অর্ণব আইচ: সিঁথি থানায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনায় মূল প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বদল ঘিরে রহস্য। এই ঘটনার মূল প্রত্যক্ষদর্শী চুরির অভিযুক্ত আসুরা বিবি পুলিশের কাছে জেনারেল ডায়েরি করে জানিয়েছেন যে, মৃত রাজকুমার সাউয়ের পরিবারের লোকেদের মারধরের হুমকির ভয়েই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফিরে এসেই তিনি আক্ষরিক অর্থে মৃতের ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। মহিলার এই বক্তব্য ঘিরে নতুন করে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
এদিকে, অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলার গোপন জবানবন্দি নিতে বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই সিঁথি থানায় যান। থানারই একটি ঘরে বিচারক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আসুরা বিবির গোপন জবানবন্দি নেন। এদিন লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয় মৃত রাজকুমার সাউয়ের পরিবারের চারজনকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাজকুমারের ভাই রাকেশ সাউ, যিনি পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগকারী ও আরও তিনজন। তাঁদের বক্তব্য নেওয়া হয়। শুক্রবার ফের দু’জনের বক্তব্য নেওয়া হবে। এক প্রোমোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে সিঁথি থানায় দামী কল, কলের পাইপ, মার্বেল ও অন্যান্য সামগ্রী চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়। চুরির অভিযোগে থানায় ডেকে নিয়ে আসা হয় আসুরা বিবিকে। তাঁকে জেরা করেই চুরির জিনিস উদ্ধারের জন্য পুলিশ রাজকুমার সাউকে থানায় নিয়ে আসে। জেরার সময় রাজকুমারের মৃত্যু হয়।
এদিকে, সিঁথি কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজেপির যুব মোর্চা মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করে। বিজেপির রাজ্য দপ্তরের সামনে মিছিল শুরুর আগেই আটকায় পুলিশ। বিজেপির সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। মোমবাতি নিয়ে মিছিল করা যাবে না, এই শর্তে পুলিশ মিছিলের অনুমতি দেয়। থানা থেকে বের হওয়ার পর আসুরা বিবি জানান, তাঁর সামনেই মারধর করা হয় রাজকুমারকে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এই বক্তব্য থেকে যে আসুরা বিশেষ সরে এসেছেন, এমনটা নয়। যদিও অভিযুক্ত দুই সাব ইন্সপেক্টর ও একজন সার্জেন্ট লালবাজারের গোয়েন্দাদের জেরার মুখে তা স্বীকার করেননি। তাঁরা বলেছেন, রাজকুমারের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি। পুরো বিষয়টি জানতে সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: সিঁথি কাণ্ডে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে গা-ঢাকা ‘নিখোঁজ’ আসুরার]
কিন্তু যে ঘরটিতে রাজকুমারকে জেরা করা হয়েছে, তাতে কোনও সিসিটিভি নেই। ফলে বেশ কিছু তথ্যের জন্য এখন আসুরার উপরই নির্ভরশীল গোয়েন্দারা। যদিও পুরো বিষয়টির বড় প্রমাণ মিলবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে। তাই এই রিপোর্টের উপরই তাঁরা নির্ভর করে রয়েছেন। থানা থেকে বের হওয়ার পর হঠাৎই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান আসুরা বিবি। গোয়েন্দারা হাড়োয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাঁর সন্ধান পান। বুধবার বেশি রাতে তাঁকে প্রথমে টালা থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাঁকে নাইট শেল্টারে, যেখানে তিনি থাকেন, সেখানে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশ তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
রাতেই তিনি পুলিশের কাছে দেওয়া একটি জেনারেল ডায়েরিতে বলেন, রাজকুমার সাউয়ের ছেলেরা তাঁকে মারধরের হুমকি দিয়েছিলেন। সেই ভয়েই তিনি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে গা-ঢাকা দেন। এবার পুলিশ রাজকুমারের পরিবারের লোক, বিশেষ করে তাঁদের ছেলেদের কাছে জানতে চাইছে, কেন ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছিল? প্রয়োজনে এই জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতে পরে মামলাও করা হতে পারে। আসুরা বিবিকেও নাইট শেল্টার অথবা সিঁথি থানায় জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
The post সিঁথি কাণ্ডে বয়ান বদল আসুরা বিবির, মৃতের ছেলেদের বিরুদ্ধে মারধরের হুমকির অভিযোগ appeared first on Sangbad Pratidin.