শিলাজিৎ সরকার: রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে (Rabindra Sarobar Stadium) তখন ম্যাচ চলছে। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে তিনি, তাঁর নজরে মাঠে থাকা ফুটবলারদের উপর। কোনও ফুটবলার ভুল করলেই কড়া ভাষায় সতর্ক করলেন তাঁকে। ঠিক যে ভূমিকায় কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে সাইডলাইনে থাকা কোচকে দেখা যায়। অথচ ম্যাচটা আদতে একটা অতি সাধারণ প্রদর্শনী ম্যাচ। তাও আবার খেলা হচ্ছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বাংলার স্কোয়াডে থাকা মহিলা ফুটবলারদের দু’দলে ভাগ করে। সেই ম্যাচেও কোনও ছাড় দিতে নারাজ বাংলার কোচ সুজাতা কর।
আসলে সুজাতা কর এমনই। এই যেমন তাঁর একরত্তি সন্তান আরোহী বর্তমানে হাসপাতালে ভরতি। তাও আবার যে সে রোগ নয়, অ্যাডিনো ভাইরাসে সংক্রামিত সুজাতা-কন্যা। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে আরোহীর নাক-মুখ থেকে রক্তপাতও হচ্ছে! তারপরও এদিন পুরো সময় মন দিয়ে ম্যাচ দেখলেন, ম্যাচ শেষে ফুটবলারদের বুঝিয়ে দিলেন তাঁদের ভুল-ভ্রান্তি। তারপর মাঠ থেকেই রওনা হলেন হাসপাতালের উদ্দেশে, মেয়ের কাছে।
অবশ্য শুধু আজকের দিনটাই নয়, গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতাল থেকে স্টেডিয়াম আর স্টেডিয়াম থেকে হাসপাতাল ছুটছেন সুজাতা। সপ্তাহখানেক ধরেই জ্বরে ভুগছে আরোহী। দু’দিন আগে হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাকে। পরীক্ষার পর ধরা পরে অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ! তবে মেয়ে অসুস্থ হওয়া বা হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর একদিনও অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকেননি সুজাতা। বরং প্রতিদিন নিয়ম করে দু’বেলা বাংলার মেয়েদের তৈরি করছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য।
[আরও পড়ুন: ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম ব্যবহার করে সুইস ব্যাংকে বিপুল অর্থের লেনদেন, নয়া অভিযোগে বিদ্ধ পুতিন ]
বুধবার বিকালে ম্যাচ শেষে বললেন, “২ মার্চ মেয়ের জ্বর আসে। দোলের আগেরদিন হাসপাতালে ভরতি করাই। পরীক্ষার পর জানতে পারি অ্যাডিনো ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে। এখনও ও হাসপাতালে রয়েছে।” কেমন আছে সাড়ে পাঁচ বছরের আরোহী? সুজাতা বলে গেলেন, “মাঝে মাঝেই রক্তবমি হচ্ছে। নাক দিয়েও রক্ত পড়ছে।” ইস্পাতকঠিন স্বরে তখন মেয়েকে নিয়ে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট সুজাতার।
এদিন ম্যাচ শেষে ফুটবলারদের দ্রুত ড্রেসিংরুমে যাওয়ার জন্য বলছিলেন সুজাতা। আসলে ততক্ষণে ‘কোচ’ সুজাতা থেকে ‘মা’ সুজাতা হয়ে গিয়েছেন তিনি। সেই মা, যার একরত্তি সন্তান ভরতি রয়েছে হাসপাতালে। সেই মা, যিনি যত দ্রত সম্ভব অসুস্থ সন্তানের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন। বাস্তবে সুজাতারাই তো- একস্ট্রাঅর্ডি‘নারী’!