রাহুল রায়, বসিরহাট: দু’বছরের করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার শুরু হল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। কালীপুজোর নিরঞ্জন উপলক্ষে রবিবার সুন্দরবনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলার এই লুপ্তপ্রায় খেলা। দিনভর সেই প্রতিযোগিতার উন্মাদনায় মেতে রইলেন গড়ান-গেঁওয়া-সুন্দরী গাছ আর নোনাজলে ঘেরা দ্বীপের মানুষজন।
একসময় প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল বাংলার জনপ্রিয় নৌকা বাইচ (Boat Racing) খেলা। সেইসময় ১০ বছর আগে সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দাদের উদ্যোগে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে এই প্রতিযোগিতা। রবিবার সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জে ১১ নম্বর সাণ্ডেলবিলে আমরা সবাই ক্লাবের উদ্যোগে বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গৌরেশ্বর নদীর ভেটকিয়া ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পর্যন্ত বাওয়া হয় নৌকা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চল সুন্দরবনের কুলতলি, গোসাবা, কুমিরমারি, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ ও হেমনগরের মাঝিমল্লাদের একাধিক নৌকা।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় কুলতলির অন্ধারিয়া গ্রামের নৌকা। দ্বিতীয় হয় কুলতলির ডোঙ্গাজোড়ার গ্রামের নৌকা। উদ্যোক্তাদের তরফে প্রথম স্থান অধিকারীকে কাপ-সহ নগদ ১৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী পায় ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকারীকে ১২ হাজার, ৯ হাজার ও ৬ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ব্যথিত হৃদয় নিয়েই কর্তব্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে, মোরবির ঘটনায় শোকপ্রকাশ মোদির]
কালীপ্রতিমার নিরঞ্জন উপলক্ষে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল, বিডিও, হিঙ্গলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অনিল সাউ-সহ বিশিষ্টরা। উদ্যোক্তাদের তরফে সাণ্ডেলবিলের গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়নাল আবেদীন গাজি জানান, “কালীপ্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে প্রতি বছরই বসে বিরাট মেলা। হিন্দু-মুসলমান বলে আলাদা করে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ থাকে না। সবাই মিলেমিশেই আমরা আনন্দ উপভোগ করি। একটা সম্প্রীতির বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে আমাদের এই উদ্যোগ। আগামী তে আরও সুন্দর হবে।”
সাধারণত সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে বিনোদনের কিছুই নেই, তাই নৌকা বাইচের পুনর্জন্মে খুশি সুন্দরবনবাসীও। প্রতিবছরই বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে ভিড় জমায় গৌরেশ্বর নদীর দুই পারের কয়েক হাজার মানুষ।