নব্যেন্দু হাজরা: শহরে ট্রামলাইন থাকার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। যানজট হচ্ছে। তাই অব্যবহৃত এবং অপ্রয়োজনীয় ট্রামলাইন তুলে ফেলা হোক। ট্রাম চলাচল নিয়ে পরিবহণ দপ্তরকে সম্প্রতি এই মর্মে একটি চিঠি পাঠিয়েছে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট। কোন কোন রাস্তা থেকে এই লাইন তুলে দিতে হবে, তার একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, লাইন সরানো হলে বর্তমানে চলা তিনটি রুটের ট্রামও বন্ধ হয়ে যাবে। ঢংঢং করে ঘণ্টা বাজিয়ে চলা কলকাতার নস্টালজিয়ার চাকা যাবে থমকে। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতা পুলিশের এই চিঠি ঘিরে চাপানউতোর তৈরি হয়েছে ট্রাম কোম্পানি বা সিটিসিতে। যদিও পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “কোনওভাবেই ট্রাম পুরোপুরি তুলে দেওয়া হবে না। তবে যে লাইন দিয়ে ট্রাম চলে না বা ভবিষ্যতে চালানোর পরিকল্পনা নেই, সেই অব্যবহৃত লাইন তুলে দেওয়াই ভালো। কিছু রুটে অবশ্যই ট্রাম চলবে।”
[আরও পড়ুন: ‘কাজ করছে না কামারহাটি পুরসভা’, ইডি স্ক্যানারে থাকা পুরপ্রধানকে ‘ধমক’ সৌগতর]
বছরকয়েক আগেও আটটি রুটে ট্রাম চলত শহরে। কিন্তু মেট্রোর কাজের জন্য এবং ট্রাফিক পুলিশের আপত্তিতে বেশিরভাগ রুটই বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট-ধর্মতলা এবং শ্যামবাজার-ধর্মতলা, এই তিনটি রুটে ট্রাম চলেছে। কিন্তু সেই ট্রামরুটও বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে পরিবহণ দপ্তরকে চিঠি দিল কলকাতা পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ট্রামপ্রেমী সংগঠনের মধ্যে। তবে ঐতিহ্যশালী ট্রামকে সংরক্ষণের জন্য দুটি রুটে তা চালানো যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। রুটদুটি হল খিদিরপুর-এসপ্ল্যানেড এবং এসপ্ল্যানেড নোনাপুকুর। তবে এই দুই রুটে এখন ট্রাম চলে না। আমফানের পর থেকে বন্ধ খিদিরপুর-ধর্মতলা রুট। ফলে সেই রুট আদৌ চালু করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে খবর।
চলতি বছরেই ট্রামের দেড়শো বছর। কলকাতার ঐতিহ্য ট্রাম সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে, আদালত। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম বন্ধের এই চিঠি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দপ্তরে। চিঠিতে বলা হয়েছে, মূল রাস্তায়, ব্রিজে ট্রাম লাইন থাকার কারণে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। ট্রাম চলায় যানজট হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। আর তাই পথদুর্ঘটনা কমিয়ে শহরকে গতিময় করতে অব্যবহৃত ট্রাম লাইন তুলে ফেলতে হবে। চিঠিতে কালীঘাট ব্রিজ, রবীন্দ্র সরণি, বিধান সরণি, বেলগাছিয়া ব্রিজ, আর জি কর রোড, এপিসি রোড, এম জি রোড, শিয়ালদহ ফ্লাইওভার, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, ডিএইচ রোড, লেনিন রোড, উল্টোডাঙা মেইন রোড, সিআইটি রোড, মানিকতলা মেন রোড, আমাস্ট্রিট, গালিফ স্ট্রিটের উপর থাকা লাইন তুলে দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেক্ষেত্রে যে রুটে ট্রাম চলে, তা চলা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে পরিবহণ দপ্তরের তরফে এখনও এবিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের যেমন পথদুর্ঘটনা কমাতে হবে। তেমনই ট্রামকেও সংরক্ষণ করতে হবে। ট্রামকে কখনই তুলে দেওয়া হবে না। কোন কোন রুটে তা চলবে তার বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা আদালতকে জানাব। কলকাতা পুরসভা, ট্রাফিক, পরিবহণ দপ্তর সবাই মিলে বৈঠক করেই তা ঠিক হবে। তবে যে লাইন দিয়ে আর ট্রাম চলবে না, সেগুলো তুলে ফেলাই ভালো।’’ ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ যে কারণগুলো দেখিয়ে ট্রামবন্ধের কথা বলছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। এর কোনও প্রমাণ নেই।’’