সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: নারদ মামলায় কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chaterjee) সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরই নিজাম প্যালেসে ছুটে গিয়েছিলেন স্ত্রী রত্নাদেবী। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও, কঠিন সময়ে সবচেয়ে আগে শোভনবাবুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী। সোমবার রাতে জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে পৌঁছে যান তাঁর বিশেষ বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শোভন চট্টোপাধ্যায়-সহ ৪ জনের জামিন মামলা নিয়ে যখন হাই কোর্টে সওয়াল-জবাব তুঙ্গে, সেসময় রত্নাদেবীর এই ছুটে যাওয়া, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন মোড় নিল। বুধবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে জেলবন্দি চিকিৎসাধীন শোভনবাবু আইনজীবী মারফত চিঠি দিয়ে জানালেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া পরিবারের কোনও সদস্য – রত্নাদেবী, তাঁর পুত্র বা কন্যা, কেউ যেন কেবিনে না যান।
সোমবার রাতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Biaskahi Banerjee) পাশাপাশি প্রেসিডেন্সি জেলের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল শোভন-পুত্র ঋষিকেও। মাঝরাতে তিনি এসএসকেএমে ভরতি হওয়ার পর এরপর মঙ্গল, বুধবার শোভন-জায়া রত্নাদেবী হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপরই শোভনবাবুর তরফে আইনজীবী মারফত বার্তা পাঠানো হয়, তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন কাউকে কেবিনে ঢুকতে না দেওয়া হয়। আইনজীবীর চিঠিতে লেখা, আলিপুর আদালতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রত্নার ডিভোর্সের মামলা চলছে। হাসপাতালে রত্না ও তাঁর সহযোগীরা গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন। যার জেরে শোভনবাবুর টেনশন আরও বাড়তে পারে, তিনি আরও অসুস্থ হতে পারেন। এ নিয়ে রত্নাদেবীর পালটা প্রতিক্রিয়া, “মামলা চললেও ডিভোর্স হয়নি এখনও, আমরা এখনও স্বামী-স্ত্রী। আমরাও পরিবারের লোক, যদি আমরা যেতে না পারি তবে বৈশাখী কেন শোভনের কেবিনে ঢুকবে? আমিও চিঠি দিয়ে ওর ঢোকা বন্ধ করার দাবি জানাব।”
[আরও পড়ুন: শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক, কেমন আছেন করোনা আক্রান্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?]
বুধবার নারদ মামলার (Narada case) শুনানি অসমাপ্ত ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয় ফের শুনানি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। শোভন চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিমরা জামিন পাবেন নাকি জেলবন্দি হয়েই তাঁদের আরও কয়েকদিন কাটাতে হবে, তার ফয়সালা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল সূত্রে তিন নেতার শারীরিক অবস্থার কথা জানা গিয়েছে। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইকো-কার্ডিওগ্রাফি করা হয়েছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের রক্তচাপ ও সুগারের মাত্রা ওঠানামা করছে। মদন মিত্র টানা অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছে। তাঁর বুকে হালকা ব্যথা রয়েছে। প্রেসিডেন্সি জেল হাসপাতালে থাকা ফিরহাদ হাকিমের জ্বর, পেট ব্যথা রয়েছে এখনও। শুনানি নিয়ে তিনি মানসিকভাবে চাপে রয়েছেন বলেও খবর। চার নেতার জামিন মামলায় সওয়াল করছেন রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি, আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা। আর সিবিআইয়ের তরফে রয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও তাঁর সহকারী ওয়াই জে দস্তুর। দু’পক্ষে দুঁদে আইনজীবীদের সওয়াল-জবাবে জমে উঠেছে নারদ মামলার শুনানি।