সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবিবাসরীয় সকালে প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার সেলিম দুরানি। জামনগরে নিজের বাড়িতেই তিনি মারা গিয়েছেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৮৮। ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুখে। নিখুঁত বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে বছরের পর বছর দাপটে ভারতীয় দলে খেলে যাওয়া দুরানিকে বলা হত ‘প্রিন্স’। তাঁর ক্রিকেট কীর্তির সাক্ষী ইডেন গার্ডেনসও। ভারতের একাধিক ঐতিহাসিক জয়ের নায়কের প্রয়াণে ভারতীয় ক্রিকেটের একটি যুগের অবসান হল।
দুরানিই একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার, যাঁর জন্ম আফগানিস্তানে। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩- দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬১-৬২ সালে কলকাতা ও চেন্নাইয়ে (তখন মাদ্রাজ) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের বিখ্যাত জয়ের কারিগর ছিলেন তিনি। নিয়েছিলেন যথাক্রমে ৮ ও ১০ উইকেট। ব্যাট হাতেও ইডেনে করেছিলেন প্রয়োজনীয় ৪৩ রান।
একদশক পরে পোর্ট অফ স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়েরও অন্যতম কারিগর সেই দুরানিই। প্রসঙ্গত, ওই সিরিজে সোবার্সের নেতৃত্বাধীন অপ্রতিরোধ্য ক্যারিবিয়ান বাহিনীকে হারিয়ে ভারতের সিরিজ জয়ই প্রথম বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় ভারতের। সেই ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে দুরানির নাম। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্যারি সোবার্স ও ক্লাইভ লয়েডের উইকেট তুলেছিলেন তিনিই। দুরানির মৃত্যুতে টুইট করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ভারতীয় দলের প্রাক্তন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।
২৯টি টেস্ট খেলা দুরানির ব্যাটিং গড় ছিল ২৫-এর সামান্য বেশি। কিন্তু এই পরিসংখ্যান দেখে দুরানির দাপটকে বোঝা যাবে না। বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি ছক্কা মারার জন্যও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। কেরিয়ারের একমাত্র শতরান শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। কপিলে দেবের আগমনের আগে পর্যন্ত সময়ে দুরানিই যে শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার ছিলেন, এবিষয়ে অনেকেই একমত। বলা হত, তিনি ‘ডিমান্ড’ বুঝে ছক্কা মারেন। পুরনো ক্রিকেট রসিকদের স্মরণে রয়েছে ইডেনে ঘটা তেমনই এক ঘটনা। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জেরেক আন্ডারউডকে সপাটে ছক্কা মেরে গ্যালারিতে ফেলেছিলেন দুরানি। বল পড়েছিল ঠিক সেখানে, যেখান থেকে চিৎকার উঠছিল ”উই ওয়ান্ট সিক্সার।” ১৯৭৩ সালে তাঁর জন্য কানপুরে পোস্টার পড়েছিল ‘নো দুরানি নো টেস্ট’। এমনই ছিল তাঁর জনপ্রিয়তা। বল হাতেও তিন বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ম্যাচে ১০ উইকেট একবার। সব মিলিয়ে ৭৪ উইকেট। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও রয়ে গিয়েছে মাঠে তাঁর দাপটের মিথ। রবিবার সকালে ভারতীয় ক্রিকেট হারাল তার সেই ‘প্রিন্স’কে। শেষ হল একটি যুগের। রয়ে গেল কীর্তি।