shono
Advertisement

‘অফসাইড প্রযুক্তি নিয়ে এত হইচই কীসের?’, বলছেন ফিফা রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায়

একটু কনুই বেরিয়ে থাকলে বা মাথাটা এগিয়ে রাখলে অফসাইড দেওয়া হচ্ছে।
Posted: 03:39 PM Nov 30, 2022Updated: 03:56 PM Nov 30, 2022

প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রত্যেকটা বিশ্বকাপই (Qatar World Cup 2022) আমাদের নতুন কিছু শেখায়। শুধু ফুটবলারদের জন্য নয়, আমাদের মত রেফারিদের জন্যও বিশ্বকাপ একটা শেখার মঞ্চ। আর এখন তো প্রতিটা বড় প্রতিযোগিতায় রেফারিং আরও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সুবিধা পাচ্ছেন রেফারিরাও।

Advertisement

আমার মতে, কাতার বিশ্বকাপের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল অফসাইড দেখার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার। এর আগে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির মধ্যেই অফসাইড কিনা তা দেখে নেওয়া হত। কিন্তু এবার সেটাই আরও বড় মাপে করা হচ্ছে। এজন্য নির্দিষ্টভাবে ১২টা ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বলেও শুনেছি চিপ লাগানো হয়েছে। তারপর রোবটের সাহায্যে দেখে নেওয়া হচ্ছে অফসাইড (offside) কিনা। যাকে বলা হচ্ছে সেমি অটোমেটিক অফসাইড টেকনোলজি। অনেকেই বলছেন, এভাবে প্রযুক্তির দাপাদাপিতে ফুটবল খেলার সৌন্দর্যটাই নষ্ট হচ্ছে। বারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে খেলাটা গতি হারাচ্ছে। খেলার শৈল্পিক দিকটা পিছনে চলে যাচ্ছে যন্ত্রের উপস্থিতির জেরে। রোবটের হাতে পরে ফুটবলটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন বহু পোস্ট দেখছি। অনেকেই আমাকে মেসেজ করেছে। 

[আরও পড়ুন: অঙ্কের কচকচানি নয়, মেসি ম্যাজিকে ভরসা রেখেই বুক বাঁধছেন অনুরাগীরা]

 

এই কথাগুলো মিথ্যা নয়। তবে আমি বলব, খেলার নিরপেক্ষতার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া পথ নেই। আইন মেনে খেলা হওয়া, যোগ্য দলের জয় নিশ্চিত করা যায় একমাত্র প্রযুক্তির ব্যবহারেই। একটু ক্রিকেটের উদাহরণ দিয়ে বলি। একটা সময় ক্রিকেটে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সুনীল গাভাসকরের আমলে এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে বল ব্যাটে লাগল না প্যাডে, তা বোঝার কোনও উপায়ই ছিল না। বা সচিন তেন্ডুলকরকে বহুবার ভুল আউট দিয়েছে স্টিভ বাকনার। ভাবুন তো, ওদের সময় যদি ডিআরএস নেওয়ার সুবিধা থাকত! তাহলে দুজনেই যে আরও কয়েকটা সেঞ্চুরি বেশি করত, বলাই বাহুল্য। কত ম্যাচের ফল এখন বদলে যাচ্ছে ডিআরএসের জন্য। যোগ্য দলের জেতার নিশ্চয়তা বাড়ছে। ফুটবলেও প্রযুক্তি সেই কাজটা করছে।
বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে, কারও একটু কনুই বের হয়ে রয়েছে বা কেউ মাথাটা একটু এগিয়ে রাখায় অফসাইড দেওয়া হচ্ছে। কেন এভাবে সামান্যর জন্যও অফসাইড দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছে। আরে ফুটবলের আইন তো সেটাই বলেছে। আইন অনুযায়ী, দেহের কোনও অংশ যদি লাইন পার হয়ে যায়, তবে সেটা অফসাইড। প্রযুক্তি যেটা করছে আইন মেনেই করছে। আগে সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটা সমসময় ধরা যেত না। এখন রোবটের চোখে সব ধরা পড়ে যাচ্ছে। আর তার ফলে যোগ্য দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। যেমন সৌদি আরব বনাম আর্জেন্টিনা (Saudi Arabia vs Argentina) ম্যাচে। যন্ত্র না থাকলে মেসিদের গোলগুলো বাতিল হত না। সেক্ষেত্রে এত ভাল ফুটবল খেলেও সৌদির ম্যাচ জেতা হত না।

আমার মনে হয়, সেভাবে পরিচিত না হওয়ায় সেমি অটোমেটিক অফসাইড টেকনোলজি নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে। শুনেছি আগে শুধু ক্লাব বিশ্বকাপে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতা আর কজন দেখে! বিশ্বকাপে অনেক বেশি দর্শক হয়। তাঁদের কাছে তো পুরোটাই নতুন, অপরিচিত একটা বিষয়। এর আগে ‘ভার’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেগুলো থেমে গিয়েছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে ওঠা প্রশ্নও একসময় থেমে যাবে। (লেখক ফিফা রেফারি)

 

[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের পাগলামি, ব্রাজিল গোল করলেই নগ্ন ছবি শেয়ার করছেন এই মডেল!]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement