গৌতম ভট্টাচার্য: হেড না টেল? জয় না হার? ইয়েস না নো? ঠিক এমনই অনিশ্চয়তার পরিমাপ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে সম্ভাব্য যোগদান নিয়ে।
জল্পনার টানাপোড়েন সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন আরও চরমে পৌঁছল নয়াদিল্লির এক ক্রিকেট অনুষ্ঠানে সৌরভ-অমিত শাহ মুখোমুখি হওয়ায়। সৌরভ (Sourav Ganguly) নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন ফিরোজ শাহ কোটলায় প্রয়াত অরুণ জেটলির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে। জেটলি পুত্র রোহন এখন দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার (DDCA) প্রেসিডেন্ট। তাঁর সনির্বন্ধ ই-মেল এবং ফোনের অনুরোধ ফেলতে না পেরে সকালের ফ্লাইটে দিল্লি যান সৌরভ। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। সৌরভের সঙ্গে মঞ্চের ওপর তাঁর দেখাও হয়। আর তা নিয়ে আরও অন্তহীন কল্পনার স্রোত গোটা দেশ এবং বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বয়ে যায় দিনভর।
জেটলির মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠান ঘিরে গত ক’দিন বিতর্কে আলোড়িত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। কেন ক্রিকেটারকে উপেক্ষা করে প্রশাসকের মূর্তি এভাবে বসানো হবে তা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চলেছেন বিষেণ সিং বেদী। স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট গ্যালারি যে তাঁর নামাঙ্কিত করা হয়েছে প্রতিবাদে সেটাও তুলে নেওয়া হোক, গর্জে উঠেছেন সর্দার। কিন্তু কোটলা ঘিরে কোটলাতেই সেই বিতর্ক চাপা পড়ে যায় সৌরভ-অমিত শাহের এক মঞ্চে উপস্থিতিতে। রটে যায় যে আগামী ক’দিনের মধ্যেই সৌরভ বিজেপির (BJP) সদস্যপদ গ্রহণ করবেন। ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের হয়ে প্রচার করবেন গোটা বাংলায়। এমনও খবর ছড়ায় যে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন যাতে ঝাড়া হাত পা হয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারেন। রাজ্যপাল ধনকড়ের সঙ্গে রোববার রাজভবনে দেখা করতে যাওয়াটা নাকি সেই পদক্ষেপেরই গৌরচন্দ্রিকা ছিল।
[আরও পড়ুন: ডিডিসিএ’তে অরুণ জেটলির মূর্তি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সৌরভ, একমঞ্চে থাকবেন অমিত শাহও]
নয়াদিল্লিতে সৌরভের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টায় তাঁকে ধরা গেল না। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবির অবশ্য এখনও সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের খবর উড়িয়ে দিচ্ছে। এদের বক্তব্য হল, সৌরভ এখনও রাজনীতির মঞ্চের জন্য মানসিকভাবে স্বচ্ছন্দ নন। বয়েস এখনও পঞ্চাশ পেরোয়নি তাঁর। জীবনে এখনই এতবড় পদক্ষেপ নিতে চান না। প্লাস ৩১টা ব্রান্ডের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। সোমবারও তাঁর নতুন বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ‘কিনলে ওয়াটার’ আবির্ভূত হয়েছে মহানগরের বুকে। কোটি কোটি টাকা এই বিজ্ঞাপনগুলো থেকে আয় করেন তিনি। রাজনীতিতে নামলে সব ছেড়েছুড়ে দিতে হবে। তাছাড়া জনপ্রিয়তাতেও বিরাট বিভাজন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা। বিজেপিতে যাওয়ার জন্যে যে প্রচুর অনুরোধ এবং সময়বিশেষে চাপ রয়েছে তা উড়িয়ে দিচ্ছে না সৌরভ শিবির । কিন্তু এখনও তাদের এক বয়ান: সৌরভ তৈরি নন। কিছুদিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে তিনি যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর বোর্ড (BCCI) প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগও করেননি। ধনকড়ের কাছেও রাজনৈতিক সফরে যাননি। নেতাজির একশো পঁচিশ বছর পূর্তি কমিটির সদস্য হিসেবে চেয়ারম্যান ধনকড়ের ডাকে গিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: DDCA’তে জেটলির মূর্তি উন্মোচনে একই মঞ্চে সৌরভ ও অমিত শাহ, কী বললেন মহারাজ?]
তার বাইরের বৃহত্তর সমাজ আবার অবশ্য এগুলো উড়িয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ উলটো বলছে যে বিজেপিকে পাকা কথা দেওয়া হয়ে গিয়েছে সৌরভের। দিল্লিতে এদিন অমিত শাহের সঙ্গেও নাকি এয়ারপোর্ট ফেরার পথে আলাদা কথা হয়েছে তাঁর। ১২ জানুয়ারি নাগাদ সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। সৌরভ পুরো বাংলাজুড়ে প্রচারেও নামবেন কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। সৌরভঘনিষ্ঠ শিবির আবার হেসে বলছে, সৌরভ প্রচারে নামবেন অথচ ভোটে দাঁড়াবেন না এমন কথা যদি কেউ রটিয়ে থাকে, তারা সৌরভকে চেনে না। ওর কাছে আধাআধি কিছু নেই।
আর পাঁচটা দিন হলে ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্টকে ছেঁকে ধরা হত মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের বিজয় নিয়ে। ৩৬ অল আউট হয়ে যাওয়ার পর অজিঙ্কে রাহানের নেতৃত্বের ভারত যেভাবে ফিরে এল তা নিয়ে। আলোচনা হত টেস্টের আগে রাহানেকে দেওয়া সৌরভের ব্যাটিং টিপস নিয়ে। যা খুব উপকারী হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু রাজনীতির এই উত্তাল ঢেউতে ক্রিকেট ব্যাট-বল ভেসে গিয়েছে বহুদূর। জানুয়ারির ঠিক কবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন সেই জল্পনায়। সৌরভ নিজে যতক্ষণ না সরাসরি মুখ খুলছেন, এটা চলবে।