কৃষ্ণকুমার দাস: তারুণ্যের টানে হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে নিজের ‘ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া’ দিয়ে ভিন রাজ্যের জেলে পচছে কলকাতার যুবকরা। মাঝেমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, অসম ও মেঘালয় পুলিশের টিম এসে ছোঁ মেরে কলকাতা থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়া ওই সব কমবয়সিদের।
শুধু তাই নয়, ভিনরাজ্যে গিয়ে দিনের পর দিন পড়ে থেকে অভিযুক্ত ছেলেদের জামিন করিয়ে ঘরে ফেরাতে গিয়ে ধারদেনা করে নিঃস্ব হচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও গরিব অভিভাবকরাও। গোটা ঘটনার পিছনে আন্তর্জাতিক চক্র থাকলেও কলকাতার একাধিক জোনে প্রতারণা চক্রের এজেন্টরা অত্যন্ত সক্রিয় বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরাও। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের গুন্ডাদমন এবং গোয়েন্দা দপ্তরের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।
[আরও পড়ুন: প্রভাব ফেলবে না পার্থ-অনুব্রতর গ্রেপ্তারি, এখন ভোট হলে ৩৫টি লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের]
আদিত্য দাস, রোহিত দাস। দু’জনেরই বয়স ২০/২২ বছর। গরিব বস্তিবাসী পরিবারের যুবক। আদিত্য লেক গার্ডেন্স সিআইটি কোয়ার্টার ও রোহিত মোল্লাহাটিতে থাকত। মাঝেমধ্যে তারুণ্যের টানে নেশা করে। আর এই নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েই এক বন্ধুর কথায় নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ দেয়। মাত্র দু’হাজার টাকার বিনিময়ে অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করতে দেওয়া মাত্রই ‘ক্লোন’ করে নিচ্ছে প্রতারকরা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গোটা অপরাধের পিছনে থাকা কিংপিনরা ঘাঁটি গেড়ে বিদেশে থাকলেও কলকাতায় ঘাপটি মেরে থাকা এজেন্টরা ঘুরছে প্রকাশ্যেই। যাঁরা কলকাতার অ্যাকাউন্টগুলি ব্যবহার করে ভিনরাজ্যের বাসিন্দাদের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্য কোনও শহরে বসে অনলাইনে মেঘালয় বা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকে নিঃশব্দে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
পরে ওই রাজ্যের পুলিশের কাছে অভিযোগ এলে তদন্তে নেমে দেখতে পাচ্ছে কলকাতার ওই যুবকদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে। যদিও ক্লোন করে নেওয়ায় টাকাটা আসলে চলে যাচ্ছে প্রতারকদের হাতে। আর অপরাধী হয়ে যাচ্ছে মাত্র দু’হাজার টাকা হাতখরচ পাওয়ার লোভে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়া আদিত্য, রোহিতদের মতো যুবকরা। দিনকয়েক আগে মেঘালয়ের আমপাতি থানার মামলায় শিলং জেলে দীর্ঘদিন বন্দি থাকা রোহিতকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ করে জামিনে ছাড়িয়েছেন পরিজনরা। আর আদিত্য এখনও মেঘালয়ের কারাগারে।
[আরও পড়ুন: ভেন্টিলেশনে সলমন রুশদি, এক চোখ নষ্ট গিয়েছে ছুরিবিদ্ধ লেখকের!]
দক্ষিণ কলকাতার ১৪৮/ই/১ প্রিন্স আনোয়ার শা রোডের বাসিন্দা বাবাই খের গত ৩১ মে লালবাজারে গুন্ডাদমন শাখার যুগ্ম নগরপালের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। লেক থানায় একই অভিযোগ গত ২৪ মে করেছেন বাবাই। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ মে বিনীত রায় নামে এক বন্ধু পাঁচ হাজার টাকা নগদে ধার চায়। কিন্তু একইসঙ্গে পেটিএম অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়ে বলে বিহার থেকে ভাই এই টাকা বাবাইকে একটু পরে পাঠিয়ে দেবে। সরল বিশ্বাসে বিনীতকে নগদে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেয়, পরদিন দেখে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ থেকে তাঁর নম্বরে ‘ব্যাংক প্রতারণা’র মামলা দায়ের হয়েছে এবং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইমেও অভিযোগ করেছেন বাবাই।
রোহিত ও আদিত্যর অভিভাবকদের দাবি, নামমাত্র টাকায় ওই যুবককেই অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ দিয়েছিল। তার কিছুদিন পরে ব্যাংক প্রতারণায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মেঘালয় পুলিশ এসে দু’জনে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, বিনীত কি চক্রের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে? আদিত্যর পরিবারের তরফে অভিযোগ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়ার চক্রের বিস্তারিত তথ্য জানালেও অপরাধী স্থানীয় ‘এজেন্টরা’ প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় আরও নতুন নতুন যুবকরা ভিনরাজ্যের টাকা আত্মসাৎ চক্রে ফেঁসে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।