সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তার শয্যাসঙ্গিনী হতে রাজি না হলেই সাধ্বীদের গুলি করে খুন করত গুরমিত রাম রহিম সিং। তারপর ঠান্ডা মাথায় দেহগুলি হরিয়ানার সিরসায় নিজের ৮০০ একরের আশ্রমের মাটিতে পুঁতে দিত সে। সন্দেহ এড়াতে সেখানে নিজের হাতে গাছও লাগিয়ে দিত ভণ্ড বাবা। একই পরিণতি হত অবাধ্য ডেরা সাচা কর্মীদেরও। বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই জীবন দিয়ে সেই ‘অপরাধ’-এর ফল ভোগ করতে ভক্তদের। শুধু তাই নয় ডেরা পরিচালিত হাসপাতালগুলিতে বেআইনিভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হত বলেও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবার সকালে ডেরার প্রধান আশ্রমে বিপুল সেই সব দেহাবশেষের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। মিলেছে প্রচুর হাড়গোড় আর কঙ্কালও। হরিয়ানা পুলিশের অনুমান, ডেরা থেকে বেশ কয়েকজন সাধ্বীর নিখোঁজ হওয়ার যে খবর পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের হয়তো গুরমিতই খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। ‘বাবা’র এই কুকীর্তি ফাঁস হতে পারে আন্দাজ করে বৃহস্পতিবারই ডেরা সাচা সওদা মুখপত্র ‘সচ কাহু’তে লেখা হয়, এই আশ্রমে অনেকের দেহাবশেষ সমাধিস্ত রয়েছে। তার উপরে লাগানো হয়েছে গাছ। কিন্তু কেন এই রীতি? পত্রিকার দাবি, আসলে মৃতদেহ পুড়িয়ে বা দেহাবশেষ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিলে পরিবেশ নষ্ট হয়। বাবার তা একেবারেই নাপসন্দ! সেকারণেই এই নির্দেশ।
[রাজকীয় ডেরায় তাজমহল, আইফেল টাওয়ারও বানিয়েছিল রাম রহিম]
সিরসা থেকে কিছুটা ভিতরে, উঁচু পাঁচিলের বাধা পেরিয়ে ঢুকলেই গুরমিত রাম রহিমের ‘গুফা’ (গুহা)। ৮০০ একর জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডেরা সাচা সওদার সেই সদর দপ্তরই বর্তমানে ‘স্যানিটাইজেশন’ করছে পুলিশ। হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয় তল্লাশি। যেখান থেকে পাওয়া গিয়েছে ‘বাবা’ মুদ্রাও। নিজের একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে আস্ত একখানা টাঁকশাল ছিল গুরমিতের। প্লাস্টিকের তৈরি টাকাগুলি দেখে প্রথমে খেলনা মনে হলেও পুলিশ জানায়, তা ডেরায় যাবতীয় লেনদেনের কাজেই ব্যবহার করা হত। নিজের নাম ছাড়াও গুরমিতের এই মুদ্রায় ‘ধন ধন সৎগুরু/তেরা হি আসারা, ডেরা সাচা সওদা’ও খোদাই করা ছিল।
শুধুমাত্র ডেরার ভিতরেই চলত এই মুদ্রা। শুধু কী তাই! তল্লাশিতে মেলা বাবার সম্পত্তি দেখেও চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তল্লাশি অভিযানের সদস্যদের। বাবাজির কোনও বাড়ি তাজমহল, কোনও বাড়ি আইফেল টাওয়ার, কোথাও বা আবার লেনিনগ্রাদের নকশার ধাঁচে গড়ে উঠেছে আবাসন। প্রতিটি বাড়ির বাইরে রয়েছে ধর্ষক বাবার ছবি দেওয়া বিশাল হোর্ডিং। সর্বত্রই গোলাপি রঙের আধিক্য।
[জানেন, গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিপুল জনপ্রিয়তার রহস্যটা কী?]
১৯৯৯ সালে বাবার যে গুহায় ধর্ষিতা হয়েছিলেন দুই সাধ্বী, সেখানেও তল্লাশি চলছে। তল্লাশি চলাকালীন সিরসাজুড়ে জারি ছিল কারফিউ। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে ৫,০০০ নিরাপত্তা কর্মীকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ১০টি দল মিলে তল্লাশি চালায় ডেরায়। এলাকার নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন হয়েছে সেনা, ৪১ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী। ছিল বম্ব স্কোয়াড, দমকল বাহিনী ও অ্যাম্বুল্যান্স, ব্যাঙ্ক ও পূর্ত আধিকারিকরাও। ছিল ৪০ বাহিনী সোয়্যাট কমান্ডো। এমনকী ৭০ জন সাক্ষীও। অবসরপ্রাপ্ত নগর ও দায়রা বিচারক এ কে এস পাওয়ারের নেতৃত্বে চলেছে তল্লাশি। মিলেছে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক। একটি ঘর থেকে পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোটে ৭০০০ টাকা ছাড়াও নগদ ১২,০০০ টাকা এবং হার্ড ডিস্ক পাওয়া গিয়েছে। পাওয়া গিয়েছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর বিহীন একটি লেক্সাস গাড়ি এবং একটি ওবি ভ্যান। রুরকি থেকে অকুস্থলে এসেছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের একটি দল। তাঁরা সব কিছু পরীক্ষা করছেন। তল্লাশির ছবি তুলছে ৬০টি ক্যামেরা। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফিও চলছে। ডেরা সদর দফতরের বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে ৯টি ডগ স্কোয়াডকে।
এদিন ডেরার মুখপাত্র বিপাসনা ইনসান জানিয়েছেন, ডেরা আইনের পথেই চলেছে। অনুগামীদের শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতেও বলেছেন তিনি। প্রসঙ্গত, শেষ কয়েক দিনে ওই এলাকা থেকে ২২০টি এলপিজি সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০টি কমার্শিয়াল সিলিন্ডার। পুলিশ জানিয়েছে, সিরসায় ৯,০০০-এর বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ৮,২০০টি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
The post ‘বাবা’র ডেরায় কমান্ডোদের ম্যারাথন তল্লাশি, উদ্ধার কয়েকশো সাধ্বীর কঙ্কাল appeared first on Sangbad Pratidin.