সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। সম্প্রতি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আতঙ্কিত সংখ্যালঘুরা। পুজো চলাকালীন সাম্প্রদায়িক শক্তি শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাতে পারে। এই প্রেক্ষিতে, দুর্গোৎসবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার আশ্বাস দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওয়াশিংটনে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা (Seikh Hasina)। সেই সাক্ষাতেই হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার বহাল রাখতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।” তাঁর আমলে বঙ্গবন্ধুর দেশে দুর্গাপুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। এছাড়াও গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য তাঁর সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে তারও পরিসংখ্যান বৈঠকে তুলে ধরেন হাসিনা। এই বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, শীতাংশুবিকাশ গুহ, রূপকুমার ভৌমিক, ড. দিলীপকুমার নাথ, শ্যামল চক্রবর্তী ও শুভ রায় অংশ নেন।
[আরও পড়ুন: কানাডা বিতর্কে ভারতের পাশে ‘বন্ধু’ বাংলাদেশ, কী বার্তা দিল ঢাকা?]
বৈঠক প্রসঙ্গে অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত জানান, “সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলেছেন।” ঐক্য পরিষদের অপর নেতা শীতাংশু গুহ বলেন, “আগামী দুর্গাপুজোয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন হাসিনা।”
এবিষয়ে ড. দিলীপ নাথ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশের দাবি জানিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন আমাদের আবেদনের প্রতি। রূপকুমার ভৌমিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, “বিএনপি-জামাতের অত্যাচারে অনেকেই দেশ ছেড়েছিলেন। তারা চেষ্টা করছেন পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে। একইসঙ্গে দেশে পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে।” এর আগে একই সংগঠনের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কে বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে স্মারকলিপি দেন নেতারা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে (Bangladesh) জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে দেশে অশান্তি ছড়াতে অপশক্তিগুলো বরাবরই ষড়যন্ত্র করে। এবারও তারা থেমে নেই। সম্প্রতি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অতীতেও দুর্গাপুজোর সময় কোরান শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিংসার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে মনে করা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আওয়ামি লিগের ভোটব্যাঙ্ক। বাংলাদেশের ইতিহাসও সেই কথা বলে। আওয়ামি লিগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকেন, নির্বিঘ্নে ও উৎসবের সঙ্গে ধর্মীয় আচার পালন করেন। কিন্তু সামনে দুর্গোৎসব ও নির্বাচন, তাই বরাবরের মতো ফের অশুভ শক্তির নজর পড়েছে আওয়ামি লিগের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। কারণ এই ভোটাররা অনেক আসনের জয়-পরাজয় পাল্টে দিতে পারেন। কারণ চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬.৬৫ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ১৩.৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১২.৯৮ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে ১১.৫ শতাংশ সনাতন ধর্মালম্বীর বসবাস। আর ঢাকা বিভাগে ৪.৯৭ শতাংশ ও রাজশাহী বিভাগে ৫.৮৫ শতাংশ। তাই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করতে পারলে সবচেয়ে লাভবান হবে আওয়ামি লিগ বিরোধী শক্তি বলে মত বিশ্লেষকদের।