সুকুমার সরকার, ঢাকা: চারদিনের সফরে চিনে গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাতে তিনি পা রাখেন বেজিংয়ে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েকদিন আগেই ভারত সফরে গিয়েছিলেন হাসিনা। ফলে গোটা ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর ছিল নয়াদিল্লির। বিশেষ নজর ছিল আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্বের। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করা, মৈত্রী সেতু, কৃষিপণ্য রপ্তানি-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে ৭টি ঘোষণাপত্র ও ২১টি মউ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
আজ, বুধবার বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় ভবন ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপলে’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ঘোষণাপত্র ও চুক্তিগুলো সই হয়। এর আগে সেখানে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন দুজনে। কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে উন্নীত হতে এসব চুক্তি হয়েছে ঢাকা ও বেজিংয়ের মধ্যে। এর মধ্যে দুটি মউ চুক্তি পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পদ্মপাড়ের সাতের দশকের অন্যতম কবির প্রয়াণ, চলে গেলেন মাকিদ হায়দার]
এদিন সকালে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সংবর্ধনা জানানো হয়। রেড কার্পেটে হেঁটে আসেন তিনি। সেখানে হাসিনাকে স্বাগত জানান লি কিয়াং। পরে একটি বিশেষভাবে সজ্জিত মঞ্চে যান হাসিনা। মঞ্চে তাঁকে গার্ড অফ অনার জানানো হয়। বৈঠকের পর দুই রাষ্ট্রনেতা সমস্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিল হস্তান্তর করেন। দুদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং সেক্টরে সহযোগিতা, ব্যবসা-বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও নবম বাংলাদেশ-চিন মৈত্রী সেতু, কৃষি পণ্য রপ্তানি, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে চিনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত (ফাইটোস্যানিটারি) উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকলও সই করেছে দুদেশ। তবে সফর শেষ হওয়ার একদিন আগেই বাংলাদেশে ফিরছেন হাসিনা। তাঁর কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসুস্থ। তাই এসময় মেয়ের পাশে থাকতেই দেশে ফিরছেন তিনি।
বলে রাখা ভালো, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ঢাকায় আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। ফলে বন্ধুদেশের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করছে ‘ড্রাগন’ সেদিকেই তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে দিল্লির। এই আবহে হাসিনার চিন সফর নিয়ে বেশ চর্চা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন হাসিনা। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বার্তা দিয়েছিলেন ঢাকার সঙ্গে একযোগে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে কাজ করার। তার পর থেকেই বাংলাদেশকে কাছে টানতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে বেজিং।
এই পরিস্থিতিতে যখন হাসিনার চিন সফর নিয়ে জোর চর্চা চলছিল তখনই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয় ঢাকা। আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলাদেশের সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারত রাজনৈতিক বন্ধু হলেও চিন উন্নয়নের বন্ধু। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প নিয়ে ভারত-চিন দুদেশই আগ্রহী। বাংলাদেশে যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে দিল্লি-বেজিংয়ের। ফলে কাউকেই চটাতে চায় না বাংলাদেশ। তাই ভারত ও চিন দুই সফরকেই গুরুত্ব দিয়েছেন হাসিনা।