সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: ব্যাংক জালিয়াতির জন্য শহরে ফের ‘স্কিমার গ্যাং’-এর হানা! দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো। অর্থাৎ বাঙালির প্রাণের উৎসবের মরশুমে শহরজুড়ে ব্যাংক জালিয়াতির ফাঁদ পাততে কলকাতায় এসেছিল গয়ার কুখ্যাত সেই ‘স্কিমার গ্যাং’। ফাঁদ পেতেছিল এটিএমে ব্যাংক জালিয়াতির।
[আরও পড়ুন: প্রচুর টাকা নিয়ে সাক্ষাৎকার দিতেন ‘নির্ভয়া’র বন্ধু! প্রমাণিত স্টিং অপারেশনে]
কলকাতা পুরসভা লাগোয়া একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে ঢুকে চিন্তা রায় নামে এক মহিলার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা জালিয়াতিও করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু তাতেও তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারল না। ওই মহিলার চিৎকারে এবং নিউ মার্কেট থানার পুলিশের অত্যন্ত তৎপরতায় ধরা পড়ে গেল এই কুখ্যাত ‘স্কিমার গ্যাং’। গ্রেপ্তার করা হল গ্যাংয়ের তিনজনকে। ধৃতদের মধ্যে অনুজ কুমার আবার বিহারের ওয়াজিরগঞ্জ কলেজের বিএসসির ছাত্র। ধৃতদের জেরা করে এর পিছনে কোনও বিদেশি চক্র রয়েছে কি না তা জানার চেষ্টা করছে নিউ মার্কেট থানা। জেরায় উঠে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেটি হল, পুলিশি নজর এড়াতে এই গ্যাংয়ের জালিয়াতরা এবার জালিয়াতির ছক বদল করে ফেলেছে। নয়া ছকে জালিয়াতির জন্য উৎসবের মরশুমে গয়া থেকে কলকাতায় এসেছিল তারা।
ধৃত জালিয়াতরা হল মহম্মদ আরিফ খান (২০), অনুজ কুমার (২০) এবং রাজকুমার মিস্ত্রি (২১)। তাদের সকলেরই বাড়ি গয়ায়। আরিফ খান আগে ট্রাকের খালাসি ছিল। লোহার মিস্ত্রি ছিল রাজকুমার। ওয়াজিরগঞ্জ কলেজের ছাত্র অনুজ কুমারকে সঙ্গে নিয়ে তারা এই অভিনব কায়দার ব্যাংক জালিয়াতির গ্যাং তৈরি করে। অনুজের বাবাও আবার বিহারের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।
ব্যাংক জালিয়াতির জন্য তারা গয়া থেকে কলকাতায় এসেছিল সপ্তমীর দিনই। শহরে এসে তারা উঠেছিল লেনিন সরণির একটি হোটেলে। পরের দিন, অর্থাৎ অষ্টমীর দুপুরেই তারা শুরু করে দেয় অপারেশন। এই সময় তারা কলকাতা পুরসভা লাগোয়া একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম কাউন্টারে হানা দেয়। এটিএমের বাইরে পাহারায় ছিল তাদের একজন। বাকি দু’জন এটিএমের মধ্যে ঢোকে। সেইসময় কাউন্টারে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন পুরসভা লাগোয়া একটি শপিং মলের মহিলা কর্মী চিন্তা রায়। তাঁকে টাকা তোলায় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে গ্যাংয়ের একজন। বলে, আপনি বোধহয় এটিএম থেকে টাকা তুলতে অভ্যস্ত নন। আসুন, কীভাবে এটিএম মেশিনে কার্ড ঢোকাতে হয় দেখিয়ে দিচ্ছি। এরপর সে চিন্তাদেবীকে পিন নম্বর দিতে বলে। পাশের মেশিনে তখন দাঁড়িয়েছিল দলের আরও একজন। সে তখন পাশ থেকে পিন নম্বর দেখে ফেলে। এরপরই চিন্তাদেবীর অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তের মধ্যে দশ হাজার টাকা তুলে নিয়েই বেরিয়ে যায় সে। বিপদ দেখে চিৎকার শুরু করে দেন চিন্তাদেবী। বাইরেই ছিল নিউ মার্কেট থানার টহলদারি পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে তারাও চলে আসে। ধরা পড়ে যায় এটিএমের মধ্যে থাকা গ্যাংয়ের একজন। বেগতিক দেখে সরে পড়ে বাকি দুই জালিয়াত।
ধৃতকে সঙ্গে নিয়ে এরপর নিউ মার্কেট থানার ওসি সুপ্রিয় পাল, তদন্তকারী অফিসার শান্তনু চন্দ্র এবং বাকি তিন অফিসার মৃন্ময় মজুমদার, সঞ্জয় বিশ্বাস ও গৌরীশঙ্কর বিশ্বাস পলাতক জালিয়াতদের ধরতে শহরজুড়ে তল্লাশি শুরু করেন। তল্লাশি চলে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউসে। শেষপর্যন্ত পলাতক জালিয়াতদের টাওয়ার লোকেশন করে তাদের ধরা হয় মধ্য কলকাতারই একটি হোটেল থেকে। উদ্ধার করা হয় চিন্তা রায়ের খোয়া যাওয়া টাকাও। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অনলাইন স্কিমার মেশিন এবং ম্যাগনেটিক কার্ড রিডার এবং রাইটার ডিভাইস।
বছর দেড়েক আগে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে এইরকমই এটিএম জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিল জালিয়াতরা। এই ঘটনার তদন্তে নেমে দিল্লি থেকে এক রোমানীয়কে গ্রেপ্তার করেছিলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এই গ্যাংয়ের ‘মোডাস অপারেন্ডি’ বা অপরাধের ধরন ছিল রক্ষীহীন এটিএম কাউন্টারে ঢুকে স্কিমার মেশিন লাগিয়ে দেওয়া। এরপর সেই মেশিন থেকে সাধারণ মানুষের টাকা গায়েব করেছিল তারা। কিন্তু গয়া গ্যাংকে জেরা করে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, তাদের অপরাধের ধরন হল, কোনও বৃদ্ধ—বৃদ্ধা বা মহিলাদের এটিএম মেশিন ব্যবহারে সাহায্য করার নাম করে টাকা গায়েব করা। এর জন্য তারা অনলাইনে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনেছিল স্কিমার মেশিন ও ম্যাগনেটিক কার্ড রিডার এবং রাইটার ডিভাইস। সেই ডিভাইসে পিন নম্বর দিলেই সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করে দিত তারা। গয়া ছাড়াও দিল্লি ও মুম্বইয়েও এই ধরনের ফাঁদ তারা পেতেছিল। বাঙালির উৎসবের মরশুমে শহরজুড়ে এই জালিয়াতির ফাঁদ পাততে চেয়েছিল তারা।
[আরও পড়ুন: ভারী পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে বাবাকে খুন, থানায় আত্মসমর্পণ নাবালকের]
The post উৎসবে ব্যাংক জালিয়াতির ফাঁদ, শহরে ফের ‘স্কিমার গ্যাং’-এর হানা appeared first on Sangbad Pratidin.