ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় : দিনের শেষে নবাবের আদরের ধন তুলোয় মুড়ে ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। তোয়াজের অভাব হয়নি। সকালে কর্মস্থলে পা রেখেই শুনলেন, বেমালুম ঠকেছেন! কথা হচ্ছে মুর্শিদাবাদি কোহিতুর আমের। শোনা যায় নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই আম নিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন ব্রহ্মদেশ (অধুনা মায়ানমার) থেকে। মুর্শিদাবাদেই সে আমের গাছ লাগিয়ে ফলন শুরু হয়। ওজনে তা বিক্রি হয় না। বিকোয় ‘পিস’ হিসাবে। এ বছর যার দাম উঠেছে একেকটি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। ওজনে ৬০০ গ্রাম। অভিযোগ, এমনই একটি আম কিনে ঠকেছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তা নিয়ে শুক্রবার বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিনে চূড়ান্ত আক্ষেপ ঝরে পড়ল মন্ত্রীর গলায়। উৎসবের আয়োজক সরকারেরই আরেক দফতর খাদ্য ও প্রক্রিয়াকরণ। বৃহস্পতিবার সেই আম উৎসবের সূচনায় গিয়েই কোহিতুর বেশ পছন্দ হয় কৃষিমন্ত্রীর। দেখেশুনে আঙুল রগড়ে পাঁচশো টাকার নোটের বদলে কার্পাস তুলোয় মোড়া একটা আম বাক্সে পুরে দিতে বলেন। শুক্রবার অধিবেশনে আসতেই কথা ওঠে। বিধানসভায় এমন অনেক কর্মী রয়েছেন যাঁরা মুর্শিদাবাদ বা মালদহের বাসিন্দা। তাঁদের কাছেই কথাটা শুনে মন দমে যায় মন্ত্রীর। যে আকার বা ওজনের আম মন্ত্রী কিনেছেন তা কম করে আড়াইশো গ্রাম। প্রতি কিলো হতে পারে বড়জোর ১৫০ টাকা। শোভনদেববাবুর কথায়, “কর্মীরা বললেন এই আমের এত দামই না। ঠকিয়ে দিয়েছে।” শুধু তিনিই নন, এই আম কিনেছেন রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসুও।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে গ্রেপ্তার করা হোক, সুদীপ্ত সেনকে ‘ব্ল্যাকমেলে’র অভিযোগে সরব তৃণমূল ]
মুর্শিদাবাদে কোহিতুর আমের অন্যতম বড় চাষি হাইতুর নবি খবর দিয়েছেন এবার কোহিতুরের ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরের মাত্র ৩০ শতাংশ। ১০০ বছরের পুরনো ক’টি গাছেই সামান্য ফলন। দাম তাই বাড়তির দিকে। অন্যান্য বছর ৬০০ গ্রামের আম ১৫০ টাকায় বিকোয়, এবার ২০০ টাকা। কখনওই ৫০০ টাকা নয়। কীভাবে সেই আম খেতে হয় সে উপায় জানতেও বাকি রাখেননি। এ আম নাকি ধাতব কোনও কিছু দিয়ে কাটা যাবে না! তাহলেই স্বাদ-গন্ধ সব শেষ। দরকার কাঠের ছুরি। তবে গ্রামের দিকে বাঁশের চ্যাঁচারি দিয়ে এটি কাটার রেওয়াজ আছে। কাঠের ছুরি না পেয়ে তাই পাড়ার পুরনো একটি বাঁশের গোলায় সেই চ্যাঁচারি বানাতে দেন মন্ত্রী। নবি বলছেন, “ছুরি দিয়ে কাটা যাবে না এমন নয়। তবে যখনই কাটা হবে তখনই পুরোটা খেয়ে ফেলতে হবে। নয়তো স্বাদ আর গন্ধ থাকবে না।”
এতসব শুনে অবশ্য মন্ত্রী সুব্রত সাহা আশ্বাসই দিয়েছেন। জানাচ্ছেন, ফলন কম হওয়ার জন্যই দাম এবার এত বেড়েছে। তথ্য বলছে, এবার মাত্র ৫০টি আম আনা হয়েছিল। দু’দিনে তার মধ্যে ৪০টির বেশি বিকিয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, “কম আম হয়েছে বলে শহরের মানুষকে কোহিতুর স্রেফ দেখাতেই আনা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই কিনেছেন। কেউই ঠকেননি। এবার দামটাই খুব বেশি।”