স্টাফ রিপোর্টার: চোখের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে দেখেছেন সহকর্মী শাহ আলমকে। দীর্ঘদিন ধরে নানা শুটিং লোকেশনে কাজ করতে দেখেছেন দক্ষ লাইটম্যানকে। তাঁর এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন অনুষ্কা শর্মা। পরিচিত টেকনিশিয়ানের এমন অকালমৃত্যুতে কার্যত ভেঙে পড়েছেন নায়িকা। তাই শুটিং বাতিল করে ফিরে গেলেন মুম্বইয়ে।
গত দু’দিন ধরে ভাঙড়ের কোড়লবেড়িয়ার বাঁশবাগানে অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ও অভিনীত ‘পরী’ ছবির শুটিং চলছিল৷ জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে একটি বিশেষ দৃশ্যের শুটিং হওয়ার কথা ছিল৷ সেই মতো বাঁশগাছের ঝাড়ে লাগানো হয় আলো। আলোর তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাহ আলম নামে বছর তিরিশের লাইটম্যান৷ সেই সময় তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সেটেই ছিলেন অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা। গোটা ঘটনা দেখতে পেয়ে তিনিই প্রথম চিৎকার করে ওঠেন। তাঁর চিৎকারেই সেটের অন্য সদস্যরা ছুটে যান শাহ আলমকে বাঁচাতে। এরপর ইউনিটেরই অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে আসা হয় নিউ টাউনের এক বেসরকারি হাসপাতালে৷ সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে৷ পরিচিতি টেকনিশিয়ানের মৃত্যুতে অনুশোচনায় ভুগছেন প্রযোজক অনুষ্কা। ‘পরী’ ছবির স্থানীয় ম্যানেজার সূত্রে খবর, শোকাহত অনুষ্কা তাই শুটিং বাতিল রেখেই আপাতত মুম্বই ফিরে গিয়েছেন।
[ভাঙড়ে অনুষ্কা-পরমব্রতর ছবির সেটে দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত ১]
খবরটি বুধবার সকালে প্রকাশ্যে আসা মাত্রই টালিগঞ্জে কলাকুশলীদের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। টালিগঞ্জ-সহ শহরের প্রায় সব সিরিয়াল, সিনেমার শুটিং সেটে লাইটম্যানদের আরও সতর্ক হয়ে কাজের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সব প্রোডাকশন হাউসের তরফে। একই সঙ্গে সিনেমার কাজে আরও সতর্কতা অবলম্বন করে কাজের কথা বলা হয়েছে লাইটম্যানদের। তবে কলকাতায় ‘পরী’ ছবির পুরো শুটিং শিডিউল কী হবে তা নিয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি প্রযোজক সংস্থার তরফে। একই সঙ্গে অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা এই ঘটনায় ঘোরমুক্ত নন বলেও সূত্রের খবর।
কিন্তু কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা? সেটে উপস্থিত এক টেকনিশিয়ান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে ভালই বৃষ্টি হয়েছিল ওই এলাকায়। ফলে মাটি, বাঁশগাছ সবই ছিল ভিজে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সব টেকনিশিয়ানকে গামবুট জুতো পরার কথা বলা হয়েছিল। অনেকেই তা পরেছিলেন। কিন্তু শাহ আলম তা পরেননি। শুধু তাই নয়, কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই ভিজে পোশাকে বিদ্যুতের তার কাটছিলেন তিনি। সেই সময় ভিজে শরীরটাকে জড়িয়ে নেয় বিদ্যুৎ। ছিটকে ফেলে দেয় শাহ আলমকে। জ্ঞান হারান তিনি। এরপর দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা করা যায়নি।
[বিতর্কের জেরেই কি ‘ককপিট’-এর টিজার থেকে সরানো হল প্রসেনজিৎকে?]
বুধবার সকালেই শাহ আলমের পরিজনরা মুম্বই থেকে এসেছেন। তাঁদের হাতেই দেহ তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। ছবি নির্মাতাদের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে গ্রামবাসীদের তরফে অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনার পর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাতেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা শুটিং স্পটে ভিড় করেন৷ কিছুক্ষণ বিক্ষোভও দেখান। বুধবার সকাল থেকেই ‘পরী’ ছবির ওই ঘাতক শুটিং স্পট দেখতে ভিড় জমান প্রচুর মানুষ। অনেক উৎসাহী কলকাতা থেকেও যান এই স্পট ঘুরে দেখতে।
The post ভাঙড়ে বাতিল ‘পরী’র শুটিং, মুম্বই ফিরলেন অনুষ্কা appeared first on Sangbad Pratidin.