বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তর সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য বায়ুসেনার সাহায্য চাইল সিকিম প্রশাসন। তবে খারাপ আবহাওয়ার জন্য দৃশ্যমানতা কম থাকায় উদ্ধারকাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হলেই উদ্ধারকাজ শুরু হবে বলে খবর। শুক্রবার রাতে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় শনিবার কিছুটা স্বস্তি সিকিমে। এদিকে হড়পা বান ও ধসে ভেসে যাওয়া সড়ক ও সেতু পুনর্নিমাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সীমান্ত সড়ক সংস্থা (বিআরও) এবং সেনাবাহিনী। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে নির্মাণকাজ।
বৃষ্টির জলে প্লাবিত নাগরাকাটা। নিজস্ব চিত্র।
লাচুংয়ের 'লাইফ লাইন' সঙ্কলং সেতু তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। ওই সেতু খুলে গেলে পর্যটকদের সড়কপথেও মঙ্গনে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সিকিমের (Sikkim) মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং শনিবার ধস বিধ্বস্ত একাধিক এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। নিরাপত্তা এবং দ্রুত মেরামতির কাজের জন্য রবিবার সকাল পর্যন্ত মঙ্গন জেলায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি করা হয়েছে। পাকশেপে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এদিকে বৃষ্টি বন্ধ হলেও তিস্তার জলস্তর খুব একটা কমেনি। ফলে সড়কপথে শিলিগুড়ি-সিকিম (Siliguri-Sikkim) যাতায়াতের 'লাইফ লাইন' ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে (NH 10) শুধুমাত্র হালকা যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে সিকিমে ভারী বর্ষণ না হলেও উত্তরের সমতলে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি শুরু হতে জলবন্দি হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার আবহাওয়া দপ্তরের তরফে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে হড়পা বানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পছন্দের বিষয়ে ফেল? রেজাল্ট ফিরিয়ে আবারও বসা যাবে উচ্চমাধ্যমিকে, সুযোগ দিল বোর্ড]
উত্তর সিকিমে (North Sikkim) আটকে থাকা পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য জোর তৎপর হয়েছে প্রশাসন। সিকিম পর্যটন ও অসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের মুখ্য সচিব সিএস রাও সংবাদমাধ্যমকে জানান, পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য বায়ুসেনার (Air Force) সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি এবং কুয়াশার জন্য দৃশ্যমানতা কম থাকায় হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাই প্রশাসনের কর্তারা বিকল্প হিসেবে তৈরি হয়ে যাওয়া সঙ্কলং সেতু হয়ে পর্যটকদের মঙ্গন থেকে গ্যাংটকে (Gangtok) পাঠানোর কথাও ভাবছেন। ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের জন্য সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় প্রচুর পর্যটক মঙ্গন জেলার লাচুংয়ে আটকা পড়ে।
হড়পা বান, ধসে ভেঙে পড়েছে রাস্তা, সেতু। নিজস্ব ছবি।
প্রথমে বলা হয়েছিল, তারা সংখ্যায় হবে দু হাজারের বেশি। কিন্তু শুক্রবার প্রশাসনের কর্তারা সমীক্ষা চালিয়ে দেখেন, মোট ১২০০ পর্যটক আটকে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে থাইল্যান্ডের দুজন, নেপালের তিনজন এবং বাংলাদেশের দশজন রয়েছেন। প্রত্যেক পর্যটকের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে পর্যটন ও অসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের মুখ্যসচিব শনিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ওই বিষয়ে স্থানীয়দেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পর্যটকদের (Tourists)খাওয়া থাকার কোনও সমস্যা নেই। আপাতত পর্যটকরা যে হোটেল অথবা হোমস্টেতে রয়েছে তাঁদের সেখানেই থাকতে বলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: নাড়ির টান! দাম্পত্যের আইনি লড়াইয়ে ভরা এজলাসে মায়ের কোলে ঝাঁপাল শিশুকন্যা]
এদিকে বিপর্যয় মোকাবিলায় সিকিম সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী (Indian Army)। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ধস সরিয়ে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। দ্রুত ডিকচু-সঙ্কলং-টুং রাস্তা চালু করতে তৎপর হয়েছে সীমান্ত সড়ক সংস্থা। টুং পাশ থেকে সঙ্কলং পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার রাস্তার ধস সরানো হয়েছে। নাগাপাশ থেকে গ্যাংটক-চুংথাং রাস্তার ধস সরানোর কাজ চলছে। নাগা থেকে লণ্ঠখোলা যাতায়াত শুরু হয়েছে। টুং-এ সদ্য নির্মিত মডুলার সেতু হয়ে উত্তর সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। শনিবার সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং গোলে বন্যা বিধ্বস্ত মেলি পরিদর্শন করেন। ইয়াংগাংয়ের মাজওয়া গ্রামেও যান। মেলি স্টেডিয়ামে অন্তত ৫ ফুট পলি জমা হয়েছে। চারদিন থেকে একটানা বৃষ্টির জেরে উত্তর সিকিমের দিকে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তা যেমন, ডিকচু-সঙ্কলং-টুং, মাগান-সঙ্কলং, সিংথাম-রাংরাং, রাংরাং-টুং ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে। উত্তর সিকিম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।