ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে আর ফেরানো না হলে কাকে সেই পদে বসাবে হাইকমান্ড! সেই আলোচনায় প্রদেশ এখন জমজমাট।
সরাসরি প্রদেশের ১০ নেতার কাছে নতুন বিকল্প সভাপতির নাম চাওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ কংগ্রেস (Congress) রাজনীতির ইতিহাস বলছে সাবধানের মার নেই। আগবাড়িয়ে কেউই তাই কারও নামের প্রস্তাবই হোয়াটসঅ্যাপ পাঠাননি দলের এ রাজ্যের পর্যবেক্ষককে। কারণ কী? এক প্রদেশ নেতার কথায়, “কেউ কি সরাসরি নিজের নাম বলবে? তাতে তো বাকিদের সরিয়ে তিনিই যে সভাপতি হতে চান সেটা তো সরাসরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। নাম শুনেই হাইকমান্ড তা খারিজ করে দিলে তিনি তো প্রথমেই দৌড় থেকে বাদ হয়ে যাবেন। তখন?” সূত্রের খবর, এক্ষেত্রে একটা নিরাপদ রাস্তা নিয়েছেন প্রায় সকলেই। যে ১০ জনকে নিয়ে পর্যবেক্ষক বৈঠকে বসেছিলেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। ঠারেঠোরে সেটা বুঝিয়ে দিলেও মুখে স্রেফ দলের ভালো হয় এমন নানা ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। তাতে যিনি যা-ই পরামর্শ দিন, তিনি যে দলের প্রতি অনুগত, হাইকমান্ডের কাছে সেই বার্তা যাবে। আনুগত্যের পরীক্ষায় যিনি উতরোবেন তাঁর হাতেই প্রদেশের ‘চাবি’ দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন: NEET কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্ত, আজ পরীক্ষা গ্রেস মার্কস পাওয়া দেড় হাজার পরীক্ষার্থীর]
শনিবার প্রদেশ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনও হালচাল সামনে আসেনি। কিন্তু একপ্রকার ঠান্ডা স্রোত বইছে এই শান্ত লড়াইয়ে। শনিবার সকালেই দিল্লি রওনা হয়েছেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। শুক্রবার নিজেকে তিনি ‘অস্থায়ী’ বলে দাবি করেছেন। তবু নতুন কাউকে খুঁজে না নেওয়া পর্যন্ত তাঁকেই প্রদেশের ভার সামলাতে বলেছে হাইকমান্ড। তবে দলের একটি সূত্রের দাবি, অধীরকে আর সভাপতি পদে ফেরানো হবে না। সেই সিদ্ধান্ত এআইসিসি (AICC) একপ্রকার নিয়েই ফেলেছে। ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তা বুঝিয়ে দিতেই নতুন করে গোটা কমিটি আপাদমস্তক বদলে ফেলার কথা প্রস্তাব আকারে আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে এনেছে। আরেকটি পক্ষের বক্তব্য, এর মানেই এটাও তো নয় যে, অধীরবাবুকে আর দায়িত্ব দেওয়াই হবে না! এটা আঁচ করেই ১০ জন নেতৃত্বের প্রত্যেকেরই প্রায় বক্তব্য, কেউ কারও নাম প্রস্তাব করেননি, নিজের নামও বলেননি।
শুক্রবার সন্ধ্যার বৈঠকে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, শঙ্কর মালাকার, আবদুস সাত্তার, নেপাল মাহাতো, ইশা খান চৌধুরী, শুভঙ্কর সরকার, অসিত মিত্রর মতো নেতারা। সেখানে কমবেশি সকলেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। সঙ্গে প্রত্যেকেই দলের ভালোর জন্য যা যা করা দরকার সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। একাধিক নেতা পরে আবারও হোয়াটসঅ্যাপে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তখনও কারও নাম করেননি। এক নেতার কথায়, “হোয়াটসঅ্যাপ তো নিজের নম্বর থেকেই করেছি। নিজের কথা বলার জন্য সেটুকুই যথেষ্ট নয় কি?”
[আরও পড়ুন: ‘মমতার পালটা মুখই বাংলায় নেই’, আরএসএস মুখপত্রে বঙ্গ বিজেপির সমালোচনা]
তবে অধীর চৌধুরীকে যে হাইকমান্ড সরাবেই এমন কোনও স্পষ্ট মনোভাব বা মন্তব্য দিল্লির পর্যবেক্ষকরা সরাসরি করেননি। এক নেতার কথায়, “মনে রাখবেন অধীরবাবু দলের ওয়ার্কিং কমিটির (CWC) সদস্য। প্রদেশ সভাপতি তিনি আর না-ই থাকতে পারেন, অথবা কারও পছন্দের বা অপছন্দেরও হতে পারেন। তাতে তাঁর বা হাইকমান্ডের কিছু যায় আসে না। তাতেও অধীরবাবু কংগ্রেসের (Congress) মতো গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যই থাকবেন। এক্ষেত্রে সকলের মত শুনে হাইকমান্ড নিজের মতোই সিদ্ধান্ত নেবে।” অধীরকে যদি আর না ফেরানোর সিদ্ধান্তেই অনড় থাকে হাইকমান্ড সেক্ষেত্রে তাঁর বিকল্প কী? দলের একটা অংশের বক্তব্য, এই রাজ্যে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে পারে এমন একজন জননেতা দরকার। যিনি নিজে জিততে পারবেন, আবার দলের প্রার্থীদেরও জেতাবেন। কিন্তু সেই নেতার এই দলে যে অভাব রয়েছে তা হাইকমান্ড বোঝে। সেক্ষেত্রে সমষ্টিগত নেতৃত্বের কথা ভেবে দল চালাতে প্রাথমিকভাবে কার্যকরী কমিটি গড়ে দিতে পারে দলীয় নেতৃত্ব।