নিরাময়ে কোনও ওষুধ বানাতে হলে এই ইঁদুরগুলোর উপর তার ব্যবহারিক প্রয়োগ করা যাবে। তাতে এদের কোনও শারীরিক ক্ষতি হবে না। এই ধরনের গবেষণা রাজে্য ঠিকমতো শুরু হলে এই দেশে এই বিশেষ ইঁদুরের উপর ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে এমন গবেষণা হবে প্রথম। সাফল্য এলে স্নায়ুরোগের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে খুলে যাবে দিগন্ত। বৃদ্ধ অধ্যাপক পইপই করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যত ইচ্ছা গবেষণা করো। কিন্তু এসব একদম বিক্রি করা যাবে না। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগেই কল্যাণীর ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের গবেষণাগারে এনে রাখা হয়েছে। আপাতত সেগুলো কোয়ারানটাইনে আছে।
[আরও পড়ুন: জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জেলেনস্কি, ঘুরিয়ে কি ভারতকেই বার্তা?]
ঠিক হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বোস ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এই ইঁদুরগুলির উপর অ্যালঝাইমার আর পারকিনসনের মতো রোগ নিরাময় নিয়ে গবেষণা করবে। দায়িত্বে থাকবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌস্তভ পান্ডা। রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন পর্ষদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরী কোনার জানাচ্ছেন, “শুধু এই রাজ্য নয়, জাতীয় স্তরে যে কেউ এই ধরনের গবেষণা কল্যাণীর এই সরকারি গবেষণাগারে এসে করতে পারবেন। তার জন্য ছাড়পত্র-সহ আবেদনও পাঠাবে রাজ্য।”