সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বেআইনি মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে এক আদিবাসী তরুণীকে মারধরের ঘটনায় শোরগোল বেধেছে পুরুলিয়ায়। অভিযোগ পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার ওসি তুফান দাঁ সহ এক সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশ গ্রামের ওই আদিবাসী তরুণীকে ব্যাপক মারধর করে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বাড়িতে চোলাই মদ তৈরি করা হত। যদিও ওই তরুণী জানিয়েছেন, তার বাবা বাড়িতে মাত্র ২ লিটার মদ রেখেছিলেন। সেই জন্য তাকে মারধর করে ঘরের মহিষ এবং ধান বিক্রির প্রায় ৪০ হাজার টাকা পুলিশ নিয়ে এসে মদ বাজেয়াপ্ত করে। গত ১৮ ই ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ রবিবার এই ঘটনায় আদিবাসী তরুণী জখম হয়ে পড়েন। তবে এই ঘটনা পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কানে আসতেই কোটশিলা থানার ওসিকে পুরুলিয়া বেলগুমা পুলিশ লাইনে ক্লোজ করিয়ে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সিংহ রায়কে। ওই পুলিশ কর্তার তদন্তের প্রেক্ষিতেই ওই থানার ওসিকে সাসপেন্ড করা হয়। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই তদন্তভারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে।
অন্যদিকে ওই সাসপেন্ড হওয়া ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। কোটশিলা থানার ওসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ একাধিক দ্রুত পদক্ষেপ করার পরেও এই ঘটনায় রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি। মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়ার সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ওই আদিবাসী তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে কোটশিলা থানায় নিয়ে গিয়ে ওই ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করান।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্ত ওসিকে সাসপেন্ড করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।” পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ওই কোটশিলা থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআই (সদর) দেবাশিস সরকারকে।
মঙ্গলবার রাতে ওই আদিবাসী তরুণী কোটশিলা থানায় অভিযোগ করে জানান, “বাড়িতে বাবা মাত্র ২ লিটার মদ রেখেছিলেন। সেই জন্য কোটশিলা থানার ওসি-সহ একাধিক পুলিশ কর্মী আমাকে ব্যাপক মারধর করে। আমি ভালো করে হাঁটতে পর্যন্ত পারছি না। বাড়িতে মহিষ ও ধান বিক্রি করার যে ৪০ হাজার টাকা ছিল সে টাকাও পুলিশ নিয়ে এসেছে।” বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো জানান, “আদিবাসী তরুণীকে মারধর করা হয়েছে। এই সরকারের নীতিই এমন। সন্দেশখালিতে যেমন ঘটনা ঘটছে এখানেও তাই। ওই তরুণী কোটশিলা থানায় অভিযোগ করেছেন। ওই তরুণীকে আমি দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করব। এই তরুণী যাতে সুবিচার পান তার জন্য যতদূর যেতে হবে আমরা যাব।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “পুলিশ অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিজেপি অযথা রাজনীতি করছে।”