shono
Advertisement

জাতীয় সংগীতে আপত্তি নেই, তবে…

দেশ তো রাগ নয়, অনুরাগেরও বটে। এত নিয়ম, এত বাঁধন। এত খটকা সরিয়ে, এই অনুরাগের পরিসরটি কি আমরা তৈরি করতে পারি না? The post জাতীয় সংগীতে আপত্তি নেই, তবে… appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:46 PM Dec 02, 2016Updated: 03:16 PM Dec 02, 2016

দেশ তো রাগ নয়, অনুরাগেরও বটে। এত নিয়ম, এত বাঁধন। এত খটকা সরিয়ে, এই অনুরাগের পরিসরটি কি আমরা তৈরি করতে পারি না? তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। লিখছেন সরোজ দরবার    

Advertisement

আগেও একবার ফরমান এসেছিল। কালে কালে তা উঠে গিয়েছে। কালের নিয়মে আবার সে এসেছে ফিরিয়া। অর্থাৎ সিনেমা হলে স্ক্রিনিংয়ের আগে বাজাতে হবে জাতীয় সংগীত। এবং, সে সময় উঠে দাঁড়াতে হবে জনগণকে।

একদিক থেকে এ ভালই হয়েছে। মাঝেমধ্যেই এ নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কোনও কোনও সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজে। কোথাও বাজে না। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় উঠে দাঁড়ান। কেউ উঠে দাঁড়ান না। কেউ তা নিয়ে নালিশ ঠোকেন। অন্যকে দেশদ্রোহী বলে দেগে দেন। সে নিয়ে তুমুল বাক-বিতণ্ডা। উঠে দাঁড়ালেই দেশপ্রেমিক, নইলে নয়- এ প্রসঙ্গ নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক। সে সবে এতদিনে ইতি পড়েছে। সর্বজনগ্রাহ্য একটি নিয়ম থাকলে আর নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থাকবে না। সেদিক থেকে ঝামেলা খানিকটা কমল বটে। তবে শেষমেশ কিছু খটকা থেকেই যাচ্ছে।

প্রথমত, এই নিয়ম জারি হওয়ার পর কেউ তা মানছে কি মানছে না, তা স্থির করবে কারা? ধরা যাক, অন্ধকার হলে কেউ উঠে দাঁড়ালেন না। তিনি কি তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন? যদি করে থাকেন তবে তার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এবং তাঁকে চিহ্নিত করবেই বা কে?

দ্বিতীয়ত, যদি কেউ শারীরিকভাবে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি কী করবেন? সেক্ষেত্রে কী ছাড় থাকছে তাঁর জন্য। এ বিষয়টিও পরিষ্কার নয়।

তৃতীয়ত, ধরা যাক কেউ উঠে দাঁড়ালেন না। বাকিরা তা নিয়ে প্রতিবাদ জানালেন। ঝগড়া ঝামেলায় কোনও একটি শো বাতিলও হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হল মালিকের বিপুল ক্ষতির পরিমাণ বহন করবে কে?

চতুর্থত, জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হওয়ার সময় একটি শান্ত-সমাহিত পরিবেশ থাকে। কিন্তু সিনেমা হলে প্রায়শই সিনেমা শুরু হওয়ার মধ্যেও লোকের আনাগোনা চলতে থাকে। ওই ৫২ সেকেন্ডেও কি তা জারি থাকবে? নাকি, ওই সময়টা ছাড় দিয়ে তবে হলে মানুষ ঢুকবেন?

পঞ্চমত, যিনি কোনও বি-গ্রেড সিনেমা দেখতে ঢুকেছেন, তাঁকে জাতীয় সংগীত শুনিয়ে আখেরে কি কোনও লাভ হবে?

ষষ্ঠত, শুধু সিনেমা হল কেন, অন্য পাবলিক প্লেসগুলোতেও তো বাজানো যেতে পারে, উদ্দেশ্য যখন দেশাত্মবোধের জাগরণ। তাহলে শুধু সিনেমা হলকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে কেন?

সুপ্রিম নির্দেশে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়। ধরে নেওয়া হচ্ছে, জাতীয় সংগীতে কোনও ভারতবাসীরই আপত্তি নেই। কেউ উঠে দাঁড়াতেও আপত্তি করবেন না। তবে সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে শিশুপাঠ্যের মতো জাতীয়তাবোধকে ইনজেক্ট করার নির্দেশ দিয়েছে, তাতে আপত্তি অনেকেরই। বলা হচ্ছে, আজকাল মানুষ অনেক কিছুই পড়ে, কিন্তু জাতীয়তাবাদমূলক কোনও কিছু পড়েন না। (“These days, people read things that have nothing to do with nationalism but don’t study material related to nationalism” : Bench headed by justice Dipak Misra.) এখান থেকেই মূলগত কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। সেটাও কি আইন করে ঠিক করা যায়? দেশে যদি এমন আইন থাকে যে, জাতীয়তাবোধের ইতিহাস থেকে প্রতিদিন দু’পাতা করে পড়তে হবে, তাহলেই কি দেশাত্মবোধের যথেষ্ঠ অনুশীলন হবে? তা কি নিশ্চিত করবে যে, প্রতিটি মানুষ দেশ নিয়ে ভাবিত? আরও গূঢ় প্রশ্ন উঠে আসে, দেশ আসলে কী? কাঠামো, সংবিধান নাকি তার বাইরেও অন্য কিছু। সময় সময় এই দ্বন্দ্ব বারবার উঠে এসেছে। স্বাধীনতার আগেও দেশের এই ধারণা নিয়ে বিবাদ তো কম হয়নি। সন্দীপের দেশ না নিখিলেশের দেশ- কোনটা আসলে দেশ, সে প্রশ্ন তো আজও প্রাসঙ্গিক।

জাতীয় সংগীতে তাই আপত্তি নেই। কিন্তু দেশের এই ধারণাটি বোধহয় স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এই যে সুপ্রিম নির্দেশ নিয়ে এত মানুষ রাগারাগি করছেন  এ তো কাম্য ছিল না। দেশ তো রাগ নয়, অনুরাগেরও বটে। আমার দেশ, সকল দেশের সেরা এ ভাবতে তো সকলেরই ভাল লাগে। কিন্তু আমরা কি এটাও ভাবব না যে, জানি তা তোর ধনরতন আছে কি না রানির মতন, শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে। এই অনুরাগটি থাকলে আর নিয়মের কী দরকার! এত নিয়ম, এত বাঁধন। এত খটকা সরিয়ে, এই অনুরাগের পরিসরটি কি আমরা তৈরি করতে পারি না? তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

The post জাতীয় সংগীতে আপত্তি নেই, তবে… appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement