সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা সিনেমা ‘সোয়েটার’ খ্যাত পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের পরিচালনায় একবার কাজ করেছিলেন ঋষি কাপুর। কেমন ছিলেন সেটে ঋষি? প্রবাদপ্রতীম বলিউড অভিনেতার প্রয়াণের পর সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর কাছে সেকথাই জানালেন শিলাদিত্য মৌলিক।
রণবীর এবং ঋষি কাপুর, বাবা-ছেলেকে একফ্রেমে আনার একটা গুরুদায়িত্ব বর্তেছিল আমার উপর। পেপসির একটা বিজ্ঞাপন করেছিলাম। তখন ঋষি কাপুরের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। খুব প্লিসেন্ট মেমোরি। কারণ যে ধরনের সিনেমা উনি করতেন, ওইরকম একটা মানুষ, যিনি কিনা রাজ কাপুরের বংশধর। তো অন্যরকম একটা তারকা লুপেই সবসময়ে রেখেছি ওঁকে। ওঁর সঙ্গে যখন কাজের সুযোগ পেলাম, সেটা প্রায় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতোই ছিল। আমার কাছে তখন রণবীরের থেকেও ঋষি কাপুরের সঙ্গে কাজ করতে পারার আনন্দটা আরও বেশি মনে হচ্ছিল। সেটে ওঁর ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হয়েছি। রণবীরের সঙ্গে সেটে পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন। সবাইকে প্রতিটা শট নিয়ে যেমনভাবে উনি শেখাচ্ছিলেন, দেখো এটা এভাবে করতে হয়, ওটা ওভাবে হবে। যদিও সেখানে উপস্থিত আমাদের সবারই বিজ্ঞাপন শুট করার একটা অভিজ্ঞতা ছিল। রণবীরেরও তখন প্রায় কিছু সিনেমা হিট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তবুও সবাই শিষ্যের মতো শুনছিলাম। ওঁর প্রত্যেকটা টিপস কাজে লাগার মতো। শুটিংয়ের মাঝেই সেটে নিজের অভিজ্ঞতার যেসব ছোট ছোট গল্প শোনাচ্ছিলেন, সেসব থেকেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে। পুরো সিনেমা জগৎটা সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য দিয়েছিলেন। অভিভূত হয়ে শুনেছি ওঁর কথা।
সেটে একটু বকাঝকাও করতেন। উনি একটু বদমেজাজি। আমরা সবাই তো ছেলের বয়সি। নীতুজিও এসেছিলেন। একটা অদ্ভূত পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল সেটটা। একটু দেরি হলেই নীতুজি বলতেন, এই তোমরা খাবার খেয়ে নিচ্ছ না কেন! মনে আছে, ‘অগ্নিপথ’-এ রউফ লালার চরিত্র দিয়ে দুর্ধষ বলিউড কামব্যাক করেছিলেন। তার আগে অবধি রোমান্টিক হিরোর অবতারেই দেখেছেন দর্শক ওঁকে। তো আমার ‘পেপসি’র বিজ্ঞাপনের শুট আর ডাবিংয়ের পর অনেকটা গ্যাপ ছিল। মাঝে ‘অগ্নিপথ’-এর শুট ছিল ঋষি কাপুরের। তাই ডাবিং স্টুডিওয় ঢুকেই আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, স্যর আমি কী আপনাকে ফাইনাল এডিটটা দেখাব একবার? কারণ, ‘অগ্নিপথ’-এর চরিত্রটা তো অনেকটাই আলাদা। শুনে উনি বললেন, “ক্যামেরা চললে আমার স্মৃতিতে সব চলে আসে। চিন্তা কোরো না। প্রয়োজনে আমি আবার ডাব করতে পারি।” আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু হতেই আমি অবাক যে, মাস খানেক আগে যে বিজ্ঞাপনের শুট হয়েছে, একেবারে ঠিক সেরকমই আবেগ দিয়ে সংলাপ বলা শুরু করলেন। উনি যে কত বড় মাপের অভিনেতা, সেটা এখানেই বোঝা যায়। কোন পরিবারের বংশধর, তার থেকেও বড় কথা এঁরা প্রত্যেকেই প্রকৃত অর্থে অভিনেতা। যাঁরা ছোট ছোট কাজগুলিও খুব মন দিয়ে করেন!
[আরও পড়ুন: ‘আমি শেষ হয়ে গেলাম!’, সহকর্মী ঋষি কাপুরকে হারিয়ে শোকাহত অমিতাভ]
তবে এরও বহু আগে থেকে ঋষি কাপুরের সমস্ত সিনেমার সঙ্গে আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত। ছোটবেলা থেকেই আমার বাড়িতে সিনেমার সাংঘাতিক চল। শৈশবেই দেখেছি, বাবা-মা প্রচণ্ড সিনেমাভক্ত। হিন্দি, বাংলা, ইংরেজি নির্বিশেষে সিনেমা দেখা হত। তো আমি চোখ খুলেই সিনেমা দেখতে শুরু করেছি বলা যায়। হলে গিয়ে দেখা হত ছবি। তখন তো টিভির এত চল ছিল না। সে সময়ে আমি মা আর বাবার সুবাদে ভিসিআরে ‘ববি’ সিনেমাটি দেখি। আর বড় হয়ে কাজের সূত্রে সেই মানুষটির সংস্পর্শে আসতে পেরেছি।
দিন কয়েক আগেই ‘সেকশন ৩৭৫’ দেখলাম, ‘মুলক’ দেখেছি, এত অসাধারণ অভিনয়..! যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে জয়দীপ সাহানির সঙ্গে একটা ছবির স্ক্রিপ্ট ডেভেলপ করছিলাম, সেখানে একটা চরিত্রের জন্য ঋষি কাপুরকেই ভেবেছিলাম আমরা। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল। ক্যামেরা চলতে শুরু করলেই একেবারে অন্য মানুষ। ওঁর মতো অভিজ্ঞ অভিনেতার থেকে অনেক শেখার রয়েছে। বিশেষ করে ‘নম্রতা’। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। যে অভিজ্ঞতা আমি আজীবন মনে রাখব।”
[আরও পড়ুন: ফের বলিউডে ইন্দ্রপতন, প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কাপুর]
The post ‘সেটে একটু বকাঝকা করতেন’, ঋষি কাপুরের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানালেন পরিচালক শিলাদিত্য appeared first on Sangbad Pratidin.