সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) আগেই ছিটকে গিয়েছে ঐতিহ্যশালী ডুরান্ড কাপ (Durand Cup) থেকে। বিদায় নিয়েছে মোহনবাগানও (MohunBagan)। কলকাতার মর্যাদা, সম্মান এখন মহামেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting Club) হাতে। কলকাতার দুই প্রধান যখন ব্যর্থ, তখন অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাচ্ছে সাদা-কালো শিবির। আর কিছুক্ষণ পরেই ডুরান্ডের কোয়ার্টার ফাইনালে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের সামনে কেরল ব্লাস্টার্স। ইতিমধ্যেই চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন রেড রোডের ধারের ক্লাবের তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু মহামেডান স্পোর্টিং কোচ আন্দ্রে চেরনিশভের দলে রয়েছেন গেলমেশিন মার্কাস জোসেফ (Marcus Joseph)। যে কোনও সময়ে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন তিনি। ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর এই ফুটবলার গৃহস্থের গর্ব, পড়শির ঈর্ষার কারণ। সেই মার্কাস ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রসঙ্গে বলছেন, ”এই ম্যাচ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা উচিত, এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আই লিগের আগে বড় একটা টুর্নামেন্ট এই ডরান্ড কাপ। আই লিগের প্রস্তুতি হিসেবে এই টুর্নামেন্টকে আমরা দেখছি। ডুরান্ড কাপ বহু পুরনো এক টুর্নামেন্ট, ঐতিহ্যশালী এক প্রতিযোগিতা। ফলে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটা আমার মোটেও হাল্কা ভাবে নিচ্ছি না। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিত হবে।”
সাদা-কালো ব্রিগেডে আসার আগে কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে ফুল ফুটিয়েছেন তিনি। তাঁর ওই বাঁ পা অনেক ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। মহামেডান স্পোর্টিংয়ে আসার পরেও তাঁকে জ্বলে উঠতে দেখেছেন সাদা-কালো শিবিরের সমর্থকরা। তাঁর পায়ে বল পড়লেই গ্যালারি থেকে সুর ওঠে ‘মার্কাস-মার্কাস’। মহামেডান অধিনায়ক বলছেন, ”কেরল ব্লাস্টার্স বেশ শক্তিশালী দল। বেশ ভাল খেলায়োড় রয়েছে ওদের দলে। কেরলে অবশ্য ভাল খেলোয়াড়ের অভাব নেই। আমি যখন গোকুলম কেরলে ছিলাম তখনই প্রচুর ভাল খেলোয়াড় দেখেছি। আর এবার তো কেরল ব্লাস্টার্স নক আউট পর্বেই পৌঁছে গিয়েছে। এখন থেকে সবক’টা দলই ফাইনালে যাওয়ার চেষ্টা করবে।”
[আরও পড়ুন: টিম ফিরলেই রিভিউ বৈঠকে বসবে বোর্ড, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফিরতে চলেছেন বুমরা]
দিন কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে মার্কাস জোসেফ বলেছিলেন, আইএসএলের ক্লাবগুলো ডুরান্ড কাপকে খুবই হাল্কাভাবে নিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে ত্রিনিদাদ-টোব্যাগোর গোলেমশিন বলছেন, ”এই পর্যায়ে পৌঁছে হাল্কা ভাবে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ ফুটবলাররা তো নির্দিষ্ট একটা টুর্নামেন্টের জন্যই নিজেদের তৈরি করে। কেরল ব্লাস্টার্স আইএসএলে খেলে। নক আউট পর্বের আগে আমাদের মনে করার কোনও কারণ নেই যে দ্বিতীয় সারির কোনও দলের বিরুদ্ধে আমরা মুখোমুখি হচ্ছে। এটাও জানি কেরল সুযোগ পেলেই আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে, গোল করবে, আমাদের হারানোর চেষ্টা করবে। ফলে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরাও সুযোগের সদ্ব্যবহারের অপেক্ষায় থাকবো। সুযোগ পেলেই ওদের গোল করবো।”
অল্প কয়েকদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ডুরান্ড কাপে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান অবশ্য তৈরি ছিল। কিন্তু গোল করার খেলোয়াড়ের অভাব সবুজ-মেরুনে। রাজস্থান ইউনাইটেড জিতে যাওয়ায় ছিটকে যেতে হয় ফেরান্দোর দলকে। সেখানে চেরনিশভের দল প্রথম থেকেই ছন্দে। মার্কাস জোসেফ বলছেন, ”ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানে ভাল প্লেয়ারের অভাব নেই। ফুটবল নির্দিষ্ট একটা দিনের খেলা। যে মনোভাব নিয়ে ম্যাচটাকে দেখা হচ্ছে, তার উপরেই নির্ভর করে ম্যাচের ফলাফল। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিটি ম্যাচই জেতার চেষ্টা করি। নির্দিষ্ট দিনের জন্য নিজেদের তৈরি করি। খেলার শেষ বাঁশির পরই জানা যায় কোন দল জিতেছে।”
গত ২৮ আগস্টের ডুরান্ড ডার্বি নিয়ে বাংলা ভাগ হয়ে গিয়েছিল। যুবভারতী দেখেছিল জনসমুদ্র। ইস্ট-মোহনের লড়াই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যা কালি খরচ হয়, সাদা-কালো শিবিরের খেলা নিয়ে কি একইরকম উন্মাদনা দেখা যায়? মার্কাস জোসেফ বিতর্কে ঢুকতে চান না। তিনি বলছেন, ”ইস্ট-মোহনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহু পুরনো। দুই দলের ম্যাচ ঘিরে রয়েছে ইতিহাস। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেরও ঐতিহ্য রয়েছে, দারুণ এক ইতিহাস রয়েছে। আমরা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে চাই। আমাদের বিপুল সমর্থক। প্রবল সমর্থনের জন্য যে কোনও দলই আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে ভয় পায়।”
গোল করার জন্য বিখ্যাত মার্কাস জোসেফ। তাঁর পায়ের দিকেই তাকিয়ে থাকে সবাই। ডুরান্ড কাপে এখনও পর্যন্ত মার্কাস একটি গোল করেছেন। তিনি গোলের গন্ধ মাখা পাস বাড়াচ্ছেন। তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন দলের তরুণ ফুটবলাররা। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেই কি মার্কাস আবার ধরা দেবেন চেনা অবতারে? মহামেডানের গোলমেশিন বলছেন, ”ফুটবলে গোলটাই শেষ কথা, এটা ঠিক। তবুও খেলায় আরও অনেক কিছু ফ্যাক্টর থাকে। আমাদের তরুণ ফুটবলাররা যখন নিজেদের নাম স্কোরশিটে দেখে, তখন ওদের ভালই লাগে। নিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি তিন পয়েন্ট চাই। পৌঁছতে চাই সেমিফাইনালে।” কথা শুনে মনে হল, বড় ম্যাচের জন্য নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন মার্কাস জোসেফ।