shono
Advertisement

জিতে বর্ণময় ক্রিকেট পরিক্রমা শেষ করলেন ঝুলন, আবেগের জোয়ারে ভাসল লর্ডস

শেষ ম্যাচে ঝুলন নিলেন দুটি উইকেট।
Posted: 10:29 PM Sep 24, 2022Updated: 10:53 PM Sep 24, 2022

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১৬৯ (মান্ধানা- ৫০দীপ্তি ৬৮*, ক্রস ২৬-৪)
ইংল্যান্ড ১৫৩ (চার্লি ৪৭, রেণুকা ২৯-৪, ঝুলন ৩০-২)
ভারত ১৬ রানে জয়ী

Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর পাঁচজনের মতোই তিনি। কোনওদিন সেলিব্রিটি হতে চাননি। কিন্তু ২০ বছরের দীর্ঘ ক্রিকেট পরিক্রমা তাঁকে রীতিমতো কিংবদন্তি বানিয়ে দিয়েছে। এত পর্যন্ত পড়ার পরে সবাই বুঝতেই পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে। তিনি ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami)। ক্রিকেট মাঠের সবুজ গালচেতে যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু মণিমানিক্য। আজ ঝুলন গোস্বামীর ক্রিকেট পরিক্রমা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন ক্রিকেট অনুরাগীরা।  

সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার এই যাত্রাপথ মোটেও ফুলের পাঁপড়ি বিছানো ছিল না। চাকদহের বাড়ি থেকে কিট ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ভোর ৪.৪৫-এর লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ত মেয়েটা। চোখে ছিল স্বপ্ন। চাকদহ থেকে শিয়ালদহ হয়ে বিবেকানন্দ পার্ক। ঝুলন গোস্বামীর এই জার্নি এখন কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। 

[আরও পড়ুন: ‘ঝুলনদিকে টপকানো যাবে না’, ‘চাকদা এক্সপ্রেস’-এর অবসরের দিন আবেগে ভাসছেন বাংলাদেশের জাহানারা]

মেয়েটা আর পাঁচ জনের মতোই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে ভালবাসত। বৃষ্টিতে একা একা হাঁটতে সে আনন্দ পায়। সেই মেয়েই আজ লর্ডসের সবুজ ঘাসে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। এই লর্ডসেই তো একদিন স্বপ্নের অভিষেক হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর ব্যাট হয়ে উঠেছিল গাণ্ডীব। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের আবির্ভাব ঘোষণা করেছিলেন মহারাজ।

পাঁচ বছর আগের এক বিশ্বকাপ ফাইনালে এই লর্ডসেই (Lords) তো তিন-তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন ঝুলন। কিন্তু তার পরেও তিনি ট্র্যাজিক নায়িকা হিসেবেই থেকে যান। ইংল্যান্ড জিতে নিয়েছিল বিশ্বকাপ। ঝুলনের স্বপ্ন ভেঙেছিল। ঐতিহ্যের লর্ডসেই ঝুলন ক্রিকেটকে ছুটি দিলেন।   

জীবনের শেষ ম্যাচ চোখে জল এনেছিল অনেকেরই। স্যর ডন নাকি আবেগে বল দেখতেই পাচ্ছিলেন না। শেষ ম্যাচের পরে শচীন তেন্ডুলকরের সেই বিখ্যাত বিদায়ী সম্ভাষণ ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে এনে দিয়েছিল শ্রাবণের বারিধারা। মাস্টার ব্লাস্টারও সেদিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন। লর্ডসের শেষ ম্যাচে ঝুলনকে কাঁদতে দেখেনি ক্রিকেটবিশ্ব। বরং তাঁর অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউর হাউ হাউ করে কাঁদেন। অধিনায়ককে সান্ত্বনা দেন বাংলার মেয়েটা। তাঁকেই টস করতে পাঠিয়েছিলেন হরমনপ্রীত। ব্যাট করতে নামার সময়েও তো আবেগের বিস্ফোরণ দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। গোটা ইংল্যান্ড দল গার্ড অফ অনার দিল ঝুলনকে। ব্যাট তুলে তিনি ধন্যবাদ জানালেন তাঁদের। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা বোধহয় আজ অন্য এক চিত্রনাট্য লিখে রেখেছিলেন তাঁর জন্য। প্রথম বলেই ফিরে গেলেন তিনি। শেষ বেলায় কোথায় যেন মিলে গেলেন সৌরভ আর ঝুলন। শেষ ইনিংসে ক্রেজার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়েছিলেন সৌরভ। রান পাননি মহারাজ। ঝুলনও পারলেন না রান করতে। বল হাতে অবশ্য ঝুলন নেন দুটি উইকেট। অ্যালিস ক্যাপসি, কেট ক্রসের উইকেট নেন তিনি। যে বৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত ঝুলন, তাও দেখা গেল লর্ডসে। কেরিয়ারের শেষ বলটি করার পরে আরও একবার আবেগঘন লর্ডস। সতীর্থরা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন বাংলার মেয়েকে। দিনের শেষে তাঁর স্পেল ১০-৩-৩০-২।

একটা সময়ে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন দ্রুত শেষ হয়ে যাবে ভারতের (India Women Team) ইনিংস। শেফালি ভার্মা, ভাটিয়া, হরমনপ্রীত কউর, হরলীন দেউল এলেন আর গেলেন। কিন্তু স্মৃতি মান্ধানার ৫০ এবং দীপ্তি শর্মার অপরাজিত ৬৮ রান ভারতকে পৌঁছে দেয় ১৬৯ রানে। 

কিন্তু এই রান তাড়া করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ। ইংল্যান্ড থেমে গেল ১৫৩ রানে। ১৬ রানে ম্যাচ জিতল ভারত। সেই সঙ্গে সিরিজ ৩-০ জিতে নিল হরমনপ্রীতের দল।  ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট নেন রেণুকা সিং (২৯-৪)। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছিল ভারতের মেয়েরা। শেষ ম্যাচ জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ঝুলনের জন্য। মেয়েটা জিততে চেয়েছিল। সেই জয় দিয়েই ক্রিকেট সফর শেষ করলেন ঝুলন।

কিন্তু তাঁর শেষ ম্যাচেও যে বিতর্কের ছোঁয়া থাকল। দীপ্তি শর্মা মাঁকড়ীয় পদ্ধতিতে আউট করলেন চার্লি ডিনকে। যদিও মাঁকড়ীয় পদ্ধতি আইনি বৈধতা পেয়েছে। লর্ডসের মাঠেই সেই ঘটনা ঘটল। গোটা ইংল্যান্ড দল যেভাবে লর্ডসের বারান্দায় বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল এই ভাবে হার তাঁরা মেনে নিতে পারছে না। ওই টুকুই যা বিতর্কের ছোঁয়া। বাকি ম্যাচ জুড়ে শুধু ঝুলন আর ঝুলন।  

[আরও পড়ুন: ‘সতীর্থ যখন এভাবে কাঁদে…’, ফেডেরার-নাদালের কান্নায় আবেগে ভাসলেন বিরাট কোহলিও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement