দুলাল দে: মারাত্মক কিছু পট পরিবর্তন না হলে সামনের মরশুমে ইস্টবেঙ্গল কোচের হট সিট ছিনিয়ে নিতে পারেন সের্জিও লোবেরা। তবে মুম্বইয়ের হয়ে আইএসএল জয়ী এই প্রাক্তন কোচের নামের পাশে এই মুহূর্তে পাকাপাকি শিলমোহর লাগানোর জায়গা এখনও আসেনি। শনিবার ক্লাব তাঁবুতে ইমামির প্রতিনিধি এবং ক্লাব কর্তাদের মধ্যে কোচ নিয়ে প্রাথমিক বৈঠকের পর কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে চারটি নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাতে সের্জিও লোবেরার নামটিই এগিয়ে রয়েছে, যিনি এই মুহূর্তে চিনের ‘সিচুয়ান’ ক্লাবের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। কোনও কারণে যদি লোবেরাকে না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে লাল-হলুদ কর্তাদের দ্বিতীয় পছন্দ আন্তেনিও লোপেজ হাবাস। যিনি এই মুহূর্তে কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত নন।
এই মরশুমে কোচ থেকে ফুটবলার, যাবতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেই ক্লাব কর্তাদের সঙ্গী করে এগোতে চাইছেন ইমামি কর্তারা। এতে একটা বিষয়ের অন্তত নিষ্পত্তি হবে, মরশুম শেষের দিকে ইমামি বা ক্লাবের পক্ষ থেকে কেউই মন্তব্য করতে পারবেন না, কোচ বা ফুটবলারদের নির্বাচনের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। প্রথমদিন আলোচনায় আপাতত ঠিক হয়েছে, এমন কাউকে কোচ করা হোক, যিনি ইন্ডিয়ান সুপার লিগকে হাতের তালুর মতো চেনেন। সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কোচিং করিয়ে অতীতে সাফল্যও এনে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে শনিবার ক্লাব তাঁবুতে ক্লাব প্রতিনিধি এবং ইমামি কর্তাদের আলোচনায় প্রাথমিক ভাবে চারজন কোচের একটা তালিকা তৈরি হয়। লোবেরা, হাবাস ছাড়াও সেই তালিকায় আছেন এটিকের প্রাক্তন আইএসএল (ISL 2023) জয়ী কোচ মোলিনা। এবং বেঙ্গালুরুর স্পোর্টিং ডিরেক্টর রোকা।
মোলিনা এই মুহূর্তে কোনও দল কিংবা স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, ভারতীয় ফুটবলের কোচিংয়ে ফিরতে খুব একটা আগ্রহী নন। রোকাকেও বেঙ্গালুরু এফসির স্পোর্টিং ডিরেক্টরের পদ ছাড়িয়ে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) কোচের চেয়ারে বসানো প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা সের্জিও লোবেরা এবং আন্তেনিও লোপেজ হাবাসের কথাই বেশি আলোচনা করছেন লাল-হলুদ কর্তারা।
[আরও পড়ুন: বাবা হতে তান্ত্রিকের নির্দেশেই নরবলি! তিলজলায় শিশু খুন নিয়ে বিস্ফোরক দাবি ধৃতের]
শনিবার প্রাথমিক আলোচনায় একটা ব্যাপার ঠিক হয়েছে, সবার আগে কোচ নির্বাচন করা হবে। তারপর মূলত কোচের পরামর্শ মতোই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোন কোন ফুটবলারকে সামনের মরশুমের দলে রাখা হবে। আর তাতে কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে শনিবার যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, তাতে একটি ব্যাপারেও ঠিক করা হয়েছে, কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটো বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথমত দেখা হবে, কোচ দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলাতে কতটা সক্ষম। সঙ্গে ডিফেন্সিভ সংগঠনও কতটা পারদর্শী। কারণ, শেষ মরশুমে স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের দলকে ডিফেন্সের দোষে প্রচুর গোল খেতে হয়েছে। আর এই দিক থেকেই এগিয়ে হাবাসের থেকে। তবে সাফল্যর দিক থেকে লোবেরা এবং হাবাস একই সরল রেখায় রয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৯-২০ মরশুমে এটিকে-কে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন হাবাস। আবার সের্জিও লোবেরা একই মুম্বই সিটি এফসির হয়ে একবারই আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হলেও এফসি গোয়া এবং মুম্বইকে গ্রুপ লিগের শীর্ষে রেখে আইএসএলের ‘শিল্ড’ও জিতিয়েছেন। একই সঙ্গে সুপার কাপ জিতিয়েছেন গোয়াকে।
হাবাসের যাবতীয় কৃতিত্ব এটিকের হয়ে। কিন্তু লোবেরা আইএসএলে সাফল্য পেয়েছেন দুটো দলের হয়ে। শুরুতে এফসি গোয়া এবং পরে মুম্বইয়ের হয়ে। যে কারণে কোচের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সের্জিও লোবেরা। ঠিক পিছনেই হাবাস। তবে লাল-হলুদ কর্তাদের পছন্দে এগিয়ে থাকলেও লোবেরাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সামান্য হলেও আছে। এই মুহূর্তে চিনের দল ‘সিচুয়ান’-এর হয়ে কোচিংয়ে ব্যস্ত লোবেরো। হাবাস সেখানে গত দেড় বছর ধরে কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত নন। চিনের ক্লাব দলে কোচিং করালেও ইস্টবেঙ্গলে আসার জন্য লোবেরা আগ্রহী একটাই কারণে। সেখানে এখনও বায়োবাবলের মধ্যে থেকে কোচিং করাতে হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে বেশিদিন চিনে থাকতে চাইছেন না তিনি।
তবে শুধু এই কারণেই চিনের ক্লাব ছেড়ে প্রাক্তন আইএসএল জয়ী কোচ ইস্টবেঙ্গলে চলে আসবেন এরকমটাও ভাবার কোনও কারণ নেই। চিনের ক্লাবে যে বেতনটা তিনি পান, ইস্টবেঙ্গলকেও সেই বেতন দিতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য হাবাসের ক্ষেত্রেও। এই মুহূর্তে কোনও ক্লাবে যুক্ত না থাকলেও, তাঁর আর্থিক দাবি মেটালে তবেই ইস্টবেঙ্গলে আসার কথা ভাববেন তিনি। ফলে কোনও নামই এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে লাল-হলুদ কর্তারা ভীষণভাবে চেষ্টা করছেন, পুরো প্রক্রিয়াটা দিন পনেরোর মধ্যে শেষ করে ফেলতে। তাতে বাংলা নববর্ষের দিন ক্লাবের বারপুজোয় নতুন কোচের নাম ঘোষণার একটা সুযোগ থাকবে।
[আরও পড়ুন: ‘একই টেপ রেকর্ডার কেন বাজাচ্ছেন?’, এসপি সিনহার মামলায় ফের আদালতের রোষে CBI]
এদিকে, এফসি গোয়ার ফুটবলার আনোয়ার আলির সঙ্গে দীর্ঘ চুক্তি করে নিল মোহনবাগান ক্লাব। একটা সময় অনূর্ধ-১৭ জাতীয় দলের হয়ে দারুণ ফুটবল উপহার দিলেও, পরবর্তী ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যায় তাঁর ফুটবল খেলাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ফের ফুটবল খেলার অনুমতি পান তিনি। শেষ মরশুমেও এফসি গোয়ার হয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছেন এই ডিফেন্ডার। সেই কারণেই মরশুম শেষ হওয়ার আগেই আনোয়ার আলির সঙ্গে দীর্ঘ চুক্তি করে নিল মোহনবাগান।