সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর্জেন্টিনার (Argentina) জাতীয় পতাকার রং দেখা যায় এমিলিয়ানো মার্টিনেজের (Emiliano Martínez) চুলে। তাঁর ডাকনাম ডিবু। সেই মার্টিনেজ গতকাল বাঁচালেন লিওনেল মেসিকে। পেনাল্টি শুট আউটে নেদারল্যান্ডসের দুটো শট বাঁচান তিনি। আর্জেন্টিনার পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘বাজপাখি মার্টিনেজ’।
পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচ জিতে আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালের পাসপোর্ট জোগাড় করে ফেলল। মার্টিনেজ মনে করালেন সের্জিও গয়কোচিয়াকে (Sergio Goycochea)। মেসিদের ম্যাচ দেখতে লুসাইল স্টেডিয়ামে মাঠে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। গয়কোচিয়া সম্পর্কে জনশ্রুতি বলে, তাঁর নাকি খেলার মধ্যে টয়লেটে যাওয়ার ‘বাতিক’ ছিল।
[আরও পড়ুন: ১২৮টি দল নিয়ে আজ শুরু এমপি কাপ, উদ্বোধনে অভিষেকের সঙ্গে হানি সিংও]
ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউটের আগে তাঁর বাথরুমে যাওয়ার দরকার হয়েছিল। কারণ ম্যাচ চলাকালীন তিনি প্রচুর জল খেয়েছিলেন। গয়কোচিয়া পরে বলেছিলেন, টয়লেটে যাওয়ার সময় ছিল না। তাই তিনি মাঠেই প্রস্রাব করেছিলেন।
আর্জেন্টিনা পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচ জেতে। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার সামনে পড়ে আয়োজক দেশ ইতালি। সেই ম্যাচও গড়ায় পেনাল্টিতে। গয়কোচিয়া সংস্কারের দাস বনে যান। আগের ম্যাচে ঠিক যা করেছিলেন, সেটাই করেন ইতালির বিরুদ্ধেও। মাঠের মধ্যেই আবার প্রস্রাব করেন। পেনাল্টি শুট আউটে ম্যাচ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ব্রেহমের পেনাল্টি অবশ্য বাঁচাতে পারেননি। যে দিকে মেরেছিলেন ব্রেহমে, সেদিকেই লাফিয়েছিলেন গয়কোচিয়া। কিন্তু তাঁর নাগাল এড়িয়ে বল জড়িয়ে যায় জালে।
গতকাল কাতারে মার্টিনেজের পাখি হয়ে শরীর ছোঁড়া ফুটবলপ্রেমীদের নস্ট্যালজিক করে দিচ্ছে। তাঁরা মনে করছেন, মেসির পাশে রয়েছেন মার্টিনেজ। ঠিক যেমন মারাদোনার পাশে ছিলেন গয়কোচিয়া। ম্যাচ জেতার পরে মেসি এসে জড়িয়ে ধরেন তাঁর দলের গোলরক্ষককে।
প্রতিটি নায়কের উত্থানের পিছনে থাকে অনেক বঞ্চনা, অনেক ঘাম ঝরানোর গল্প। এমিলিয়ানো মার্টিনেজেরও তাই। ২০১১ সালে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। শিরোনাম হতে নিলেন দশ বছর। চিলির বিরুদ্ধে প্রি ওয়ার্ল্ড কাপে তাঁর অভিষেক ঘটে। এরপর কোপা আমেরিকায় মার্টিনেজের উপরেই আস্থা রাখেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে তিনটি শট বাঁচিয়ে ফাইনালে তোলেন আর্জেন্টিনাকে। কোপায় সেরা গোলকিপারের সম্মান পান মার্টিনেজ। সেই সময়ে তিনি বলেছিলেন, ”মেসির জন্য আমি মৃত্যুবরণও করতে পারি।”
ক্লাব ফুটবলেও তিনি কখনওই প্রথম গোলকিপার ছিলেন না। কোনও গোলকিপার চোট পেলে তবেই সুযোগ পেতেন মার্টিনেজ। গয়কোচিয়াও প্রথম পছন্দের গোলকিপার ছিলেন না ইতালি বিশ্বকাপে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পান দলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার নেরি পুম্পিদু। তার পর থেকে দলের একনম্বর গোলকিপার হন গয়কোচিয়া। পেনাল্টি শুট আউটে গোল বাঁচিয়ে গয়কোচিয়া বনে যান নায়ক। মার্টিনেজও তাই। দেশে তিনি এখন নায়ক। বিশ্বকাপ হাতে তুলতে মেসির দরকার মার্টিনেজকে।