সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওসামা বিন লাদেনের পর বিশ্বের সবচেযে ভযংকর ও দোর্দণ্ডপ্রতাপ সন্ত্রাসবাদী নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে নিয়ে অনেক চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। সদ্য খতম হওয়া ৪৮ বছরের বাগদাদি গত এক বছর ধরে মেষপালকের ছদ্মবেশে থাকত ও প্রকাশ্যে ঘুরত।
সিরিয়ার বাহিনী, রাশিয়ার সেনা, মার্কিন ফৌজের চোখে ধুলো দিতেই সে মেষপালকের ভেক ধরেছিল। শেষ আড়াই বছর বাগদাদি কাউকে বিশ্বাস করত না। ইসলামিক স্টেটের ক্যাডার বা জেহাদিদেরই তীব্র সন্দেহ করত। বাগদাদির সন্দেহ ছিল, এরা কেউ না কেউ তাকে বিশাল অর্থের লোভে খতম করতে পারে বা ধরিয়ে দিতে পারে। অবশ্য বাগদাদির সন্দেহ খুব ভুল ছিল না। কারণ বাগদাদি খতম অভিযানের পিছনে ছিল তারই ঘনিষ্ঠ কোনও অনুগামীর হাত। এই তথ্য পাচার সিন্ডিকেটে কাজ করছিল ইসলামিক স্টেটেরই কয়েকজন জেহাদি। এরাই বিভিন্ন সময় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং রুশ গুপ্তচর সংস্থা ‘গ্রু’ -এর হয়ে কাজ করছিল। এরাই বাগদাদির যাবতীয় গতিবিধির তথ্য পাচার করেছে। এমনটাই দাবি মার্কিন ও রুশ সংবাদমাধ্যমগুলির।
গত ২৬ অক্টোবর সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বারিশা এলাকায় বাগদাদির ডেরায় হানা দেয় ডেল্টা ফোর্স এবং ৭৫তম রেঞ্জার রেজিমেন্টের কমান্ডোরা। আচমকা এই হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাগদাদি। তিন সন্তানকে নিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে আশ্রয় নেয় সে। সেখানেই আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে তিন সন্তান ও নিজেকে উড়িয়ে দেয় বাগদাদি। সেই সময় তার কয়েক জন অনুচরও ওই ডেরায় ছিল। তাদের মধ্যে কয়েক জন মার্কিন সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। আবার আত্মসমর্পণও করে কয়েকজন। আত্মসমর্পণকারী ওই আইএস জঙ্গিরাই মার্কিন আধিকারিকদের বাগদাদির জীবনের শেষ দিনগুলির বর্ণনা দিয়েছে, যা সামনে এনেছে সংবাদসংস্থা অ্যসোসিয়েটেড প্রেস, বিবিসি।
বাগদাদির অনুগামীরাই কবুল করেছে, শেষ দু’বছর বাগদাদির সঙ্গী ছিল, মৃত্যুভয়, তীব্র সন্দেহ এবং ডায়াবেটিস। সারা দিনে একাধিকবার ইসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হত তাকে। অসুস্থ হয়ে পড়ছিল বাগদাদি। আমেরিকা বা রাশিয়ার হাতে কিছুতেই ধরা দেবে না, এই প্রতিজ্ঞা করায় বিছানার পাশে, দিনে-রাতে সবসময় রাখত শক্তিশালী আত্মঘাতী বেল্ট। যার রিমোটের সুইচ থাকত হাতের ঘড়িতেই। শেষ মুহূর্তে মার্কিন কমান্ডোদের হাতে ধরা পড়ার আগে গভীর সুড়ঙ্গে এই বেল্টের সাহায্যেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে খতম করে বাগদাদি। সোমবার তুরস্কের হাতে সপরিবার ধরা পড়ছে বাগদাদির ৬৫ বছর বয়স্ক দিদি রাসমিয়া ওয়াদিয়া। তাকে জেরা করেও নানা তথ্য বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে তুরস্কের সেনাবাহিনী।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবের আল-আরবিয়া চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন বাগদাদির আত্মীয় মহম্মদ আলি সাজিদ। তিনি জানান, মৃত্যুর আগের কয়েক মাস সর্বদা উৎকণ্ঠায় ভুগত বাগদাদি। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও আগের চেয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে হয়ে উঠেছিল। রাতের অন্ধকার ছাড়া বাইরে বার হত না। একান্তই বার হতে হলে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে, নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে তবেই যেত। সেইসময় তাকে ‘হাজি’ বা ‘শেখ’ বলেই ডাকত নিরাপত্তারক্ষীরা। কেউ যাতে তার অবস্থান ও গতিবিধি জানতে না পারে সেজন্য নিজে মোবাইল ব্যবহার করত না। অনুগামীদের মধ্যে যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করত তাদের দিয়েই ছোটখাট কাজ চালিয়ে নিত।
লক্ষাধিক মানুষকে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেওয়ার কারিগর, অজস্র শিরশ্ছেদের নির্দেশক, লক্ষাধিক জীবিত, মৃত মানুষের অঙ্গ পাচারের পান্ডা, ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করে খিলাফতের নামে ভয়ংকর সাম্রাজ্য গড়ার জনক বাগদাদির এই পরিণতিই স্বাভাবিক ছিল। এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ও সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞরা। বাগদাদি খতম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসের একটি অধ্যায় আপাতত শেষ হল।
[আরও পড়ুন: অল্পের জন্য ফিদায়েঁ হামলা থেকে রক্ষা পায় ভারত, দাবি মার্কিন আধিকারিকের]
The post তাড়া করত মৃত্যুভয়, প্রাণ বাঁচাতে মেষপালক বেশে ঘুরত বাগদাদি appeared first on Sangbad Pratidin.