সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটা সোনালি অধ্যায় বোধহয় শেষ হয়ে গেল! নেতা মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) ও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) মস্তিষ্ক-যুদ্ধ এবারের আইপিএলে আর দেখা যাবে না। রোহিত শর্মার পর আচমকা মহেন্দ্র সিং ধোনিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, আর ক্যাপ্টেনসি নয়। বিরাট কোহলিও (Virat Kohli) দীর্ঘদিন আইপিএল খেলে ফেলেছেন। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও তিনি তুলে দিয়েছেন ফ্যাফ ডু প্লেসির হাতে। তিনি নিজে আর কতদিন এই ফরম্যাটে থাকবেন, জল্পনা রয়েছে।
কেকেআরও নেতৃত্ব বদলেছে আগেই। এবার নীতিশ রানার বদলে নেতৃত্ব পেয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার। এঁদের কেউই অধিনায়ক হিসাবে ধোনি, রোহিত বা বিরাটের সমকক্ষ নন আদৌ। কিন্তু ওজনদার নেতাদের বদলে অনভিজ্ঞদের মাথায় কাঁটার মুকুট তুলে দেওয়ার পথে একটা যুগের অবসানের পর নয়া যুগের সন্ধিক্ষণে এবারের আইপিএল। নেতৃত্বের ব্যাটনের হাতবদল। এমনটাই তো হয়ে থাকে ক্রিকেট থেকে বাস্তব জীবনে। পুরনোদের সরে যেতে হয়। অভিষেক হয় নতুনদের। রোহিত-ধোনির বিকল্প হিসেবে উঠে আসছেন হার্দিক-ঋতুরাজরা। হার্দিক অবশ্য নেতা হিসেবে একবার আইপিএল জিতেছেন, আরেকবার রানার্স হয়েছেন। সেই জায়গায় ঋতুরাজ বা নীতীশরা ক্যাপ্টেন হিসেবে একেবারেই নিষ্প্রভ।
[আরও পড়ুন: টেস্ট থেকে আইপিএল, নেতৃত্ব ছাড়ায় বরাবরই রহস্যময় ধোনি]
ফলে ধোনি-রোহিত-বিরাটরা ২২ গজে যে ক্ষুরধার মস্তিষ্ক-যুদ্ধ, লড়াই তুলে ধরতেন, চমকের পর চমক দেখাতেন, তা হয়তো আর ফিরবে না। হয়তো বলা হল এই কারণে যে দলের খারাপ সময়ে, ব্যর্থতার মুহূর্তে ফের বৃদ্ধ ধোনিই হাল ধরলেন! এমন দৃশ্য আগেও দেখা গিয়েছে। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হতেই পারে। আইপিএল মানেই চমক। এর প্রতিটি মোড়ে কী লুকিয়ে আছে, কেউ জানেন না। তাই হবে না বলে কোনও শব্দ নেই এর অভিধানে।
কিন্তু নেতৃত্বে তারকা-ভ্যালু না থাকায় মন কি ভরবে দর্শক-ভক্তদের? কারণ ধোনি আর চেন্নাই সমার্থক হয়ে গিয়েছে এতদিনে। ঠিক যেমন রোহিত আর মুম্বই। বিরাট আর বেঙ্গালুরু। এবারের আইপিএলের বহু আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল, রোহিত শর্মাকে আর নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে না মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। রোহিতের জায়গায় নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড উঠেছে হার্দিক পাণ্ডিয়ার হাতে। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি যে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি।
আইপিএলের বল গড়াচ্ছে শুক্রবার। তার আগের দিন ক্যাপ্টেনদের ফটোশুটে জানা গেল, ধোনির ক্যাপ্টেনের শিরস্ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়েছে তরুণ ঋতুরাজের মাথায়। ফলে শুক্রবার থেকে শুরু হতে চলা আইপিএলে ধোনিও নেতা নন। রোহিতও নন। বিরাট কোহলি তো আগেই সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছেন। এই তিন নেতাই তাঁদের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সব উজাড় করে দিয়েছেন। সাফল্যের শৃঙ্গে পৌঁছেছেন ধোনি আর রোহিত। বিরাট অবশ্য ব্যর্থর দলেই থেকে গিয়েছেন। ধোনি ও রোহিত পাঁচবার করে খেতাব জিতেছেন। রোহিতই সেই মিডাস রাজা যিনি মুম্বইয়ের হয়ে যা ধরেছেন, তাতেই সাফল্য পেয়েছেন। ধোনিও তাই। চেন্নাই আর মুম্বইয়ের লড়াই নিয়ে ইতিহাস লেখা হতে পারে। কালি খরচ হতে পারে প্রচুর। দুই সফল অধিনায়ক মাঠের ভিতরে রক্তক্ষয়ী সব লড়াইয়ের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু একে অপরের বিরুদ্ধে কোনওদিন কোনও কটূ মন্তব্য করেননি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ঝরে পড়েছে। একই কথা বলা যায় কোহলির ক্ষেত্রেও। রোহিতের সঙ্গে কোহলির রেষারেষি, ব্যক্তিত্বের সংঘাতকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে দুই নেতাই একে অপরের কাঁধে বন্ধুত্বের হাত রেখেছেন। নেতা ধোনি-রোহিত-বিরাটকে ছাড়া রং হারাল আইপিএল, বললেও অত্যু্ক্তি করা হবে না। নেতৃত্বের এই হাতবদল বলে দিয়ে যাচ্ছে, যুগ বদলাচ্ছে আইপিএলের মতো রঙিন টুর্নামেন্টেরও। তথাকথিত বৃদ্ধদের সরিয়ে তরুণদের তুলে আনা হচ্ছে।